আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গলি গলি মে চোর হ্যায়... মেরা প্রেমিক ছাত্রলীগ হ্যায়!

বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। গরিবের সুন্দরী বউ সবার ভাবী। গরিবের সুন্দরী বউয়ের পায়ের পাতা দেখা গেলে চায়ের দোকানে রসালো আলোচনার ঝড় ওঠে ‘অমুকের বউয়ের হাঁটু দেখা গেছে’। কিন্তু বড় লোকের বউ/মেয়েরা মিনিস্কার্ট, পিচ্চি মেয়েদের সাইজের জামা পরে ঘুরে বেড়ালে সেটা হয় ফ্যাশন, আধুনিকতা। গরিবের ছেলে দুষ্টামি করলে হয় বেয়াদবি, অসভ্যতা, ইতরামি।

বড়লোকের ছেলে করলে সেটা হয় বাঁদরামি। ক্ষুধার জ্বালায় গরিব কয়েকশ’ টাকা চুরি করলে কপালে জোটে গণধোলাই। আর বড়লোকে শত শত কোটি টাকা চুরি করলে বিশিষ্ট (?) মানুষদের নিয়ে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি! বুঝলি দোস্ত? -বুঝেছি। -সবার উচিত গরিবকে সামর্থ্য অনুযায়ী হেল্প করা। তাই না দোস্ত? -একদম তাই।

-তাহলে কথা না বাড়িয়ে মানিব্যাগ শূন্য গরিব এই আমাকে হাজার টাকা দে। -শালা তোর উচিত গুলিস্তানে চুলকানির মলম বিক্রি করা। পাবলিককে ভালোই চুনা লাগাতে পারবি। -এ জন্যই তো হাজার টাকা চেয়েছি। ওই টাকা দিয়ে মলম কিনে বিক্রি শুরু করে দেব! চিন্তা করিস না।

লাভ ফিফটি ফিফটি। এখন তালিবালি না করে দিয়ে ফেল! আর চায়ের বিলটাও দিয়ে দিস। এক হাজার টাকা বের করে দিতেই রাতুল চলে গেল! চুনা লাগিয়ে টাকা ধার নিয়ে গেলেও চিন্তিত হলাম না। কারণ, হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে ৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হলমার্ক কেলেঙ্কারির বাটপাড়দের স্টাইলে হাজার টাকার বদলে বিশ, ত্রিশ টাকা ফেরত দেয়ার বেহায়াপনা করবে না রাতুল। মাস শেষে টিউশনি থেকে টাকা পেলে সবার আগে আমারটা শোধ দেবে।

চায়ের বিল দিয়ে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে বসতে না বসতেই ভাবী হাজির। ঘরে বানানো ঝালমুড়ি দিয়ে বললেন, তুমি কি ফ্রি আছ? -ঝালমুড়ি ঘুষ দিয়ে কি কাজ করিয়ে নেয়ার ফন্দি এঁটেছো শুনি। -মিতু ওর বান্ধবীকে নিয়ে আসবে। ক্যাম্পাসে গিয়ে ওদের নিয়ে আসো। আর হ্যাঁ, আসার আগে মিতুর বান্ধবী একটু ল্যাবে যাবে কয়েকটা টেস্ট করাতে।

-সারাটা বিকাল মাটি হলো! -সুন্দরী বেয়াইন পেলে ছেলেরা আনন্দে গদগদ হয়ে যায়, আর তুমি! -কারণ, তোমার বোনটা আস্ত একটা দজ্জালনী। এখন টাকা দাও আমার কাছে টাকা নাই। -আমার কাছেও নাই। নো চিন্তা। তোমার ভাইয়ার পকেট আছে না? ভাবীর কথা শুনে মনটা খুশিতে ভরে গেল।

যতবারই ভাবী আমার জন্য ভাইয়ার পকেটে হাত চালিয়েছে হাজার তিনেকের কম তুলে আনেনি। ভাবী দুই হাজার টাকা এনে দিতেই বাসা থেকে বেরিয়ে এসে সিএনজিতে উঠলাম। মিতুদের ক্যাম্পাসের একটু আগে সিএনজি থেকে নেমেই পড়ে গেলাম দিনবদলের সোনার ছেলেদের দুই গ্রুপের কামড়া-কামড়ির মধ্যে। গরুর হাড্ডি দখল নিয়ে খেউ খেউ করে এলাকা মাথায় তোলা দুই পাড়ার কুকুরের মতো চাঁদাবাজির ভাগ নিয়ে সোনার ছেলেরা এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের হাড়গোড় গুঁড়া গুঁড়া করতে গিয়ে আশপাশ আতঙ্কিত করে তুলেছে। দুই গ্রুপের কামড়া-কামড়ির মধ্যে পড়ে ‘ক্রস কামড়া-কামড়ি’র শিকার হওয়া এড়াতে দৌড়ে পালাতে গিয়ে পায়ের জুতা ছিঁড়ে গেল! জুতা যাক তবুও হাড়গোড় অক্ষত থাক।

