somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অস্তিত্ব

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রধান শিক্ষক মিজান সাহেব বরাবরের মতোই মোটা হাতাওয়ালা চেয়ারতিতে বসে ঝিমাচ্ছিল । চেয়ারের পিছনে রাখা স্টিলের আলমারিতে মাথাটা ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠছেন মাঝে মাঝে । বিকট একটা আওয়াজে ঘুমটা একেবারেই ভেঙে গেল । না তেমন কিছু নয় । একটা ডাস্টার টেবিলে রাখার শব্দ, এই যা । সদ্য ক্লাশ শেষ করে রুমে ডুকলেন গনিতের শিক্ষক ইসহাক । মাস খানেক হল জয়েন করেছে এই স্কুলে । বাড়ি পাশের গ্রামেই ।
__ কি খবর ইসহাক, কেমন লাগছে, এ...... ?
ইসহাক কিছু না বলে মুচকি হেসে জবাব দেয় ।
__ হুমম...! বুঝলে ইসহাক, শরিরটা ইদানীং খুব একটা ভাল যাচ্ছে না । বয়স হয়ে গেছে তো ! বাচ্চা ছেলেমেয়েদের আমি আর সামাল দিতে পারি না । এক কাজ কর, টুঁয়ের ক্লাসটা তুমি নিয়ে নাও । আমি ফাইভেরটা নিচ্ছি ।
__ আলমারির উপর থেকে কয়েকটা চক আর টেবিলের উপর ফেলে রাখা ডাস্টারটি নিয়ে ক্লাশে চলে গেল ইসহাক ।
আস্তে আস্তে মিজান সাহেব ও ক্লাসের উদ্দ্যশ্যে বেড়িয়ে পরে ।
[ ক্লাশ নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মিজান সাহেব ]
__ এই সবাই বস...বস । আজ তোমাদের ক্লাশটা আমি নিব ।
__ রুল নাম্বার ১
__ প্রেজেন স্যার । ( শুভ, ক্লাশের ফার্স্ট বয় )
রুল নাম্বার ২......রুল নাম্বার ৩........রুল.................
[ স্কুলের মাঠে দেখা যাবে একজন মাঝ বয়সী লোক বাগান পরিচর্যার কাজ করছে, আর গুনগুন করে গান গাইছে “...পারে...লয়ে যাও আমায়......” । ]
রুল নাম্বার ২৯ ।
__ এই, সবাই আসছে ?
__ জি স্যার ।
__ ঠিক আছে । একটা বই দেখি ?
(একজন ছাত্র বই এগিয়ে দেয়)
__ পৃষ্ঠা ২৭ বাইর কর ।
__ শুভ পর কি লেখা আছে ?
(শুভ পড়া শুরু করল, মিজান সাহেব আবার ঝিমুচ্ছেন)
চেয়ারের হাতার পাশে হেলে পড়তে পড়তে জেগে উতলেন মিজান সাহেব । ততক্ষনে একজন ছাত্রও নেই ক্লাশে । বই খাতা ডাস্টার নিয়ে বেরুবার উদ্দ্যেশ্যে দরজায় দারালেন মিজান সাহেব । অবাক হয়ে দেখলেন, ছাত্ররা সবাই বাগানে কাজ করা লোকটিকে ভেড় দিয়ে বসে আছে । মনে হচ্ছে লোকটি ওদের কিছু একটা বলছেন ।
এগিয়ে গেলেন মিজান সাহেব । চার পাশটা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেন তিনি । না বিশেষ কিছু চোখে পড়ল না । এবার ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলেন টিক জটলাটার মাঝখানে । লোকটা বিশেষ পরিচিত মনে হচ্ছে । তবু ঠিক ধরা গেল না । যাই হোক কাছে গেলেন মিজান সাহেব । লোকটির কাঁধে হাত রাখলেন । বিশেষ ঠের পেল বলে মনে হল না । হাতটা সরিয়ে নিলেন মিজান সাহেব । সোজা হয়ে দাঁড়ালেন একবার । কেও তাঁর দিখে কোন মনোযোগই দিচ্ছে না । না এটা মেনে নেয়া যায় না । আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । আমাকে অবহেলা ? মনে মনে ভাবছেন মিজান সাহেব ।
রেগেমেগে ঘুরে দাঁড়াবেন মিজান সাহেব । অমনি তাঁর চুখের সামনে পড়ল একটি খাটিয়া (মৃত মানুষ বহন করার জন্য এক প্রকার চৌকি বিশেষ) ।
