'আমি ক্লাস ফোরে ফাইভে থাকতেই রবীন্দ্রনাথের সব বই ঘাটা শেষ। গীতাঞ্জলি
হাতে নিয়ে ঘুরতাম' কান যেন বিশ্বাস করতে চায় না কথাটা। এক সন্ধ্যায়
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেক কথাই বলছিলেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সভাপতি
শামসুজ্জাহান নূর। তাদের শৈশবের সময়টা ছিল পড়া, লেখা, গান ও গল্পের।
উচ্ছল আনন্দ, হাসি ও খেলার।
তিনি বলেন, আব্বার সাথে আমাদের বাসায আসতেন
নজরুল। আমি কবির প্লেটে ভাত বেড়ে দিতাম। কবি মাথায় হাত দিয়ে আদর করতেন। '
ওহ কি ভাগ্য 'নুরু পাগলার' স্পর্শ পেয়েছে এ বুড়ি মহিলা! আমার প্রচণ্ড
হিংসা হয়। সে সময়টা বুঝি এমনই ছিল।
পুরো বাংলা অঞ্চল ছিল 'জ্ঞানীদের'
বাসা ।
'ঐ দেখা যায় তালগাছ' খ্যাত কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের মেয়ে হওয়ার
সুবাদে অনেক কিছুরই সাক্ষী তিনি। নজারুল ছিল তার বাবার বন্ধু। সেই সুবাদে
এখনও টিকে থাকা তাদের পুরনো ঘরে লেগে আছে নজরুলের স্পর্শ। হয়তো পানের
পিকের হারিয়ে যাওয়া দাগও।
নুরুকে নিয়ে বরাবরই আমার উত্তেজনা বেশি। তবে তাকে এখনও পড়া হযে উঠেনি সেভাবে।
বছর দুয়েক আগের কথা, লেখক-কবি কন্যা শামসুজ্জাহান নূরের বাসায় নিয়মিত
যেতাম আমি। তিনি পড়ার জন্য তাগাদা দিতেন। বলতেন, 'পড়ো পড়ো কাজে লাগবে।
একটা সময় আসবে চাইলেও পড়তে পারবে না। আরে পোলা পড়াশোনা কর'
কিন্তু পড়লেতো শিক্ষিত হয়ে যাব। এই ভয় থেকে বই নিয়ে বসা হয় না তেমন। পড়াও
হয় না সেভাবে। কোন কিছু না জানলেও মাঝে মধ্যে লেখি।
ব্যাপারটা এমন আর কি
-ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সরদার!
এখন ও রবীকে কিঞ্চিত পরিমানও শেষ করিনি, মোজতবা, ফরুরখ, বঙ্কিম,
কায়কোবাদ, মীর, জীবনানন্দ, সুকান্ত, বুদ্ধদেব পড়াই হয়নি। আমাদের আল
মাহমুদ, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দুও অনেকটা অজানা!
অনেক দিন ধরে আপার বাসয় যাওয়া হয় না। রাগ বা কর্মব্যস্ততা দুটোই হতে পারে
কারণ। চাকরিসূত্রে নিয়মিত সুপ্রিম কের্টে যাই এখন। হুমায়ূন স্যারের লাশ
সর্ব স্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যেদিন রাখা হলো শহীদ মিনারে।
সেদিন বুরবুল ললিতকলা একাডেমীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন তিনি। কার্জন
হলের বিপরীতে হঠাৎ দেখা।
হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে গাল দুটি ধরলেন। নানা খোঁজ-খবর নিলেন। বিদায় নেওয়ার
সময় বললেন, 'নজরুলকে নিয়ে লেখা বইটি পড়েছি কি না'।
পড়িনি বেল চলে আসি।
হাঁটতে হাঁটতে বইটা দ্রুত শেষ করে ফেলার শপথ নেই। এর একটু পরই ডুবে যাই
নিজের কর্মব্যস্ততায়। প্রচণ্ড কাজের চাপ আমাকে আমার শপথ থেকে বহুদূর নিযে
যায়। আমি ভুলে যাই আমার প্রতিজ্ঞার কথা।
সময় চলে চায় আর পড়া হয়ে উঠে না।
প্রায় দু'বছর আগে নজরুলকে নিয়ে কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীনের লেখা
'যুগস্রষ্টা নজরুল' বইটা (ফটোকপি করে) পড়ার জন্য আমাকে দিয়েছিলেন তিনি।
পড়ার পর বইটার ওপর একটা রিভিউ করার চেষ্টা করবো বলেছিলাম তাকে। দুই বছরেও
পড়তে পারিনি নজুরলের পূর্ণাঙ্গ জীবনের খুঁটিনাটি নিয়ে অসাধারণ এ বইটি।
ঐ যে পড়েলে শিক্ষিত হয়ে যেতে পারি এই ভায়।
সে ভয় থেকে আর পড়া হয়ে উঠে না।
পাদটিকা- এ বইটি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। নজরুলের ওপর অনেক
গুরুত্বপূর্ণ বই রয়েছে। যেগুলো বাজারে নেই। কোন সুহৃদ এসব বই নতুন করে
প্রকাশরে উদ্যোগ নিতে পারেন।
এতে আমাদের বাংলা সাহিত্য ও এ জনপদের ইতিহাস
দুটোই শক্তিশালি হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।