হেফাজত ইসলামের ‘মোড়কে’ জামায়াত-শিবির কর্মীরাই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে হামলা-সংঘাতে জড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
Published : 05 May 2013, 10:17 AM
রোববার হেফাজতের কর্মসূচির মধ্যেই গুলিস্তান ও পল্টনে আওয়ামী লীগ ও সিপিবি কার্যালয়ের সামনে হামলার পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “হেফাজতে ইসলামের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যারা বিশৃঙ্খলা করছে তারা তাদের কর্মী নয়।
“হেফাজত ইসলামের মোড়কে জামায়াত-শিবির কর্মীরাই এটা করেছে।”
মন্ত্রী যখন কথা বলছিলেন, তখন সচিবালয়ের চারপাশে টিয়ারশেল ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁঝ পাওয়া যাচ্ছিল সচিবালয়ের ভেতর থেকেও।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করে মন্ত্রী বলেন, “এসব কাজ অনভিপ্রেত, হেফাজতে ইসলাম বলেছিল তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। কিন্তু তারা প্রতিশ্রতি রক্ষা করতে পারেনি।”
প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের কাজ মেনে নেয়া হবে না, যেখানে প্রয়োজন সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
হেফাজতকে শুরুতে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলেও পরে কেন দেয়া হলো জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী তাদের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার কথা বললেও তারা হিংসাত্মক কাজ করছে।”
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আইন-শঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘ধৈর্যেরর সঙ্গে’ কাজ করছে।পুরো বিষয়টি ‘পর্যবেক্ষণ’ করা হচ্ছে। ‘ধৈর্যের বাধ ভেঙ’ গেলে পুলিশ কঠোর হতে বাধ্য হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইল মন্ত্রী বলেন, “আমরা তৈরি আছি।”
রোববার দুপুরে হেফাজত কর্মীরা যখন বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে মতিঝিলের সমাবেশে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন, তখনই পল্টনে পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ।
দফায় দফায় সংঘর্ষে হেফাজতকর্মীরা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যালয় মুক্তি ভবনরে নিচে থাকা পুরানো বইয়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবনের সামনের কাচও ভাংচুর করে তারা।
এর কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালায়ের সামনে ১০ থেকে ১৫টি হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় এবং শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় গুলিতে নিহত হন একজন, আহত হন অর্ধশতাধিক।
এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী বা যৌথ বাহিনী নামানোর চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে কোনো কথা আমি বলিনি, সব ঘটনা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।”
এ পিরিস্থিতিতে জনসাধারণের নিরাপত্তায় কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “যেখানে যা প্রয়োজন সেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
সমাবেশের পরও যদি হেফাজত কর্মীরা মতিঝিলের অবস্থান না ছাড়ে তাহলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “আমরা বিষয়টি প্রত্যাক্ষ করার জন্য অপেক্ষা করছি।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, শনিবারের বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পরই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টির জন্য খালেদা জিয়াই দায়ী।
প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে শনিবার মতিঝিলে এক সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, “আলেম-উলামাদের অবরোধ ও আমাদের সমাবেশ কর্মসূচি বানচাল করে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ফিরিয়ে নিতেই আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এই সংলাপ নাটক করছেন।”
নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা সময়ও বেঁধে দেন বিরোধীদলীয় নেতা।