আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈসা (আ) এর স্বাভাবিক মৃত্যু: ব্লগার সত্যজিগীষার ভুল সংশোধন

তুমি বল! তোমার প্রতিপালক প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত, অতএব কেউ চাইলে ঈমান আনতে পারে আবার কেউ চাইলে অস্বীকারও করতে পারে। (সূরা আল্-কাহাফ: ৩০) প্রথমে লেখককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তিনি কষ্ট করে একজন মৃত মানুষকে জীবিত করার নিষ্ফল, কিন্তু শান্তিপূর্ণ চেষ্টা করেছেন। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই তার এই চেষ্টার জন্য। তার উত্তরের প্রারম্ভে তিনি হাদিসের উদ্বৃতি দিয়েছেন. যদিও আমরা সর্ব ক্ষেত্রে কুরআন শরীফকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি তবুও তার কথার ছুতো ধরে তার পরিবেশিত একটি হাদিসের প্রসঙ্গ দিয়েই আরম্ভ করছি. তিনি যদি কষ্ট করে 'সোজা চুল বিশিষ্ট ঈসা ইবনে মরিয়মের হাদিস'টার সাথে বুখারী শরীফের আরেকটি হাদিস মিলিয়ে দেখতেন তাহলে দেখতে পেতেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ(স.)বুখারী শরীফে আরেকজন ঈসা(আ.)-এর বর্ণনা দিয়েছেন। তার চুল কোকড়ানো, গায়ের রং লাল এবং তিনি প্রশস্থ বুকের অধিকারী. আমার বন্ধু একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, একই ঈসার দুটি অবয়ব বর্ণনা করার কারণ কি? কারণ হলো, মহানবী(স.) দিব্যদৃষ্টিতে পৃথক দু'জন ঈসাকে দেখেছেন - একজন হলেন, আগের ঈসা যিনি ইয়াহুদী জাতিকে পথ দেখাতে এসেছিলেন, আর দ্বিতীয়জন হলেন আগমনকারী এই উম্মতের প্রতিশ্রুত ঈসা(আ.)।

তা না হলে একজনের দু'টো অবয়ব হয় কিভাবে? যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে আসছি. আর তা হলো, কুরআন শরিফ থেকে হজরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর প্রমাণ. প্রথমে সুরা আলে ইমরানের ৫৬ নম্বর আয়াত প্রসঙ্গ। যারা বিসমিল্লাহকে প্রতিটি সুরার এক নম্বর আয়াত গোনেন না তাদের হিসেবে এটি হবে সুরা আলে ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াত। আমার বিজ্ঞ বন্ধু 'তাওয়াফ্ফি' শব্দের একাধিক অর্থ আছে বলেই কোনো মতে দৌড়ে গিয়ে 'ঘুমের' আশ্রয় নিয়েছেন। হারুন ইয়াহয়া সাহবের বরাতে তিনি কথা বলেছেন, আরও বলেছেন তাফসীর ইবনে কাসীরের কথা। কিন্তু যেই তিনি কুরআন শরিফ থেকে উদাহরণ দিয়েছেন, তিনি সেখানেই ধরা পড়ে গেছেন।

