somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই যুদ্ধের শেষ কবে?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৬৭ সালেই এই যুদ্ধের ব্যাপারটা প্রথম জানতে পারি। তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। পেনফ্রেন্ড করার চরম নেশায় আক্রান্ত। সেই সংগে ডাকটিকেট সংগ্রহের প্রতি প্রচণ্ড আসক্তি। বাবা ডাক্তার হবার কারণে মফস্বল শহরে সবাই একটু খাতির যত্ন করে। সেই সুযোগে মহিমাগ্ণজ চিনিকলের প্রত্যেকটা ডিপার্টমেন্টে আমার অবারিত যাতায়াত। ছুটির দিনগুলোতে গফুর ডাকপিয়নের পিছু পিছু এ অফিস ও অফিস করা ছিলো আমার কাজ। উদ্দেশ্য কোন খামের উপর ভালো ডাকটিকেট দেখলেই সেটা হস্তগত করা।

ন্যাশনাল ব্যাংক অফ পাকিস্তানের অফিস থেকে সেই ডাকটিকেটটা পেলাম। যেটাতে এক যুদ্ধের কথা বলা আছে। THE FIGHT AGAINST CANCER, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সেদিনই প্রথম জানলাম ক্যান্সার নামের রোগটির কথা। সারা পৃথিবী যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

আমার ইতালির পেনফ্রেন্ড আলেসান্দ্রো ভেসিলা। সে শুধু মেডিক্যাল সাইন্সের উপর প্রকাশিত ডাকটিকেট সংগ্রহ করে। ক্যান্সারের উপর প্রকাশিত পাকিস্তানের FIGHT AGAINST CANCER এর ডাকটিকেটটা পেয়ে কি যে খুশী। জানলাম তার ৬০ টা দেশের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাকটিকেট রয়েছে। আমারটাই তার সবচেয়ে দুর্লভ সংগ্রহ।

১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পরে প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের ডাকটিকেটগুলোই বাংলাদেশে ব্যবহার হতে থাকলো। হাঁ করে ডাকঘরের জানালা দিয়ে দেখতাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট পোস্ট মাষ্টার মজিদ সাহেব কেমন করে পাকিস্তানের ডাকটিকেটগুলোর মাঝখানে রাবার স্ট্যাম্প দিয়ে Bangladesh সীল মারছেন। ওই Overprinted Version গুলো নাকি সংগ্রহকারীদের কাছে অনেক মূল্যবান। আলেসান্দ্রো ভেসিলার কাছে একটা FIGHT AGAINST CANCER এর ডাকটিকেট পাঠিয়ে দিলাম Bangladesh সীল সহ। এই দুষ্প্রাপ্য সংগ্রহটা হাতে পেয়ে সে আমাকে একটা রূপালি খাম পাঠালো। ভেতরে আড়াল করা ১০০০০ লিরার একটা কড়কড়ে নোট। তার দৃঢ় বিশ্বাস এই Overprinted ডাকটিকেটটা শুধু তার কাছেই আছে। হবেও বা।

আলেসান্দ্রো ভেসিলা ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে গেছে দুবছর আগে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটা ইমেইল এসেছিলো। তার সংগ্রহকৃত দুর্লভ ডাকটিকেটের সংগ্রহ পারিবারিক মিউজিয়ামে। আর তার দেয়া ১০০০০ লিরার নোটটি এখনও স্মৃতিতাড়িত করে আমাকে।

আমার মধ্যপ্রাচ্যের কর্মস্থলের সৌদি শেখ গলার ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করলেন। গলায় লম্বা সার্জারির ক্ষত নিয়ে চলতে ফিরতে উনি বলতেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌, রক্ষা পেয়েছি। আর আড়ালে ক্যান্সার হয়ত বলতো, বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, আমি ধরলে না। দশ বছর পর, যেই মানুষটাকে হাসতে দেখলাম রাতে ব্রিজের টেবিলে, সকালে বুকে পিঠে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এবারের আক্রমণ ফুসফুসে। সাতদিনের মাথায় আরেকবার হেরে গেলো মানুষ।

লাকীখালার পাঁচ বছরের মেয়েটা। কোন পাপ করার আগে ব্লাড ক্যান্সার ধরে বসলো। কোন সংগতি নেই। তবুও প্রতিরোধ যুদ্ধে নামলেন মা। মহল্লার দোকানে দোকানে সাহায্য ভিক্ষা করলেন। বর্ডার অতিক্রম করে, তিন দিনের রেল জার্নি করে পৌঁছালেন ভারতের ভেলরে। আপাত দৃষ্টিতে মায়ের মনোবলের কাছে ক্যান্সার মানলো হার। ক্যান্সারমুক্ত সার্টিফিকেট পর্যন্ত
ইস্যু করলেন ভেলর হাসপাতাল। আমরা যারা কোন না কোনভাবে জড়িত ছিলাম এই যুদ্ধে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম সৃষ্টিকর্তার কাছে। দুবছর না ঘুরতেই ক্যান্সার এলো আরো সংঘবদ্ধ হয়ে। ভেলর হাসপাতাল ব্যর্থতা স্বীকার করলেন এবার।

কানাডার ফেডারেল সরকারের বিরোধী দলের নেতা জ্যাক লেটন। একদিন হতে পারতেন প্রধান মন্ত্রীও। কি যাদুকরী তাঁর বচনভঙ্গি। নতুন জেনারেশনকে দিনকে দিন সংগঠিত করছিলেন তিনি। সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। একদিন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সংগে ঘোষণা করলেন, আমার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়েছে। বাট্ আই আ্যম এ ফাইটার। চোখের পাতা কি গলা একটুকুও কাঁপেনি তাঁর। যাকে বলে যোদ্ধা! নির্বাচনে প্রচন্ড সফল হলেন তিনি। কিন্তু পরাজিত হলেন ক্যান্সারের কাছে।

অতঃপর হার মানলেন আমাদের হুমায়ুন আহমদ।

ছেলেবেলায় প্রবচন শুনতাম,

যার হলো যক্ষ্মা,
তার নেই রক্ষা।

এখন নিসংকোচে বলা যায়, যক্ষ্মাকে মানবজাতি সার্থকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।

সেই ১৯৬৭ সাল থেকে দেখা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আজো চলছেই চলছে। ৪৫ বছর কি তারো বেশী সময় ধরে চলা এই যুদ্ধের কাছে প্রথম মহাযুদ্ধ কি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ কোন্ ছাড়! কবে যে আমরা বলতে পারবো, দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ ক্যান্সার ফ্রি।

ততদিন পর্যন্ত না চাইলেও বলতে হবে,

যার হয় ক্যান্সার
তার নেই ‘চ্যান্স’ আর।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:২১
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×