এতক্ষনে মুখ খুললেন মিজান সাহেব ।
___ এই কি হয়েছে এখানে ? এটা কার লাশ ?
[কোন জবাব দিল না কেও ।]
___ আরে কি, হয়েছে কি ? কেও কথা বলছে না কেন ?
না ! কেও কথাত বলছেই না, ফিরে ও তাকাচ্ছে না তাঁর দিকে । হটাত চোখে পড়ল ইসহাককে । ইসহাকের চোখে পানি । বারবার রুমাল দিয়ে চোখ মুছচে ইসহাক । হ্যা এদিখেই আসছে সে । তাকে জিজ্ঞ্যেস করেই সব জানা যাবে । হাত ওঠিয়ে ইসহাককে থামাতে চাইল মিজান সাহেব । কিন্তু ইসহাকও তাকে লক্ষ্য করল না বরং তাকে গায়ে গা ঘষে চলে গেল ইসহাক ।
হচ্ছে কি এসব ? কিছুই বুজতে পাড়ছেন না মিজান সাহেব ।
এবার জটলা থেকে বেড়িয়ে এসে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়ালেন । একটা পরিচিত মেয়েলী কণ্ঠে কান্নার আওয়াজ শোনতে পেলেন । আওয়াজটা কমন রুমের ভেতর থেকে আসছে । ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলেন মিজান সাহেব । তাঁর স্ত্রী মিনারা । কিন্তু ও কাঁদছে কেন ?কেও কি ? ভেতরটা নড়েচড়ে উঠল মিজান সাহেবের । একবার স্ত্রীর দিকে একবার লাশের দিকে তাকাচ্ছে মিজান সাহেব । কার লাশ ? কে ? কে ? ভাবছে মিজান সাহেব ।
[ততক্ষনে একটি অল্প বয়সী মেয়ে এসে হাওমাও করে লাশটিকে জরিয়ে ধরল । এতে লাশের উপরের চাদরটি সরে যায় । ]
___ একি, এ যে আমারই.........! তাহলে আমি.....কি....? না ।
___ না এইত আমি । আমিত বেঁচে আছি ।
[দৌরে গিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরে বললেন]
___ এই পাগলী আমি মারা যাই নি । এই দেখ আমি । দেখ দেখ ।
[তাঁর মেয়ে কোন সাড়া দইল না । দৌরে গেলেন স্ত্রীর কাছে]
___ মিনারা, তুমিত আমার কথা শুনবে । এই দেখ আমি ।
[মিনারা একই ভাবে আগের মত কান্না করতে থাকল]
মিজান সাহেব দিকভ্রান্ত হয়ে দৌরে স্কুলের মাঠে আসলেন । একে ধরছেন ওকে ধরছেন । কেও তাঁর কথা শুনল না । তাকে লক্ষ্যই করল না ।
চিৎকার শুরু করলেন মিজান সাহেব-------মাঠের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে দৌরাচ্ছেন ।
___ আমি মরে যাই নি..................। এই দেখ আমি বেঁচে আছি । আমি মরে যাই নি............।
___ ঠং ঠং ঠং ডং ডং ডং ডং ডং ...............।।
ছুটির ঘণ্টার আওয়াজে জেগে ওঠলেন মিজান সাহেব । এদিক ওদিক থাকিয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞ্যাত হয় মিজান সাহেব । এখনো তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাশে ।
[ঘণ্টার আওয়াজের সাথে সাথে ছুটাছুটি করে বেড়িয়ে যাবে স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী । ]
কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরু স্কুল শূন্য হয়ে যায় । তখনও মিজান সাহেব পঞ্চম শ্রেনীর ক্লাশে বসা । স্কুলের দপ্তরী সাবু পতাকা নামাচ্ছে । চারপাশে শুনশান নীরবতা ।
ধির পায়ে স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলেন । ভর দুপুরের স্তব্দ নীরবতা কাঠিয়ে এগিয়ে চলছেন মিজান সাহেব ।
উদ্দ্যেশ্য বেঁচে থাকা !!!!!!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×