somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঔষধের ফার্মেসী কি করে নেশার স্পট হয়ে গেলো? (১৮+)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যখন ছোট তখন পাড়া মহল্লায় দেখতাম হাতে গোনা কয়েকজন নাম করা মদখোর থাকতেন। পরিবার প্রতিবেশী তাদেরকে ঘৃনার চোখে দেখতেন এবং কেমন জানি একটা ভয় পেতেন। তাদের মাতলামীর কাহিনী মানুষের মুখে মুখে রটতো। “ছিঃ ছিঃ অমুকের ছেলে কতো খারাপ কিভাবে হলো?” এরকম প্রশ্ন মানুষের মনে জাগতো। এই মদখোরদের স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও সবজায়গায় ছড়াছড়ি হতো মদ খেয়ে মারা গেছে।

সিনেমার ভিলেনদের আর নায়কের বীরহের সময় মদ খাওয়ার দৃশ্য ছিলো স্বাভাবিক। তবে অমিতাভের “শেরাবী” ছবিটার কথা ভিন্ন। আমার দেখা একটি অন্যতম শ্রেষ্ট ছবি শেরাবী।

বাংলাদেশের প্রায় সব শহর অঞ্চলেই মেথর (হরিজন) সম্প্রদায় থাকতো। তারা বাংলা মদ খেতো। তাদেরকে সবাই এড়িয়ে চলতো।
তারপর সাধারণ মানুষ পরিচিত হয় ফেনসিডিল ও গাঁজাখোরদের সাথে। তখনও অনেক মানুষ ফেনসিডিল ও গাঁজা দেখেনি। গাঁজার গন্ধ শুনলেও হয়তো বুঝতে পারতো না এটা যে গাঁজার গন্ধ। আমাদের উঠতি বয়সে ফেনসিডিলের ব্যাপক প্রসার লাভ করে বিশেষ করে বাইক হাকানো, দল করা, টুকটাক টেন্ডার পাওয়া উঠতি যুবকদের মাঝে। আর গাঁজা ও ফেনসিডিলের প্রসারের দিক দিয়ে এক প্রকার প্রতিযোগীতা দেখা যায়। বেশ অল্প কিছু বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল ছড়িয়ে পরে। যা ছিলো উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে তা চলে আসে রিকশাওয়ালা, ফেরিওয়ালা থেকে দিন মজুরের মধ্যে।

(উল্লেখ্য: শুনেছি একটা সময় আমাদের পূর্বপুরুষগণ আফিমে আসক্ত ছিলেন। বাংলাদেশে আফিম নিষিদ্ধ হয় ১৯৮১ইং সালে।)
উচ্চবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত টিনেজার এবং সিনিয়রদের মাঝে বিয়ার বিশেষ করে স্কটিশ টাইগার, হ্যানিকেন, ফস্টার ও ভেরন্স পান করা একটি ফ্যাশনে পরিনত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এদের মধ্যে হুইস্কি, অফিসার্স চয়েজ, টিচার্স চয়েজ, ব্লাক লেবেল, রেড লেবেল, রাম, ভদকা, ব্যাড-সিক্সটি নাইনে, কেরু ইত্যাদি মদের ব্রান্ড প্রসার লাভ করে ফ্যাশন ও মজা হিসেবে।

যাই হোক, নেসাদ্রব্য চলে আসে হাতের নাগালে। ফেনসিডিল গাঁজার পাশাপাশি রেক্টিফাইড স্পৃীড, হিরোইন, ব্রাউন সুগার ও প্যাথেটিনে আসক্তদের সংখ্যাও বেড়ে চলে। দিন যায় আর নেসায় আসক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে নেসার দামও বাড়তে থাকে। বাংলাদেশের সকল শহর, বন্দর, বাজারে নেসার স্পট খুঁজে পাওয়া যেতো। প্রশাসন মাঝে মাঝে গরম আবার সব স্বাভাবিক।

এবার মূল প্রসংগে আসি, আমরা ছোটবেলায় অষুধের দোকান বলতে বুঝতাম যে দোকানের পিছনে একজন ডাক্তার থাকে। প্যারাপাইরল, ডিসপ্রিন, হিস্টাসিন, কর্ডলিভার, জন্মনিয়ন্ত্রনের পিল, সিভিট, ফেনারগন ও এন্টারসিড বড়রা কিনতেন প্রেসকৃপশন ছাড়া। এছাড়া তেমন অষুধের নামও জানতেন না সাধারণ মানুষ। আমার মনে পড়ছে সেই সময় সিডেক্সিন, ইউনকটিনের নাম শুনলেও মানুষের ঘুম পেয়ে যেতো। অনেকেই এই দুটি সাধারণ মানের ঘুমের বড়ির নাম জানতেন কিন্তু সরাসরি কয়জন দেখেছে তা বলা মুসকিল। কেউ প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে সিডেক্সিন, স্যাভলন খেয়েছে। অভিভাবক ভয় পেয়ে যেতেন। তার চেয়েও বেশী ভয় পেতেন যে খেয়েছে মানে “বনের বাঘে না মনের বাঘে খায় অবস্থা”।

এরপর ফেনসিডিলের নতুন সংস্করণ আসে ছোটমুখ্খা নামে। তার আগে থেকেই ডাইল বা ইঞ্চি নামে ফেনসিডিল পরিচিত। গাঁজার প্রসারের সাথে সাথে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নাম হতে থাকে যেমন সিদ্ধি, সাধু, ভেজিটেবল, দয়াল, তামাক ইত্যাদি।

