আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মতিঝিল থেকে ‘তাণ্ডবকারীদের’ উৎখাত করায় সরকারকে ধন্যবাদ দিলেও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা প্রজন্ম চত্বরের নেতারা।
Published : 06 May 2013, 10:03 AM
মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার জানান, পুলিশ নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সোমবার রাত ১২ টা পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দিচ্ছেন না তারা।
গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে ফেলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “মঞ্চ ভেঙে আন্দোলনের গতি রোধ করা যাবে না।”
রোববার মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ চলাকালে পল্টন, গুলিস্তান, বিজযনগর ও কাকরাইলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চলার পর গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক এ সংগঠনের কর্মীদের উৎখাত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এরপর ভোরে শাহবাগে এসে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সরিয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীদের মুলমঞ্চ, মিডিয়া সেলসহ সব ক্যাম্প ভেঙে দেয় পুলিশ।
এর কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীতে সব ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে গত তিন মাস ধরে শাহবাগের এই প্রজন্ম চত্বর থেকেই সারা দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল।
ভোরে মঞ্চ ভেঙে দেয়ার পর করণীয় নির্ধারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে বৈঠকে বসে জাগরণ মঞ্চ।
বৈঠকে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “অহিংস আন্দোলনের প্রথম থেকেই আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সভা ও সমাবেশ করার বিষয়ে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে না।”
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে কর্মসূচি ঠিক করা হবে বলে জানান ইমরান।
এর আগে হেফাজতকর্মীদের ‘সহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে’ সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “মানুষের জান-মালে অগ্নি সংযোগ করে গতকাল তারা কোন ইসলাম কায়েম করতে এসেছিল? তারা পবিত্র কোরআনে অগ্নিসংযোগ করেছে। দক্ষতার সাথে তাদের নিয়ন্ত্রণ করায় সরকারকে অভিনন্দন।”
এর পরপরই অভিমানের সুরে তিনি বলেন, “আমরা সারা রাত তাকিয়ে ছিলাম, প্রস্তুত হচ্ছিলাম ভোর হওয়ার পর কীভাবে সরকারকে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু সকালে উঠে দেখলাম, অভিনন্দন জানানোর মঞ্চটিই নেই।”
তিন মাসের অহিংস আন্দোলনের কথা সরকারকে মনে করিয়ে দিয়ে ইমরান বলেন, “তিন মাসের এ আন্দোলনে একটি ঢিল পর্যন্ত ছোড়া হয়নি। এই দীর্ঘ অহিংস আন্দোলনের পর আমাদের আচরণ কেমন হবে সেটা নিয়ে সরকারের আরো ভাবা উচিৎ ছিল। ”
ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির সভায় বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সমর্থন ও ‘আল্টিমেটামের’ কারণেই ‘জামায়াত-শিবিরের তৈরি হেফাজতে ইসলাম’ তাণ্ডব চালিয়েছে।
“তারা ইসলামের হেফাজতের নামে বইয়ের দোকান, পবিত্র কোরআন ও বায়তুল মোকাররমে আগুন লাগিয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করে রোববারের তাণ্ডবের ঘটনার তদন্ত করারও দাবি জানান শাহরিয়ার কবির।
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, “একটি মঞ্চ ভেঙে ফেললে কি হয়েছে, সারা দেশে আরো তিনশ মঞ্চ রয়েছে। আমাদের পুনরায় একত্রিত হতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
শাহবাগে আবারো গণজাগরণ মঞ্চ নির্মাণেরও আহবান জানান কামাল লোহানী।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ গণজাগরণ মঞ্চকে একটি আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসার প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, “আইনি প্ল্যাটফর্ম থাকলে তা ভেঙে ফেলা এত সহজ নয়।”
দেশের মাদ্রাসাগুলোর অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখার কথা বলেন তিনি।
পুলিশ সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করায় চারজন চারজন করে মিছিল করার প্রস্তাব দেন সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক। এছাড়া সন্ধ্যায় শাহবাগে মোমবাতি জ্বালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর প্রস্তাব দেন তিনি।
অন্যদের মধ্যে ভাস্কর ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনী, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী সভায় উপস্থিত ছিলেন।