মুক্ত আকাশের পাখি আবার মুক্ত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
যে পাখিটি কোথাও বসে না, বসতে পারে না সারাদিন উড়ে উড়ে বেড়ায়। যে পাখি তার খাবার, প্রেম ভালবাসা, সামাজিক যোগাযোগ সব কিছু আকাশে উড়তে উড়তেই করে সে যদি এমন একটি কঠিন সমস্যায় পড়ে উড়তে না পারে তাহলে এর চেয়ে ভয়াবহ খবর আর কি হতে পারে। মাত্র কয়েক দিন পূর্বে (৪/৯/১২) একটি পাখি পড়েছিল এমন এক ভয়াবহ সমস্যায় তাও আমাদের অফিসে!!
পাখিটির নাম ঘর-বাতাসি (House Swift), আমাদের অফিসের (ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) মধ্যে হটাৎ কোন দিক দিয়ে যেন ডুকে পড়ে কিন্তু দ্রুত গতির এই পাখিটা একদম উড়তে পারছিল না। অফিসের সহকর্মী 'সামিউল মহসানিন' পাখিটিকে ধরে দেখলেন পাখির সারা গায়ে, ডানায়, বুকে আঠালো রেজিন লাগানো। পালকগুলি একটার সাথে আরেকটা শক্তভাবে লেগে গিয়েছে। রেজিন দূর করার জন্য ট্যালকম পাউডার খোঁজ করে অবশেষে আরেক সহকর্মী "শারমিন বুলবুল লিটার" কাছে পেলেন।
'সামিউল মহসানিন' যে নাকি মাত্র দুই দিন আগে যুক্তরাজ্য (UK) থেকে 'Bird Ringing' এর উপর দুই মাসের একটা চমৎকার ট্রেনিং নিয়ে ফিরেছেন তিনি এক ঘণ্টা অনেক সতর্কভাবে যত্নের সাথে কাচি আর পাউডার দিয়ে পাখির শরীর থেকে সব রেজিন দূর করলেন। পাখি হাত দিয়ে ধরা ও কোন রকম কষ্ট বা আহত না করে পাখির বিভিন্ন মাপজোখ নেওয়া, রিং পড়িয়ে দেওয়া, চিকিৎসা দেওয়া, নাড়াচাড়া করা এইসব খুব একটি সহজ কাজ নয় এবং উন্নত প্রশিক্ষণ ছাড়া এই কাজ করতে গেলে পাখির চরম বিপদ এমনকি পাখি মারাও যেতে পারে। প্রশিক্ষণ পাওয়া সামিউল ভাই ছিলেন এই কাজে সবচেয়ে দক্ষ ও উপযুক্ত।
অবশেষে পাখিকে মুক্ত করার টানটান উত্তেজনার মুহূর্ত, সবার মাঝে শঙ্কা পাখিটি ঠিকমত উড়তে পারবে তো? কারণ একবারই সুযোগ এবং ঠিকমত উড়তে না পারলে হয়ত পাখিটি আঘাত পেয়ে বা নিচে পড়ে আহত এমনকি মারাও যেতে পারে। ছাদে গিয়ে সবাই হাততালি দিয়ে পাখিকে উৎসাহ দিতে দিতে হাতে রেখে মুক্ত করতেই পাখিটি আবার আকাশে উড়াল দিল। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলে গেল আকাশে আরও উপরের আকাশে মুক্ত স্বাধীন জীবনে। বিপদ মুক্ত হল একটি পাখি আর পাখিটিকে এই মুক্ত জীবনে ফিরিয়ে দিতে পেরে সামিউল ভাই এর সাথে সাথে আমাদের সবার চোখেই আনন্দের ঝিলিক।
আমরা চাই না কোন মুক্ত আকাশের কোন পাখি এই রকম উড়তে না পেরে বিপদে পরুক বা মানুষের তৈরি খাঁচায় জেলের মতো বন্দী জীবন পার করুক।
মাইন রানা
ছবি: রাতুল
প্রাণিজগতের আসাধারন সব ছবি ও লেখা দিয়ে সাজানো আমাদের পেইজঃ প্রাণিজগতের অজানা রহস্য
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কাঁচা আম পাড়ার অভিযান
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন