somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কনডম এবং চিরপ্রস্থান

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক
মেরি স্টোপসের পথ ধরে হাঁটতে থাকে অবন্তি। জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেছে। শরীরটাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তলপেটের দিকে ব্যথা বেড়েই চলছে। অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছল। দায়িত্বরত ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখায় সে। ডাক্তারের কথা শুনে তার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ডাক্তার তাকে জিগ্যেস করে তার বিয়ে হয়েছে কবে? অবন্তি অপ্রস্তুত হয়ে তথমত খেয়ে যায়। ডাক্তার এসব কি জিগায়- তার বিয়ে কবে হয়েছে? যারপরানায় বিরক্ত হয়ে সে না সূচক উত্তর দেয়। এ উত্তর শুনে ডাক্তারের চক্ষু ছানাবড় হয়ে উঠে- এই মেয়ে এসব বলে কী... সে না দুই মাসের গর্ভবতী! ডাক্তার তাকে আনুসাঙ্গিক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দেয়।
দুই
রক্তিম কাঁপা কাঁপা গলায় ফার্মেসিতে গিয়ে কনডম কেনে। অনেক দূরের ফার্মেসিতে গিয়ে কেনে, যাতে তাকে চিনতে না পারে। সে ভাল ব্রান্ডের থেকেই কেনে- আবার না হয় ফুটো টুটো হয়ে যায়। অবন্তি ঠিক জায়গায় অপেক্ষা করছিল। রক্তিমও সময় সময় গিয়ে পৌছায়। তবে আজ অস্বাভাবিকভাবে চলছে সে। হার্ট বিট ক্রমেই বেড়ে চলছে। চট্টগ্রামের একটি মার্কেটের তৃতীয় তলার একটি সাইবার ক্যাফেতে ঢুকে তারা দুজন। হ্যাঁ, এ ক্যাফেগুলো এ ধরনের নির্জন আঁধার কর্মকাণ্ডের জন্য খুবই যুগোপযোগী। পুলিশের কোনও ভয় নেই, ভয় নেই ঠিকানা দেয়ারও, যেমনটি দিতে হয় আবাসিক হোটেলে। অতঃপর কামড়াকামড়ি শুরু হয়ে যায়। ক্রমেই নিম্নগামী হতে থাকে রক্তিম। তার হাত-পা কাঁপতে থাকে তখনো। জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে রাখতে চায় রক্তিম। যত বেশি পারা যায়। স্তনে হাত রেখে সে অসম্ভব পুলক অনুভব করে। বৃন্ত দুটো অমৃতের মতন চুষতে থাকে। ঢিলে হতে হতে অবশেষে খুলে যায় সুতা। শুরুতে একটু নড়াচড়া করতে চায়লেও উত্তেজনার চরম সীমায় পৌঁছলে অবন্তির দ্বার খুলে যায়। রক্তিম প্রথম বারের মতন কনডমের ব্যবহার করে। বেশীক্ষণ পারে না। রাগে কনডম ছুড়ে মারে ডাস্টবিনে।

তিন
রক্তিমকে কল দেয় অবন্তি। ‘জান রক্তিম, কী হয়েছে?’। হঠাত অবন্তির কণ্ঠে এমন উৎকণ্ঠা দ্যাখে ভয় পেয়ে যায় রক্তিম। কি হয়েছে জানতে চায়লে অবন্তি বলে, ‘আমি না তোমাকে বারণ করেছিলাম!’ ‘ভণিতা বাদ দিয়ে কি হয়েছে কয়ে ফেল’-রাগত স্বরে বলে উঠে রক্তিম। তৎক্ষণাৎ বলে না অবন্তি। রক্তিমকে অই ক্লিনিকের সামনে আসতে বলে রক্তিমকে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা বাদ দিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই সে চলে আসে। ঘটনা শোনার পর সে বিশ্বাসই করতে পারে না। ‘আমি না কনডম ইউস করেছিলাম, ভালো ব্রান্ডের! ফুটো হল কিভাবে?’ কোনও উত্তর দেয় না অবন্তি। কি উত্তরই-বা দিবে, সে তো কিছুই জানে না। হতে পারে অগ্রভাগ বায়ুপূর্ণ ছিল। হতে পারে উত্তেজনার চরম মুহূর্তে ফুটো হয়ে গেছে অজান্তে। দুজন কি করবে ভেবে পায় না। আবার ডাক্তারের কাছে যায় তারা। ডাক্তারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এবরশনের। ডাক্তার আরও কিছু টেস্ট দিয়ে পরের দিন দেখা করতে বলে। কিন্তু পরেরদিন ডাক্তার যখন বলে, ‘এবরশন করলে আপনাকে চিরতরে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হবে’। রক্তিমের দিকে তাকায় অবন্তি, আরেকবার ডাক্তারের দিকে। ডাক্তার পুনরায় বলে, ‘আপনার জরায়ুতে অনেক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাই কোনোমতে এবরশন করা যাবে না’। রাগত স্বর আর মলিন মুখ নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে প্রস্থান করে দুজন।

চার
অবন্তি তার পরিবারকে এসবের কিচ্ছু জানায় না। যদিওবা পিরিয়ড না হওয়া নিয়ে তার মা সন্দেহ করেছিল। সে বিয়ের কথা বলে, রক্তিমের কথা বলে। কিন্তু রক্তিমের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়ার পর তার মা না করে দেয়। কে-বা তার মেয়েতিকে, অতি আদরের সন্তানকে এমন অকর্মা ছেলের কাছে সঁপে দিতে চায়! এমনকি তার সাথে সম্পকচ্ছেদের জন্য চাপ দিতে থাকে। এদিকে পেট দিন দিন স্ফীত হতেই চলেছে। স্তনগুলোও বাড়াবাড়ি রকম বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক অবস্থাও চরমে উঠে। কি করবে বুঝে পায় না। রক্তিমকেও আগের মত মনে হচ্ছে না। কেন জানি এড়িয়ে এড়িয়ে চলছে।
অবশেষে রক্তিমের সাথে চূড়ান্ত করে ফেলে যে, তারা পালাবে। কথামত অবন্তি ষ্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। অবন্তি কলের পর কল করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসতে থাকে। রক্তিমের কোনও খোঁজখবর নেই। পাগলের মত ষ্টেশনের এ প্রান্ত থেকে অই প্রান্তে দৌড়াতে থাকে অবন্তি। একসময় ট্রেনও ছেড়ে যায় প্ল্যাটফর্ম।
কিছু বুঝতে পারে না অবন্তি। মাতালমত হয়ে যায়। রক্তিম এমন প্রতারণা কেন করল কিছুতেই বুঝতে পারে না সে। বেঁচে থাকার স্বাদ তার কাছে বিস্বাদের মতন লাগে। দ্বিতীয়বার ভাবার আগেই অবন্তি ট্রেনের তলায় ঝাঁপ দেয়...
[পুনশ্চঃ যেদিন পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল সেদিন ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়ে গেছিলো। অবন্তি অপেক্ষা করবে জেনে সে খুব দ্রুততার সাথেই আসতে চায়। কিন্তু...কিন্তু, পতিমধ্যে ঘাতক বাস পিষে ফেলে রক্তিমকে। দুদিন মৃত্যুর সাথে লড়ে হেরে যায়...]
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করায় আপনার কেন দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮

সোহান ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহিদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×