somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুদের নিয়ে, আমি এক কমবক্তা -সজিব তৌহিদ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ’,‘শিশুরাই জাতির পিতা’ এই ধরনের সংলাপের সাথে আমরা সবাই সু-পরিচত । চরম দু:খজনক হলেও পরম সত্য যে , জাতিসংঘ গঠিত হবার দীর্ঘ ৪২ বছর পর ১৯৮৯ সালে সর্ব প্রথম শিশু অধিকার সনদ অনুমোদন করা হয় ।“ নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো ”সেই সূত্র ধরে জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদের ৫৪ টি অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে এখন আমরা আগামী দিনের নতুন স্বপ্ন দেখতেই পারি। যদিও সেই সনদে এখন পর্যন্ত আমেরিকা ও চীন ২ টি দেশ স্বক্ষর করে নি। যে সনদে ০-১৮ বছরের নিচে সকলকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয় । অবশ্য আমাদের দেশে ১৬ না’কি ১৮ বছরের নিচে শিশু হিসেবে পরিগণিত হবে তা নিয়ে বিতর্ক চলছে । শিশু অধিকার সনদে ৫৪ টি শিশু অধিকারের মধ্যে ৪ টি বিষয় বা মূলনীতিকে গরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে ।
২, ৩, ৬, ১২ অনুচ্ছেদের মূলনীতিগুলো হলো ১* বেঁচে থাকা, শিশুর বিকাশ ও সুরক্ষা ২*অংশগ্রহণ ৩* বৈষম্যহীনতা ৪* শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ । শিশু বেঁচে থাকবে, বেড়ে উঠবে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্বাধীন পরিবেশে । যেখানে শিশু শ্রম নেই, শিশুর শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বালাই নেই এবং শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত থাকবে । এমন কথাই বলা হয়েছে ২ নম্বর অনুচ্ছেদে । ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে শিশুর স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকারের কথা বলা হয়েছে । গোষ্ঠি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, লিঙ্গ সর্বোপরি বৈষম্যহীন সামাজিক পরিবেশে বেড়ে উঠার কথা বলা হয়েছে ৬ নম্বর অনুচ্ছেদে । ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থের কথা বলা হয়েছে । সর্বোত্তম স্বার্থ বলতে শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়নের জন্য তার মতামতকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গরুত্ব দেয়াকে বুঝে থাকি । শিশুরা অনেক বেশি অনুকরণ প্রিয় । বড়রা যা করে ওরা তাই করতে চায় । সুতরাং শিশুর জীবন গঠন, সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়নে বড়দের ভূমিকা অনিবার্য । কেননা বড়রাই হচ্ছে শিশুর পালক ও অভিভাবক । আজকের শিশু আগামী দিনের মাতা- পিতা, ভাই- বধূ , দাদা-দাদি শেষয়ত অভিভাবক । তাই আজকে যিনি অভিভাবক তার দায়িত্ব আগামী দিনের আভিভাবককে সুদক্ষ অভিভাবক হিসেবে গড়ে তোলা । স্কাউটের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ব্যাডেন পাওয়েলের ভাষায়,‘ পৃথিবীকে যেমন পেয়ছো তার চেয়ে উত্তম করে রেখে যাও । ’ অথবা কবি সুকান্তের ভাষায় ,“ এসেছে নতুন শিশু / তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান ।” আমাদের এই ছেড়ে দেয়া স্থানটি যেন হয় পবিত্র, স্বচ্ছ, সুন্দর ও নিরাপদ । তবেই আজকের শিশু আগামী দিনের সুগঠিত ও শক্তিশালী ভবিষ্যৎ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। দেশ, পৃথিবী তথা গোটা জাতিকে আলোর পথে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। সম্ভবত সে অনুধাবন থেকে বলা হয়ে থাকে , ‘একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে/ একটি মানুষ, মানুষ হলে বিশ্ব জগৎ টলে।’ বিশ্ব জগৎ টলাবার জন্যই শিশুদের ভালো করে পরিচর্যা ও তাদের সাথে নিম্নে বর্ণিত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা বাঞ্চণীয় ।
১* শিশুদের ভূত- প্রেতের ভয় না দেখানো । আমাদের দেশের শিশুরা বড়দের কাছ থেকে ভূতের অবাঞ্চিত গল্প শুনে ভূতের ভয় নিয়েই সাড়া জীবন পাড় করে দেয় । যা অহেতুক, অযৌক্তিক ও অমার্জনীয় কাজ ।
২* এটা করো না, সেটা করো না । এই ‘না’ শব্দ ব্যবহার কম করা । কারণ মানব মনের চিরতœন আকর্ষণ না বা নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি । শিশুরাও সেটি করতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে ।
৩* যদিও বিরক্তিকর তা সত্তে¦ও শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত ‘কি’ বা ‘কেন’ প্রশ্নের উত্তর দেয়া । কারণ এর মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে ।
৪* শিশুদের সাথে হাসি মুখে কথা বলা ও তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা।
