আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এখন আর যেহেতু ব্লগারদের ঢালাওভাবে নাস্তিক বলা হয় না, সময়-সুযোগ বুঝে তাই ব্লগজগতে আমার প্রত্যাবর্তন...

বি চ্যাম্পিয়ন! মেঘে মেঘে অনেক বেলা পেরিয়েছে। বয়সও কম হয়নি। দেখতে দেখতেই হয়ত বুড়ো হয়ে যাব। লাঠি ভর দিয়ে, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে, চেহারায় জ্ঞানী জ্ঞানী ভাবটা ফুটিয়ে তোলে, নাতি-নাতনীর হাত ধরে হাঁটছি...এ দৃশ্য স্পষ্ট চোখে ভাসছে। একদম জ্বলজ্বল করছে।

বয়স আঠারো হতে আর কয়েক মাস বাকী। তাই বুড়োর তকমা পেতে বেশিদিন লাগার কথা না। এডাল্ট সাইটে ডুকতে এতদিন মনে অপরাধবোধ জাগত। এডাল্ট জিনিস দেখে কী মজা লমু, উল্টা মাথায় অপরাধবোধটাই সারাক্ষণ ঘুর ঘুর করত। এজন্য সেসবের দিকে মনোযোগও দিতে পারতাম না ঠিকমত।

অপরাধবোধের কাছে তৃপ্তিবোধ হেরে যেত। একদম ছোটবেলায় যখন এডাল্ট সাইটে প্রবেশের আগে সতর্কবাণী দেখতাম, 'দিস সাইট ইজ কন্টেইনিং উল্টাপাল্টা থিং, আর ইউ শিওর দ্যাট ইউ আর ওল্ডার দ্যান ১৮?', তখন ইয়েস বাটনে ক্লিক করার আগে দুবার ভাবতাম। হয়ত তারা বুঝে ফেলবে আমি আঠারর কম, এটা নিয়ে চিন্তিত থাকতাম খুব। আশাপাশেও ভাল করে তাকিয়ে দেখতাম কেউ দেখছে কিনা। কিংবা ওয়েবক্যাম চালু আছে কিনা সেটাও আরেকবার চেক না করা পর্যন্ত ইয়েস বাটনে ক্লিকাইতাম না।

পরিষ্কার-নির্মল একটা মন নিয়ে আর কয়েকদিন পর থেকে এডাল্ট সাইটে ডুকতে পারমু, ভাবতেই মনটা ফুরফুরে লাগছে। বয়স হয়েছে এটা বুঝানোর জন্যই এতগুলো ফাও প্যাঁচাল। এবার মূল প্রসঙ্গে আসি, প্রথম ব্লগের সাথে পরিচয় ২০১০ সালের মাঝামাঝি ক্লাস টেনে পড়ার সময়। প্রযুক্তি বিষয়ক নানান পোস্ট পড়ার জন্য আর আমার প্রিয় রম্য লেখকদের পোস্টে একবার চোখ বুলানোর জন্যই তখন ব্লগে মর্নিংওয়াকটা সেরে নিতাম। এরপর আস্তে আস্তে জগিং, রানিং ও লাফালাফি।

২০১১ সালে ব্যক্তিগত ল্যাপটপ পেয়ে একাউন্টও খুলে ফেললাম। প্রথম ব্লগ একাউন্ট খুলেছি প্রথম আলো ব্লগে। ভেবেছিলাম ঘুণে ধরা সমাজকে পরিবর্তন করে দিব লেখালেখির মাধ্যমে প্লাস একটু সাহিত্যচর্চাও করে নিজেকে ঝালাই করে নিব। নিজের অসামান্য প্রতিভাকে সবার সামনে মেলে ধরব। কী-বোর্ডেরও একটু ব্যায়াম হবে।

আঙুল গুলোও সচল থাকবে, তাই মন্দ হবে না। কিন্তু কোথায় কী? আমার আগে থেকে আরও অনেকে লেগে আছে সমাজকে পরিবর্তন করে দেওয়ার আশায়। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। আমি আর আমার কী-বোর্ডে আগুন জ্বালানোর সাহস পেলাম না। প্রথম আলো ব্লগে সাহিত্য চর্চায় মনোযোগ দিলাম।

কী বিষয়ে লিখেছি তা ধরতে পারতাম লেখা পোস্ট করার পর, পাঠকের মন্তব্য পড়ে। তারপর বিভাগ চেঞ্জ করতাম। কিন্তু আমার লেখালেখির প্রিয় বিষয় সমকালীন অর্থনীতি, ইরাক-মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তি, যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে আমাদের করণীয়...প্রভৃতি নিয়ে না লিখতে পারার একটা অতৃপ্তি রয়েই গেল। পাঠক এসব লেখার দিকে ফিরেই তাকাত না। ভাবখানা এমন যেন এগুলা কোন ইম্পর্টেন্ট টপিক না।

যাকগে সেসব দুঃখের কাহিনী। এরপর শুরু করলাম রম্য লেখালেখি। যেই রাজনীতিবিদের উপর চরম ক্ষোভ তাকেই বানাতাম আমার রম্যের বলির পাঁঠা। কোন রাজনীতিবিদকেই চোখে দেখতে পারি না, তাই মোটামোটি সবাই পড়েছে আমার কী-বোর্ডের কবলে। ইন্টারে ভর্তি হলাম, অনিয়মিত হয়ে পড়লাম লেখাপড়ায়।