ছাত্রজীবনে বারাক ওবামা গাঁজা খেতেন এটা তিনি বলেছিলেন তিন বছর আগে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবসে এবং এর থেকে সবাইকে বিরত থাকতে বলেছেন। এছাড়াও বিখ্যাত এ্যাথলেটর মাইকেল ফেলেপস, ব্রিটেনের যুবরাজের গাঁজা টানার ব্যাপার প্রমাণীত। তারা এজন্য তাদের ভুল স্বীকার করেছেন ও শুধরে গেছে। বাংলাদেশে এমন করে যদি কোনো নেতা যদি স্বীকার করতেন তাহলে নিন্দার ঝর বয়ে যেতো। কিন্তু বদ অভ্যাস মানুষই করে আবার ছেড়েও দেয় স্বীকার করতে দোষ কোথায়? গাঁজা নিয়ে একটি বিখ্যাত ওয়েবসাইট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এখন আবার ইয়াবা যাকে বাবা বলে ডাকা হয় এর ব্যবহারও প্রচুর।

এরই ফাঁকে কখন যেনো একদল ছেলেপান ডেক্সপোর্টেন (এসকে+এফ), ফেনারগন (প্রমথজেন হাইড্রোক্লোরাইড), ফেনারড্রিল, ব্রুনেক্স, ই-কফ, তুষকা নামক কাশের সিরাপে আসক্ত হতে শিখলেন। হিরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল, গাঁজা, মদের ভিরে ব্যাপারটা তখন পর্যন্ত তেমন আলোচনায় আসে নি।

হঠাৎ করে স্কয়ার নিয়ে এলো ট্রিক-সি নামক কাশের সীরাপ। দাম ৫০টাকা। বেড় হবার কিছুদিন পর এর নেসার চরম গুন নেসার পাগলদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো। অন্যান্য নেশার মানুষ হুর হুর করে ট্রিক-সির দিকে ঝুঁকে পড়লেন। স্কয়ার ট্রিক-সি সীরাপটির উৎপাদন ও বিপনণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অপসনিন নিয়ে আসে বেনসিডিল নামের কাঁশির সীরাপ এটিও ব্যান্ড হয়।

এরপর দেখা গেলো ব্যাঙের ছাতার মতো অষুধের দোকান গজিয়ে উঠছে। দেদারছে চলছে ডেস্কপোর্টেন, এনকফ, অফকফ, ফ্রিকফ, তুশকা, তশিবা, সুডুকফ, প্রুডেস্ক, এ-কফ সহ বিভিন্ন কোম্পানীর এন্টিটাসিভ কাঁশির সীরাপ।

এছাড়াও ফেনারগন, ফেনারড্রিল, ডাইড্রিল ইত্যাদি কাঁশের সীরাপও চলছে প্রচুর।

আমার প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে কতো মানুষের কাশি হয়?
একবারে একটি সীরাপ একজন প্রতিদিন করে খায় এমন নিয়মিত কাষ্টমার প্রতিটি ঔষধের দোকানেই পাওয়া যাবে। তাহলে এই পোডাক্টগুলোর কতগুলো প্রিসক্রিপশন হয় তা বিবেচনা করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কেনো বেঁধে দেওয়া হয় না? দেখা যায় একজন ড্রাগ ইনেসপেক্টর ৬-৭টি জেলার দ্বায়ীত্বে থাকেন এবং শোনা যায় তারা মাসিক বড় ধরনের ঘুষ পেয়ে থাকেন।
সমাজের এই করুন দশা কে দেখবে বা কে সমাধান দেবে? ঘরে ঘরে অশান্তি সৃষ্টি করার মূলে কারা দোকানদার নাকি অষুধ কোম্পানী নাকি সরকার?

এছাড়াও ইজিয়াম, সিডেক্সিন, ই-পাম, সিডিল, বোজিপাম, অপসোনীল, ট্রিপটিন, ক্লোব, কসিয়াম, মিডাজোলাম গ্রুপের ওষুধ, নকটিন, অটোসীল, ফ্রেস ও মুড-অনের সম অনেক অনেক ঔষধ চলছে নেশার উদ্দেশ্যে। এছাড়াও সীরাপ, জুস, বিভিন্ন পদের ট্যাবলেট মিশিয়ে এক প্রকার ঝাটকা খাওয়ার অভ্যেস তরুন প্রজন্মের মধ্যে দেখা যায়। এর প্রতিকার কি?

আমি কোনো ডাক্তারী বিশেষজ্ঞ না। আমাদের পরবর্তি জেনারেশনদের এমন অধঃপতন দেখে খুব দুঃখ লাগে। কি হবে এদের ভবিষৎ?

টিনেজারদের বলছি আপনারা এ পথে যদি পা বাড়িয়ে থাকেন ফিরে আসুন। আজ প্রতিদিন ১০০ বা ১০০০ টাকায় যে নেশা করছেন তা আপনার ও আপনার অনাগত প্রজন্মর ভবিষ্যত নষ্ট করে দেবে। মানুষের মতো মানুষ হন দেখবেন কোনো প্রকার মাদক ছাড়াই প্রতিদিন নিজে নিজে লাখ টাকা মূল্যের আনন্দ অনুভব করতে পারবেন।

আমার ও আমার সিনিয়র প্রজন্মদের এ ব্যাপারে আরও কিছু জানানোর থাকলে কিংবা আমার লেখায় কিছু বাদ পড়ে গেলে তুলে ধরার জন্য অনূরোধ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১:০২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×