somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুঘল শেষ সম্রাটের করুণ পরিনীতি (৩য় পর্ব )

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২ য় পর্ব
৭ অক্টোবর ,১৮৫৮। ৮৩ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল, দুই শাহজাদা জওয়ান বখত ও শাহ আববাস, শাহজাদা জওয়ান বখত এর স্ত্রী শাহ জামানী বেগম নিয়ে ইংরেজ গোলন্দাজ ও অশ্বারোহী বাহিনী কলকাতার উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করে। পরে কলকাতা হতে মাগারা নামক যুদ্ধ জাহাজে রেঙ্গুনে পাঠানো হয়।
সম্রাটের জীবনের বাকি দিনগুলো চরম দু:খ ও অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের তত্তাবধানে ৪ রুমের ছোট ঘরে (প্রতিটি রুম ১৬ বর্গ ফুট) সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। সম্রাটকে শুতে দেয়া হয় একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। ইংরেজ সরকার নির্বাসিত সম্রাট ও তার পরিবারের সদস্যের জন্য খোরাকি বাবদ দৈনিক এগার টাকা এবং প্রতি রোববারে বার টাকা করে দিতেন। আর মাসের পহেলা দিনে সাবান, তোয়ালে কেনার জন্য মাথাপিছু দু'টাকা করে দিতেন। কোনো লোককে তাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না।তাদের জন্য চার জন ভারতীয় ভৃত্য (চাপরাসি, ভিস্তিওয়ালা, ধোপা, সুইপার) প্রদান করা হয়। চাকর-বাকররা পাস নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারতো।
১৮৬২ সালের অক্টোবর থেকেই বাহাদুর শাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন।অবশেষে ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্ভর শুক্রবার ভোর ৫টায় ৮৭ বছর বয়সে ভারতের শেষ সম্রাট মৃত্যুবরন করেন।
লাশ দাফন করতে কবর পর্যন্ত গেলেন দু'রাজকুমার জওয়ান বখত ও শাহ আববাস আর তাদের বিশ্বস্ত খাদেম আহম্মদ বেগ। একজন মৌলভী লাশ দাফনে সাহায্য করেন। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল।উদ্দেশ্য এটি একসময় নষ্ট হয়ে যাবে, ঘাসগুলো গোটা জায়গা আচ্ছাদিত করে ফেলবে।কোথায় সর্বশেষ মুঘল সম্রাট শায়িত আছেন, তার চিহ্নিও কেউ খুঁজে পাবে না। ইংরেজরা খুব ভালোভাবে জানত ভারতবর্ষের জনসাধারণের মনে এই সম্রাটের প্রভাব কতখানি। সম্রাটের মাজার যাতে দেশপ্রেমিকদের তীর্থ স্খানে পরিনিত হতে না পারে তারই জন্য এই সতর্কতা। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, শেষ মোগল সম্রাটের মৃত্যুর পরও ইংরেজ বেনিয়ারা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধাটুকুও জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি। এমনকি দাফনের সময় মরহুম সম্রাটের কোনো উপাধি বা পদবী বৃটিশ সরকার ঘোষণা করতে দেয়নি।
সম্রাটের ইচ্ছা ছিল স্বদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়া। জন্মভূমির প্রতি ছিল প্রচণ্ড অনুরাগ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। স্বদেশের মাটিতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ কিংবা সমাহিত হওয়ার সাধ কোনোটাই পূরণ হবে না। নিদারুণ দু:খে তিনি লিখেছেন একের পর এক কালোত্তীর্ণ কবিতা। তারই একটি¬ নিম্নরূপঃ
মরনেকে বাদ ইশ্ক্ব মেরা বা আসর হুয়া উড়নে লাগি হ্যায় খাক মেরি ক্যোয়ি ইয়ার মে; কিৎনা বদনসিব জাফর দাফনকে লিয়ে দোগজ জামিন ভি মিলানা চুকি ক্যোয়ি ইয়ার মে।

ভারতবর্ষের এক দল মানুষ ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাটের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে রেঙ্গুন যান। কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দীর্ঘদিন অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকায় সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর কবর সনাক্ত করা যায়নি।পরে তার আসল কবর আবিষ্কৃত হয় এবং রেঙ্গুন মুসলিম সমাজের দাবির মুখে ১৯০৭ সালে ইংরেজ সরকার সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর কবরে সমাধিসৌধ নির্মান করে।
[১৮৭২ সালে শাহ জামানী বেগম আন্ধত্ব বরন করেন। সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী জিনাত মহল মারা যান ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। সম্রাটের পাশেই রয়েছে তার সমাধি। জওয়ান বখত ৪২ বছর বয়সে স্টোক করে মারা যান। মির্জা শাহ আব্বাস রেঙ্গুনে এক মুসলিম নারি বিয়ে করেন। তার উত্তরসূরিরা বার্মার সাধারণ নাগরিকের মতোই জীবনযাপন করছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তরসূরিদের আরেক অংশ বর্তমানে কলকাতায় বসবাস করে।]


সূত্রঃ
Click This Link

Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×