জুতা ফেলে দৌড়! হলের সামনে গিয়ে একটু জিরিয়ে কল দেয়ার কয়েক মিনিট পর মিতু ওর বান্ধবী রুমাকে নিয়ে হাজির। -কোথা থেকে কুস্তি খেলে আসলা? -খোঁচাবা না। এমনিতেই মেজাজ চরমে আছে। আরেকটু হলে গেছিলাম। -মেজাজ অন্যদিকে ঝাড়বা বলে দিলাম।

না হয় মাইরা ভূত বানায়া দেব। ঝগড়া এড়াতে চুপচাপ ওদের ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এলাম। সিএনজিতে উঠে বসতেই শুরু হলো ওদের হিন্দি সিরিয়ালের প্যাঁচাল। কোন সিরিয়ালের নায়িকার কয় বিয়ে হয়েছে,আগামীতে দেবরের সঙ্গে নাকি ভাসুরের সঙ্গে প্রেম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। রুমার বাংলা-হিন্দি মিশ্রণের ‘হাংলা’ ভাষা শুনে ইচ্ছা হলো কইষ্যা একটা উষ্টা দিয়ে সিএনজি থেকে ফেলে দিতে।

প্রেমিক ছাত্রলীগের বড়সড় নেতা, তাই মনের আশা মনেই থেকে গেল। সিএনজি থেকে যেখানে নামলাম, সেখান থেকে একটা গলি পার হলেই সামনের গলিতে ক্লিনিক। মিতুকে বললাম, তোমার হাতব্যাগ ভালো করে ধরো। এসব গলিতে চোর বেশি থাকে। হাতের ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেয়।

রিনা বেশ ভাব নিয়ে বলল, গলি গলি মে চোর হ্যায়! ত্যো ক্যায়া হ্যায়? মেরা প্রেমিক ছাত্রলীগ হ্যায়! কিসকা হিম্মত হ্যায় মেরা ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেয়? রুমার ছাত্রলীগ প্রেমিকের অহংকার শেষে কয়েক গজ সামনে যেতে না যেতেই একদম আচমকা দুই ছিনতাইকারী দুই পাশ থেকে হেঁটে এসে মিতু, রুমার হাতব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে তো দৌড়! অনেক চেষ্টা করেও দম ফাটানো হাসি আটকাতে পারলাম না। মিতু দাঁত-মুখ খিঁচে বলল, ছিনতাইকারী পালাচ্ছে আর তুমি হাসছ? -হাসি আটকাতে গেলে দম বন্ধ হয়ে হার্টঅ্যাটাক হতে পারে! বুঝলা? -আবার বিটলামি! জলদি দৌড়াও। না হলে ধরতে পারবে না। -ব্যাগে কি এমন সাত রাজার ধন আছে যে দৌড়াতে হবে? তোমার ব্যাগে কয়েকশ’ টাকার বেশি কখনও ছিল? -তুমি আসলেই একটা মিচকা শয়তান। রুমা আমাদের থামিয়ে দিয়ে বলল, তোরা ঝগড়া করছিস আর ছিনতাইকারী পালিয়ে গেল! এখন আমার কি হবে? -কেন তোমার ছাত্রলীগ প্রেমিক আছে না? ফোন করে বল! -আরে আমার হাতের ব্যাগটায় টেস্ট করানোর জন্য ছিল প্রাকৃতিক ডাক তথা ১ নম্বর ২ নম্বর! এসব উদ্ধার করতে প্রেমিককে বলব! আজিব! -দিনবদলের গুণ্ডা, মাস্তানরা যেভাবে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, চুরি, চামারি, বাটপারিতে আসক্ত, তাতে বাথরুমের টাংকিতে কয়েক হাজার টাকা পড়ে আছে দেখলে এরা কার আগে কে টাংকিতে নেমে টাকা ওঠাবে এ নিয়ে মারামারি শুরু করে দিবে! সেখানে তুমি তো নেতার প্রেমিকা! আমার কথা শুনে একদম চুপসে গেল রুমা।

পাঠক, পরে জানা গেছে যে দু’জন ছিনতাইকারীর একজনের কপালে জুটেছে টেস্ট করানোর জন্য রুমার প্রাকৃতিক ডাকের ১ নম্বর ২ নম্বর। সে ছিনতাইকারী ছিল দিনবদলের সোনার ছেলেদের একজন। খিক..খিক.. জানতে হলে পড়তে হবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।