৫* তাদের মানসিক ও শারীরিক শাস্তি দানে বিরত থাকা ।
৬* ছেলে মেয়ে প্রভেদ না করা এবং সমপরিমাণ খাবার উভয়কে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা।
৭* শিশুদের মতামত গরুত্বের সাথে শোনা ।
৮* তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ।
৯* তোমরা শিশু তোমাদের বোঝার দরকার নেই / তোমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। এমন বাক্য ব্যবহার না করা । এতে শিশু মানসিক হীনমন্যতায় ভুগে । শিশুর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় ।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের সাথে উপরোক্ত আচরণ তো করাই হয় না বরং শোষণ শাসন, নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হয়।
শুধু আমাদের দেশে নয় সারা বিশ্ব জুড়েই শিশুদের নানামুখী ঝঁকিপূর্ণ কুলষিত কাজে ব্যবহার করা হয় । সংযুক্ত আরব আমিরত, সৌদি আরব, ইরানসহ মধ্যপ্রচ্যের বেশ কিছু দেশে শিশুদেরকে উটের জকি হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আবগানিস্তান, সিরিয়া লিওন, ইরাকে শিশুদের কে অস্ত্রবহন ও যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা হয় । আর গোটা পৃথিবীর দেশে দেশে রাজনেিৈতক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় শিশু ব্যবহারের দৃশ্যতো অতি সাধারণ । শিশুদের এই করুণ পরিস্থিতি অনুধাবন করেই শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালে ১১ ডিসেম্বর ‘ইউনিসেফ’ প্রতিষ্ঠা হয় । ১৯৫৩ সালে জাতিসংঘে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠান টি সারা পৃথিবী ব্যাপী শিশুদের অধিকার ও চাওয়া বাস্তবায়নের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে । সে লক্ষ্যে ‘ইউনিসেফ’ প্রায়ই স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে । জাতীয় পর্যায়ে রেডিও এবং টেলিভিশনে শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার করে থাকে । তৃণমূল পর্যায় থেকে শিশুদের তুলে এনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের অধিকার ও জীবন গঠন সম্পের্কে ধারণা দিয়ে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের ২০ টি জেলায়, প্রতি জেলায় ৩০ জন করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মচারীদের নিয়ে শিশু বিষয়ক ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে করে প্রশিক্ষিত কর্মচারীরা তাদের পারিপাশ্বিক অবস্থানে বসবাসরত শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে অনিবার্য ভূমিকা রাখতে পারেন। এছাড়া শিশুদের বিকাশ ও কল্যাণে ‘ইউনিসেফ’ প্রতিনিয়ত ননামুখী কর্মসূচী হাতে নিচ্ছে। ‘ইউনিসেফ’ এর পাশাপাশি একই লক্ষ্যে ‘সেভ দ্য চিলড্রেনের ’ কাজ করছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সেভ দ্য চিলড্রেন অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ড দেশ ভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করে । ধিরে ধিরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তা সম্প্রসারিত হয় । ২০১১ সালের আগে সেভ দ্য চিলড্রেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে কাজ করতো । ২০১২ সাল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেন সবদেশ একত্রিত হয়ে তাদের শিশু বিষয়ক কাজ আরো তরান্বিত করেছে। ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) ২০০৩ সাল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, শিশুর বিকাশ ও সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে । বাংলাদেশের ৬৩ টি জেলায় প্রায় ১৬ হাজার শিশু এনসিটিএফ-এর সদস্য হয়ে সাংগঠনিকভাবে শিশুরা নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায় করে লেখাপড়ার পাশাপাশি তাদের সতীর্থদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে । এমনিভাবে চলতে থাকলে এবং আমাদরে বড়দের শিশুদের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা জন্ম নিলে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন সত্যিই খুব বেশি কঠিন হবে না । কারণ আমেরিকান গীতিকার ও সুরকার জোয়ান বাইজের সেই বিখ্যাত গানটি আমরা সবাই বিশ্বাস করি............. ‍‍" We shall over come
We shall over come
We over come someday
Oh..! Ho..! Deep in my heart we do believe that,
we shall over come someday………….”



সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৭
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×