তা-ও ব্লগিংএর ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনাটা ঠিকই চালিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতাম। একসাথে এত কাজ, যেমন চলার কথা তেমনই চলছিল। ব্লগিংটারও তাই যাচ্ছেতাই অবস্থা। এবার একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই। দুবছর আগের কথা।

ব্লগে তখন নিয়মিত আস্তিকতা-নাস্তিকতা, ছাগু-খাগু নিয়ে ক্যাঁচাল বাধত। ওরে বাবা! একেকজনের কী ধারলো যুক্তি আর কী সব অশ্লীল গালাগালি! আমি তখন বাচ্চা পোলা। সদ্য এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি। এসবের মধ্যে আমি নাই। কিন্তু বাচ্চা হলে কী হবে? বয়সটা ছিল ঝামেলার।

নিরাপদ দূরত্বে থেকে তাই মজা লইতাম আমি। মাঝে মধ্যে ক্যাঁচালকে উস্কে দিবার লোভও সামলাইতে পারতাম না। কিন্তু আজ অনেকদিন হলো ব্লগে কোন পোস্ট দেই না। 'পরিতোষ পাল' নিকে লিখতাম প্রথম আলো ব্লগে, আর সামুতে আরেকটা ছদ্ম নামে। প্রথম আলো ব্লগে সার্ভারজনিত সমস্যায় আমার অনেকগুলো পোস্ট হারিয়ে যাওয়ায় আর পড়াশোনার চাপে এখন আর ব্লগে নিয়মিত নেই বলে এতদিন মনে করত সবাই।

কিন্তু কয়েকদিন আগে একজনকে জানিয়ে দিলাম ব্লগে অনিয়মিত হবার মূল কারণ আর ফেসবুকে থিতু হবার কারণ। যাকে জানালাম তার সাথে আমার মেসেজের কথাবার্তা— −তোমাকে তো অনেকদিন থেকে ব্লগে পোস্ট দিতে দেখিনা, কেন? আগে যেই ফেসবুককে ঘৃণা করতে এখন সেখানেই দেখি রেগুলার? −যতদিন পর্যন্ত ফেসবুকারদেরও ‘নাস্তিক’ বলা না হবে ততদিন পর্যন্ত এখানেই আছি। আমি এমনিতেই ভীতু একটা পোলা। বুঝি কম, আর যা-ও বুঝি ভান করি কিচ্ছু না বুঝার। কিন্তু এ কী অপবাদ! আমরা নাকি 'নাস্তিক'।

শব্দটা নতুন শুনলাম। মানে কী তা বুঝলাম না। একজন বলল, নাস্তিক মানে খুনির চেয়েও শতগুণ অপরাধী। তার বাঁচার কোন উপায় নেই। বিচারের মাধ্যমে তার মৃত্যু হয় না।

তার মৃত্যু বৈধ। ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম এ কথা শুনে। নতুন তকমায় ভূষিত হয়ে যেখানে ভেবেছিলাম একটু ভাব নিমু, আর সেখানে...। তবে আমি কিন্তু থেমে থাকিনি, নিজেকে আস্তিক প্রমাণের জন্য নিজের ত্রাহি ত্রাহি দশা করে ছেড়েছি। কিন্তু ভাগ্য মন্দ।

তাই শেষে উপায় না পেয়ে ব্লগই ছেড়ে দিয়েছি। গেলাম ফেসবুকে। সেটাকেই মাইক্রো ব্লগ বানানোর চেষ্টায় অন্যদের সাথে যোগ দিলাম। তল্পিতল্পা গুছিয়েই রেখেছিলাম। আবার না কখন ফেসবুক থেকেও পালাতে হয়।

কিন্তু যার আর কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। আমার সাথে উনি ছিলেন। তাই তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় নি ফেবুতে। ভালয় ভালয় থেকেছি অ্যান্ড থাকছি। তবে চারপাশের পরিস্থিতি এখন একটু শান্ত হয়েছে বোধহয়।

এখন আর ব্লগারদের তেমন ঢালাওভাবে নাস্তিক বলতে শুনি না। মনে হলো সুযোগটা কাজে লাগানো উচিত। তাই আর দেরি না করে ব্লগিং জগতে পদার্পণ করলাম আবার। প্রত্যাবর্তনটা করছি সামু দিয়ে...তবে আমি কিন্তু সদা সচেতন। বিপদ বলে কয়ে আসে না।

তাই ব্লগিং শুরুর আগে সবার দোয়া চাচ্ছি, যেন আবার নতুন কোন তকমা নিয়ে ফিরে যেতে না হয়। এক 'নাস্তিক' তকমার ধকল সামলাতেই যেখানে ত্রাহি ত্রাহি দশা, সেখানে নতুন তকমা পেলে...আল্লাহ মালুম! ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, কী-বোর্ডে হাত আটকে যাচ্ছে! ওকে, হ্যাপি ব্লগিং ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।