আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রশ্নপত্র ফাঁস: পরীক্ষার আগের রাতে প্রার্থী গুম!

কাঁঠাল পাকুক আর নাই পাকুক আজ জ্যৈষ্ঠ মাস , গরমে করি খালি হাঁসফাঁস ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে জালিয়াতির আরেক ভয়াবহ মাধ্যম হচ্ছে ‘গুম’। নিয়োগ পরীক্ষাগুলোকে ক্ষেত্র হিসেবে ধরে গড়ে উঠেছে, ‘গুম সিন্ডিকেট’। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর গুম হওয়া নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থীকে গোপনস্থানে নিয়ে প্রশ্নের উত্তরপত্র মুখস্থ করায় এ সিন্ডিকেট। এরপর পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত ৩১ মে অনুষ্ঠিত অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষাতেও ছিল এই গুম জালিয়াতি। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয় চলে এ প্রক্রিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, জহুরুল হক হল, এফ রহমান হল, মহসীন হল, ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হল, নর্থ হলের বেশ কয়েকটি রুমে গুম হওয়া পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করানো হয়। আজিমপুর, বকশিবাজার ও চানখারপুলের বিভিন্ন মেসেও চলে এই অসৎ প্রক্রিয়া। পরীক্ষার সময় বিকেলে হওয়ায় ক্লায়েন্টদের ‘গুম যাত্রা’ হয় সেদিন সকালে।

চুক্তি ছিল, প্রশ্নপত্র মিললে ক্লায়েন্ট ২০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত দেবে সিন্ডিকেটকে। গুম জালিয়াতির কৌশল প্রশ্নপত্র ফাঁসের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে, গুম। উত্তর পাওয়ার চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দিয়ে পরীক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় গুম হন। এ প্রক্রিয়ায় তিনটি স্তরে ও তিনটি ভাগে সিন্ডিকেট কাজ করে। প্রথম পর্যায়ে সিন্ডিকেটের একটি অংশ প্রশ্ন ফাঁস করতে কাজ করে।

তারা বিজি (সরকারি) প্রেসসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। স্বল্পসাক্ষর কর্মচারীদের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের উত্তরে অনেক সময়ই ভুল থেকে যায়। অগ্রণী ব্যাংকের ফাঁস হওয়া প্রশ্নের উত্তরপত্র তৈরি করতে গিয়ে কর্মচারীরা ১৬টি প্রশ্নের উত্তর ভুল দেয়। সফলভাবে প্রশ্নফাঁস করতে পারলে সিন্ডিকেটের আরেকটি উইংয়ের পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ক্লায়েন্ট যোগাড় করা শুরু করে।

ক্লায়েন্টদের সঙ্গে পরীক্ষার পদমর্যাদার ওপর নির্ভর করে চুক্তির অর্থের পরিমাণ। পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কাজটিও তারাই করে থাকেন। তৃতীয় উইংয়ের কাজ ক্লায়েন্টদের জন্য নিরাপদ স্থান নির্ধারণ করা। সেখানে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করানো হয়। রাতে স্বেচ্ছায় গুমে আসা পরীক্ষার্থীদের কেউ যেন মোবাইল ফোনে বাইরে যোগাযোগ করতে না পারেন, প্রশ্নপত্র যাতে বাইরে পৌঁছাতে না পারেন, তা নিশ্চিত করে এই উইং।

পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলেও পৌঁছে দেন তারা। গুম হওয়ার আগেই পরীক্ষার্থীকে চুক্তির অর্থের ৫০ শতাংশ দিতে হয়। প্রশ্ন মিলে গেলে বাকি ৫০ ভাগ। ২০১২ সালের অক্টোবরে ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষার্থী গুম হওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে। পরীক্ষার আগের দিন ৬ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

ওই সন্ধ্যায়ই প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুমের বিষয়টি বাংলানিউজসহ অন্যান্য অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলে এক পর্যায়ে পরীক্ষা বাতিল করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। রাতেই আবার ফিরে আসেন পরীক্ষার্থীরা। গুমে যাওয়া শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট করে গুমের সময় ও অবস্থানের ঠিকানা না জানালেও, মালিবাগ, ফার্মগেট, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বকশিবাজারে এ সব ফ্ল্যাট ও মেসের অবস্থান বলে জানিয়েছেন। এদিকে, প্রশ্নফাঁসকারীর কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে ক্লায়েন্ট সংগ্রহের কাজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের ছাত্রনেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, ছাত্রলীগ নামধারী রনি, সূর্যসেন হলের বিপ্লব, ঢাকা কলেজের মোর্শেদ নামে কয়েকজন এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন কয়েকজন পরীক্ষার্থী।

উদ্বিগ্ন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা প্রশ্নপত্র ফাঁস ও গুমের মাধ্যমে পরীক্ষায় জালিয়াতির বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “যেকোনো রাষ্ট্র সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার আমলাতন্ত্রকে বিকশিত করে। কিন্তু, যখন শিক্ষার্থীরা দেখছেন যে, রেজাল্ট ভালো ও মেধা থাকা সত্ত্বেও তারা কাজটি করতে পারছেন না, তখন তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো বিষয়গুলোর দিকে ঝুঁকছেন। ফলে, তাদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার বোধ হারিয়ে যাচ্ছে। ” তিনি এজন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন।

এগুলো হলো- বিচার বা শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে এবং দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করতে হবে। Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.