৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ : গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ে একদিন
আজ চমৎকার দিন কাটলো। যদিও সকাল দেখে সেটা বোঝার উপায় ছিল না। কাল রাতে তুর্না নিশিথা ট্রেনে করে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছি। মানে হওয়ার কথা রাত সাড়ে ১১টায়। ট্রেনটি প্ল্যাটফর্মে আসে রাত পৌনে বারোটায়। রাত সাড়ে বারোটার দিকে আমি সিটে বসে ঘুমিয়ে পড়ি। কাজে জানি না কয়টায় ট্রেন ছেড়েছে। তবে, বাসায় পৌছেছি সকাল ১০টারও পর।
দুইদিনের জন্য বাড়ি এসেছি। এর মধ্যে আজ শনিবার ছিল বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি হলো গরীবদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানায়, চট্টগ্রাম-কক্মবাজার সড়কের পাশে বিদ্যানগরীতে এটির অবস্থান। এখানে ট্রাস্টের ১০০ একর জমিতে একটি প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুল, একটি মেডিকেল কলেজ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ট্রাস্টের পরিকল্পনায় রয়েছে একটি নার্সিং কলেজ আর ডেন্টাল কলেজ।
একে তো গ্রামে, আবার গরীব কাজে এখানে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের সিনিযর শিক্ষকদের ঘাটতি প্রবল। তবে, রয়েছে একদল লড়াকু প্রভাষক বাহিনী। শাবিপ্রবি বা চবি থেকে নিজেদের স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে তারা একটি কঠিন লড়াই শুরু করেছে। আগেই বলেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেযে কম।
যাহোক, এখানকার সিএসই ভাগের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়া আর তাদেরকে সামনের দিনগুলোর জন্য এগিয়ে দেওয়ার জন্য এই তরুন শিক্ষকরা কাজ করছে সর্বদা। মিনহাজ, প্রিয়াংকা, লিংকন, সালাউদ্দিন এবং আরো যাদের নাম আমার মনে পড়ছে না তারা সবাই রশীদুন নবী স্যারের নেতৃত্বে লড়ে যাচ্ছে। প্রিয়াংকা আর মিনহাজের কারনে আমিও এখন নিজেতে এই দলের একজন ভাবতে ভালবাসি।
বছর দুযেক আগে বিডিওএসএনের শাখা খোলার জন্য আমি প্রথম ওদের ক্যাম্পাসে যাই। এরপর আরো কয়েকবার গিয়েছি। এর মধ্যে ২০১০ সালে ওরা নিজেদের মধ্যে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা আয়োজনের সবচেয়ে বড় ধকল হল ল্যাপটপ যোগাড় করা। সেবার আসুস আর গ্রোবাল সেটি আমাদের দেয়।
এর পর থেকে ওরা একটি আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করার কথা বলে। গেল দুই বছর ওরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। উন্নতিও করেছে।
তবে, একটি প্রত্যন্ত গ্রামে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে আমন্ত্রণ জানানোর মতো সাহস হলেও বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এনএসইউ যে আসবে তার নিশ্চয়তা কই? প্রশ্ন কারা করবে? বিচারক কে হবে?
তবে, আজকে আমি দেখলাম ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৮টি দল অংশ নিয়েছে। ঢাকা এবং সাস্টের বাইরে আর কোন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণের খবর আমার জানা নাই!
বুয়েটের মাহবুবুল হাসানের নেতৃত্বে একটি জাজিং প্যানেল কাজ করেছে। তাদের করা প্রশ্নের অন্তত একটি সমস্যার সমাধান করেছে সব দল। এটিও বা কম কী!
বুয়েট, ঢাবি, সাস্ট থেকে শুধু যে অংশ নিয়েছে তা নয়, একাধিক দলও এসেছে। বলা যায় সর্বোতো সুন্দর একটা প্রতিযোগিতা! দিন শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। সেটিও সুন্দর।
গিগাবাইটের পক্ষ থেকে আমাদের ৭০টি ল্যাপটপ দেওয়া হযেছে প্রতিযোগিতার জন্য। এগুলো না হলে, বাইনারি বিদ্যুতের দেশে কোন প্রতিযোগিতা আয়োজন করাটা নেহায়েৎ বাতুলতা হতো। গিগাবাইটের জন্য আমার টু টু দি পাওয়ার ৩২ কৃতজ্ঞতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল ৮টি সমস্যার সমাধান করে প্রথম হয়েছে। ৭টি করে সমস্যার সমাধান করেছে ঢাবির আর একটি দল আর বুয়েটের ২টি দল। পুরস্কার হিসাবে ক্রেস্ট ছিল, প্রাইজ মানিও ছিল। ইচ্ছা আর আন্তরিকতা থাকলে সীমিত সম্পদ নিযেও যে অসাধারণ সব কাজ করা যায় আজ বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগ সেটা আবার প্রমাণ করেছে। মিনহাজ, প্রিয়াংকা আর তোমাদের সকল সতীর্থ আর শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন।
আজকের দিনের আর একটি বড় পাওনা চবির সিএসই-র হেড ড. হানিফ সিদ্দিকীর সঙ্গ! সকালে গাড়িতে ওঠার পর থেকে আর রাতে বাসায় নামার আগ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গেই ছিলাম। স্বভাবতই আমাদের আলাপের নানান অংশের মধ্যে ঘুরেফিরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষনার কথা। তার ক্যাম্পাসে এবছর অনুষ্ঠিত হবে আইসিসিআইটি ২০১২ । সেটার প্রস্তুতির আলাপও হয়েছে। তিনি বললেন আমরা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স করছি কিন্তু দেশীয় কনফারেন্স নিয়মিত করছি না। আমাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষক তৈরি করতে হলে জাতীয় পর্যায়ে গবেষণাকে অনেক গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য দেশে জাতীয় পর্যায়ে কনফারেন্স করা দরকার। আলাপের এক পর্যায়ে মনে হল বাংলাদেশ কম্পিউটার সোসাইটিতো এটা করতে পারে। ফোন করলাম নতুন মহাসচিব কাজি জাহিদুর রহমানকে। বললাম। বললো – মুনির ভাই এটাতো আমাদের পরিকল্পনায় আছে। এখন আপনারাও যদি বলেন তাহলেতো খুবই ভাল। বুঝলাম ঠিক লোকের হাতে বলটা দিয়েছি।
আইসিসিআইটির প্রাতিষ্ঠানিকতা নিয়েও আলাপ করেছি।
কনটেস্টের সময়টা জুড়ে আমরা ছিলাম জাজদের রুমে। সেখানে আমরা আলাপ করেছি কিভাবে আমাদের শিক্ষার্থীদের রেটিং বাড়ানো যায় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়। কয়েকটা বিষয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা একটা ঐকমত্যে এসেছি। এগুলো হল-
• ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের প্রসার ঘটানো দরকার। এখনকার তুলনায় অনেক বেশি শিক্ষার্থীকে আইওআইতে সম্পৃক্ত করতে হবে
• আইওআই-এর শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়
• এসিএমওর প্রোগ্রামারদের জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা
• প্রতিযোগতিার সংখ্যা বাড়ানো
• আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা (ভারতেরটা বা গুগলেরটা) গুলোতে আমাদের যে সব শিক্ষার্থী টপে থাকবে তাদের জন্য প্রাইজমানি বা সেরকম পুরস্কারের প্রবর্তন করা
• এগুলো হাফ-হার্টেডলি না করে সংগঠিত ভাবে করা।
আপাতত এই কয়টা কাজ করতে পারলেই চলবে। প্রশ্ন হচ্ছে বাশিটা বাজাবে কে?
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৩০