somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিতে জাহাঙ্গীরনগর

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ সারাদিন থেকে থেকে বৃষ্টি। সন্ধ্যার সাথে সাথে বৃষ্টি আরো ঘন হয়ে আসছে। চারদিকের কোলাহল ক্রমেই মৌন হয়ে আসছে। পাখিদের সান্ধ্যসঙ্গীত সমাপ্ত হয়েছে। মনের ভেতর বৃষ্টি পড়ছে। ভিজে যাচ্ছে অনুভূতিরা। ভীড় করে আসছে স্মৃতির কলরব।

একটা ভাঙা জানালা, একটা চৌকো আকাশ। আকাশে মেঘ। মেঘেরা ছবি হয়ে যেত। ছবিটা ক্রমশই পাল্টাত। বিকালটা খুব উদাসীন লাগত। নিজের সাথে সময় কাটানোর বিস্ময় তখনো কাটেনি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে সুখ-দুঃখের প্রাত্যহিক সঙ্গীরা জড়ো হতে থাকত। আস্তে আস্তে গল্প জমে উঠত। চাঁদের নিচে রচিত হত এক অবাক রূপকথা।

প্রাণ-প্রাচুর্য আমাকেও টানত। কিন্তু আমি সুযোগ পেলেই উধাও হয়ে যেতাম। শব্দ-সুরের এক আশ্চর্য অবয়ব দুর্বার আকর্ষণে টানত। আমি তাকে খুঁজতাম আমার চেনা রাস্তায়, রাতের কাছে, পুকুর পাড়ের নির্বাক গাছের কাছে। যখন হয়তো একলা রাতে হাঁটছি, অথবা উদাস দুপুরে শুয়ে আছি, সে মাঝে মাঝে ধরা দিত।

আমার নিজের জগতটা হঠাত হঠাত বাইরেও দেখতে পেতাম। যখন দেখতাম পিঁপড়ার সারি দলে দলে প্রাচীন বটের নিরাপদ কোটরে ছুটছে, যখন দেখতাম পথের পাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছটায় ফুল ফুটেছে, কিংবা মেঘলা দিনের উতল বাতাস আমাকে আর ঐ দিগন্তকে সমান মাতাল করেছে, অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম। আমার সাথে ওরাও চেয়ে থাকত। মনে আছে, ছুটিতে বাড়ি গেলে ফিরে এসে মনে হত এই প্রাচীন বট, এই পথ, এই মাটি আমার অপেক্ষায় ছিল। এক আশ্চর্য মমতায় বাঁধা পড়ছিলাম প্রতিদিন। আমার ঘরের ভাঙা জানালাটা, আমার বুকশেলফের পাশে অযত্নে পড়ে থাকা কবেকার অব্যবহৃত চাবিটা, সবকিছুই আমাকে একটু একটু করে বাঁধনে জড়াচ্ছিল। এই পথ দিয়ে কত নির্জন রাতে আমি হেঁটে গেছি। কতবার কুয়াশা আর শীত আমাকে অবাক করে দিয়ে পথের সাথেই সারা রাত বেঁধে রেখেছে। হয়তো মাথার ভেতর দেরিদা; হাতে উপচে পড়ছে স্টুয়ার্ট হলের নোট। এই পথেই তো। কিংবা, নতুন একটা গান, নতুন একটা বন্ধু, নতুন একটা পুলক। এই পথ সাক্ষী। এই পথেই শেষবার তার সাথে হেঁটেছি। প্রথম কষ্ট, প্রথম কান্না লুকিয়ে ঘুরে ঘুরে ফিরেছিলাম তোর পথে পথেই। এই ঘাস, এই ভোরের শিশির, এই পাখি আমাকে প্রশ্রয়ে, আদরে লালন করেছে।

জিতেছি যতটা হেরেছিও ততটা। মৌনতার ধ্যানেই এখন নির্লিপ্তি। বিশ্বাসের কেন্দ্র কতবার গেছে সরে। বিশ্বাসের মহাজনি কারবারে খেলাপি ঋণ নিয়ে পালিয়েছি কতবার। সুদাসলের জটিল অঙ্ক মেলেনি কতবার। কিন্তু তুই তো কখনো ফিরিয়ে দিসনি। জানি কোনদিন দিবিনা। তুই যে আমার মা।

১৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×