somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপালি পানি বিশেষজ্ঞের নিবন্ধে তথ্য : ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি ১১ লাখ বিলিয়ন টাকা : কৃষি মত্স্য শিল্প জ্বালানি নৌ-চলাচল ও সেচের ওপর ভয়াবহ প্রভাব

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১,১০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ ( ১১ হাজার ট্রিলিয়ন অথবা ১১ লাখ বিলিয়ন টাকা) টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছেন নেপালের একজন পানি বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের পানি চুরির অভিযোগে ভারত অভিযুক্ত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
নেপালের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক নিবন্ধে পানি বিশেষজ্ঞ ড. শাস্ত্র দত্ত পন্থ লিখেছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পানির লেভেল দিন দিন কমছে। গঙ্গা, মহানন্দা, গড়াল ও মধুমতি নদীর পানির স্তর ২ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের ৬৮০০ কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে। কৃষির ক্ষতি হয়েছে অপূরণীয়। ফারাক্কা বাঁধের আগে বাংলাদেশ যে ধরনের পানি পেত এখনও সেই ধরনের পানি পেলে শস্য উত্পাদন ৩৬
লাখ টন বৃদ্ধি পেত। অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞার মতে, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ক্ষতি হিসাব করলে দেখা যায়, ২০০৩ সাল পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ ১১ লাখ বিলিয়ন টাকা।
‘নেপাল স্টাডি : ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ হ্যাভ সিরিয়াস ওয়াটার ডিসপিউটস’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার ওই নিবন্ধটি প্রকাশ করে নেপালের টেলিগ্রাফ পত্রিকা।
নিবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সব আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মেঘনা বাঁধ নির্মাণের জন্য ভারত বাংলাদেশের ১১০০ একর জমি জবরদখল করে রেখেছে। টনকপুর বাঁধ নির্মাণের জন্য একইভাবে নেপালের জমিও জবরদখল করে নিয়েছে ভারত। বহু নদীর পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ রয়েছে। বাংলাদেশের পানি চুরির দায়ে অভিযুক্ত ভারত।
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞাকে উদ্ধৃত করে নিবন্ধে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন বাঁধের কারণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর সবচেয়ে নিম্নাঞ্চলের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেমন বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে, তেমনি শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যাচ্ছে।
ড. পন্থ লিখেছেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশে গঙ্গার পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফারাক্কা বাঁধের আগে গঙ্গার পানিপ্রবাহ ছিল ৬৯,৭০০ কিউসেক। কিন্তু বাঁধ নির্মাণের পর বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ কমে দাঁড়ায় ২৪,৫০০ কিউসেকে। ১৯৮৯-১৯৯২ সালের মধ্যে ফারাক্কা থেকে পানি ছাড় করা হয় ১৪,৭৬৫ কিউসেক থেকে ২২,২৫৯ কিউসেক। ১৯৯৩ সালে পানি ছাড় করা হয় মাত্র ১০ হাজার কিউসেক। অন্যদিকে বাঁধ নির্মাণের পর বাংলাদেশে পলির পরিমাণ ক্রমে বেড়েছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গে শুধু পলিমুক্ত পানি সরবরাহ করা হয় এবং পলি পাঠিয়ে দেয়া হয় বাংলাদেশে।
১৯৭৫ সালে (তত্কালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে) ২১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালুর অনুমতি দেয়া হলেও এরপর আর কখনও বন্ধ করেনি ভারত।
নিবন্ধে বলা হয়, ভারতের কোনো প্রতিবেশী দেশই তার আধিপত্যের নিচে বাস করতে চায় না। ভারতের সঙ্গে প্রবিবেশীদের বিরোধ শুধু কারিগরি কারণে নয়, এর রাজনৈতিক মাত্রাও রয়েছে। ভারত উজানের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের ওপর সে আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। কিন্তু ভারতকে মনে রাখতে হবে চীন, নেপাল ও ভুটানের ক্ষেত্রে সে আবার ভাটির দেশ।
ড. পন্থ লিখেছেন, ভারত কখনও বাংলাদেশের সমস্যা বুঝতে চায়নি। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তিও বাস্তবায়ন করেনি ভারত। চুক্তিতে থাকলেও ভারত কখনও ফারাক্কা বাঁধে কত পানি প্রবাহ হয় তা প্রকাশ করেনি। ফারাক্কা দিয়ে ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে ৪০ হাজার কিউসেক পানি সরবরাহ করা হয়। ভাগ্য ভালো যে, ফিডার ক্যানেল দিয়ে এর চেয়ে বেশি সরবরাহ করার ক্ষমতা নেই । কিন্তু বাংলাদেশ কত পানি পায় তা প্রকাশ করা হয় না।
নিবন্ধে বলা হয়, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের এসব সমস্যা জানা সত্ত্বেও ভারত চায় বাংলাদেশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করুক। কারণ নিজেকে সে রাজনৈতিকভাবে কর্তৃত্বপরায়ণ বলে মনে করে।
ড. পন্থ লিখেছেন, বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুত্ কিনতে চাইলেও ভারতের বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুত্ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও নেপাল একযোগে কাজ করুক তা চায় না ভারত। তার পরিবর্তে ভারত যে কোনো উপায়ে নেপালের সব পানিসম্পদ গ্রাস করছে। নেপালের পানিসম্পদ ও নেপালের সঙ্গে চীনের (তিব্বতের) কৌশলগত সীমান্ত থাকার কারণে ভারত নেপালের দলীয় রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। ভারতের বাধার কারণে প্রস্তাবিত সার্ক ট্রান্সমিশন লাইনও চালুর উদ্যোগ নেই। শুধু ভারত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেই ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার বিপুল পানিসম্পদকে যৌথভাবে কাজে লাগাতে পারে চীন, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ।
নিবন্ধে বলা হয়, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটান ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভারত সব সময় এ দেশ দুটোতে নিজেদের পছন্দের সরকার দেখতে চায়। নেপাল বাংলাদেশের একটি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে চাইলেও ভারত আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে এ দাবি নাকচ করে আসছে। তবে সেই ভারতই আবার তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা চাচ্ছে। ভারত ঘৃণ্য প্রচারণা চালাচ্ছে, বাংলাদেশ যদি ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয় তাহলে বাংলাদেশে ক্ষীর আর মধুর প্রবাহ বয়ে যাবে।
ড. পন্থ লিখেছেন, ভাটির দেশ বাংলাদেশে রয়েছে ২৫০টি বড় ও মাঝারি আকারের নদী। তবে এর মধ্যে ৫৭টি নদীর উত্স বাংলাদেশের বাইরে, তিনটি নদীর উত্স মিয়ানমার ও ৫৪টি নদীর উত্স ভারতের আসাম রাজ্য। বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদী, শাখা বা উপনদী। আর বড় নদীগুলো ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। উজানের দেশ হওয়ায় বর্তমানে ভারত আসাম রাজ্যের অনেক স্থানে বাঁধ দিয়েছে। ভারতের বাঁধের কারণে বাংলাদেশের কৃষি, মত্স্য, শিল্প, জ্বালানি, নৌ-চলাচল ও সেচের ওপর ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে
লিন্ক: Click This Link
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×