পাঠকরা লক্ষ্য করুন, তিনি সুরা আনা'মের ৬০ নম্বর আয়াত তুলে ধরে অনুবাদ করছেন: "তিনি রাত্রি বেলায় তোমাদেরকে করায়ত্ত করে নেন" রাত্রে আল্লাহ তা'লা কী করায়ত্ত করেন? আমাদের দেহ? নাকি আমাদের রুহ? আমাদের দেহটা তো এখানেই পড়ে থাকে, আমরা এপাশ ওপাশ করি, শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গও কার্যকর থাকে, কী থাকে না? থাকে না আমাদের আয়ত্তে কেবল আমাদের রুহ বা আত্মা। অতএব ঘুমটাও এক প্রকার মৃত্যু তবে অস্থায়ী বা ক্ষণস্থায়ী. আলোচ্য আয়াতে 'তাওয়াফফি' শব্দটি 'লায়ল' বা রাত্রি শব্দের ইঙ্গিত বা 'কারিনা'সহ ব্যবহৃত হয়েছে. তাই এটি মৃত্যু অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু স্থায়ী মৃত্যু অর্থে হয় নি. এর প্রমাণ হলো মহানবী(স.)-এর স্পষ্ট হাদিস. তিনি ঘুমানোর সময় দোয়া করতেন: 'আল্লাহুম্মা বিস্মিকা আমুতু ওয়া আহইয়া' অর্থ: 'হে আল্লাহ, আমি তোমার নামে মরছি এবং তোমার নামেই জীবিত হব' অতএব তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থ রুহ কবজ বা 'মৃত্যুই' সাব্যস্ত হলো, কেবল আয়াতের 'লায়ল' শব্দ দ্বারা এটিকে অস্থায়ী বুঝানো হয়েছে। আমার বন্ধুবর এরপরে যে আয়াতটি উল্লেখ করেছেন সেটা আরও স্পষ্টভাবে 'তাওয়াফ্ফি' শব্দের সঠিক অর্থ নির্ধারণ করছে। তিনি উপরুক্ত আয়াত উল্লেখ করার পর সুরা যুমারের ৪২ নম্বর আয়াতটি বর্ণনা করেছেন. তাকে ধন্যবাদ দেই কেননা তিনি নিজেই এর অর্থ লিখে দিয়েছেন: 'আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুকালে আর যে মরে না তার নিদ্রাকালে.' ভাই সাহেবকে প্রশ্ন করি, দয়া করে বলুন না, প্রাণ হরণ করার অর্থ কি? আপনি নিজেই তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থ করেছেন: প্রাণ হরণ করা. আর এটাই আমাদের বক্তব্য. তাই তাওয়াফ্ফি শব্দের আপনার কৃত অনুবাদটিই ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট. কেননা সুরা আলে ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াতে ইসা (আ.) সম্বন্ধে ঠিক এই 'তাওয়াফ্ফি' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। ভাই সাহেব, চলুন না তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থটা আরো ভালোভাবে দেখে নেয়া যাক. মা'আরেফুল কুরআন তাফসীরের প্রণেতা মুফতি মুহাম্মদ শফি সাহেব তার তফসীরে সুরা আলে ইমরানের এই একই আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বীকার করে বলেছেন: 'এই আয়াতের মর্মার্থ এই যে, তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থ মৃত্যু.' [মা'আরেফুল কুরআন বাংলা, পৃষ্ঠা ১৭৭ সংযুক্ত ও দ্রষ্টব্য।

] মুফতি সাহেব এই শব্দটির অর্থ সম্মন্ধে এতটাই নিশ্চিত যার কারণে তিনি ইসা(আ.)-কে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে এর পরেই বলেছেন: 'কিন্তু আলোচ্য আয়াতে রাফেউকা শব্দটি প্রথমে এবং মুতাঅয়াফ্ফিকা শব্দটি পরে হবে.' এরপর তিনি ব্যাখ্যা করে তার মত করে বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন, প্রথমে ইসা (আ.) আকাশে গেছেন আবার পরে নামবেন এবং শেষে মারা যাবেন বিধায় কুরআনে এই শব্দ-বিচ্যুতি প্রয়োজন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন। কিন্তু তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়, কারণ তিনি তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থ সঠিকভাবে প্রকাশ করেছেন। অতএব ঈসা (আ)-কে রক্ষা করার আপনার চেষ্টা সফল হলো না। প্রিয় ভ্রাতা, বাংলার স্বনামধন্য এক আলেমের নাম হলো মাওলানা আকরাম খান।

তিনি আহমদী ছিলেন না আবার আহমদী মতবাদের সমর্থকও ছিলেন না। তিনি তার বিখ্যাত তাফসীরে অকপটে ইসা (আ.)-এর মৃত্যু স্বীকার করে নিয়েছেন। সুরা আলে ইমরানের এই ৫৫ নম্বর আয়াতের তাফসীরেই তিনি বিশদভাবে এই বিষয়ে আলোচনা করে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু প্রমাণ করেছেন। তার তাফসীরটি পড়ার মত। তিনিও তাওয়াফ্ফি শব্দের অর্থ মৃত্যু করেছেন।

আমি তার তাফসীরের কয়েকটি সংশ্লিষ্ট পৃষ্ঠা সংযুক্ত করে দিচ্ছি। আশা করি, আল্লাহর প্রিয় কিন্তু মৃত নবী ঈসাকে জীবিত ভাববার আগে কষ্ট করে এই আলেমের বক্তব্য ও ব্যাখ্যাটি পড়ে দেখবেন। আজ এতটুকুই। দোয়ার আবেদন করে বিদায় নিচ্ছি। ঈসাকে মরতে দিন, এতেই ইসলামের জীবন নিহিত ।

ওয়াসসালাম, দার্শনিক ব্লগের বিষয়বস্তুর সাথে অবশিষ্ট পাঠকদের সংযুক্ত করার জন্য নিচে দুটি পিডিএফ লিংক দিয়ে দিচ্ছি: ১. পবিত্র কোরআনের ৩০ টি আয়াতের আলোকে ঈসা (আ.) এর মৃত্যুর প্রমাণ - আহমদীয়া মুসলিম জামাত, বাংলাদেশ ২. ঈসা (আ) এর সম্পর্কে কোরআনের ৩০ টি আয়াতের আহমদিয়া / কাদীয়ানীদের ভুল ব্যাখ্যার জবাব - সত্যজিগীষা সংযুক্তি: ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৮ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।