somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হালবিহীন সাধনার বেহাল দশা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বেলায় সাধনার ওষুধ খেতে দিত মা। কাজ হতো কিনা, বুঝতাম না। তবে টেলিভিশন দেখে দেখে সাধনার ওষুধের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিলো বেশ। বিটিভি সেসময় সাধনার প্রচুর বিজ্ঞাপন প্রচার করতো। এক সময়ের এই অতি পরিচিত সাধনাকে দীর্ঘ দিন ভুলেই ছিলাম। কাগজে কাজ করার সূত্র ধরে একদিন মাথায় এলো সাধনার প্লানটি। আচ্ছা, সাধনা নিয়েতো প্রতিবেদন করা যেতে পারে। একসময়ের জনপ্রিয় সাধনা এখন তেমন চোখে পড়ছেনা। তাই একদিন “ঐতিহ্য হারিয়েছে সাধনা” এই শিরনামে একটি প্রতিবেদন রচনায় আগ্রহ প্রকাশ করলাম। প্রধান প্রতিবেদক জানালেন, “প্রতিবেদনটি ফিচারাইজ করতে পারো, ব্যাক পেজে ট্রিটমেন্ট পাবে।” তার কথায় আমি তেমন সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। তার পরেও লেগে গেলাম প্রতিবেদন তৈরির কাজে।
বেশ কয়েকদিন ধরে সাধনার বিক্রয় কেন্দ্র খুঁজছি। পাচ্ছি না। শেষে এক বড় ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে জানতে পারলাম, গুলিস্থানের সিদ্দিক মার্কেটে সাধনার একটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। একদিন সময় করে গেলাম সেখানে। খুঁজে বের করতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। তাকে সাজানো ওষুধ গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলাম। তত্ক্ষনাত একজন বিক্রেতা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলরো , “কি ওষুধ লাগবে আপনার।” আমি একখানা ভিজিটিং কার্ড বের করে বললাম পত্রিকা অফিস থেকে এসেছি। আপনাদের নিয়ে একটি ফিচার করতে চাই। জবাব এলো, “মানে”। আমি বললাম “এক সময়ে তো আপনাদের ওষুধ খুব ভালো চলতো। আমি যখন ছোট ছিলাম। মনে আছে, সাধনার ওষুধ খেতাম। টিভিতে সাধনার প্রচুর বিজ্ঞাপন দেখতাম। আপনাদের ওষুধের খ্যাতি ছিলো তখন। এখন আপনাদের কি অবস্থা সেটা নিয়েই আমি প্রতিবেদন লিখতে চাই।” জবাবে তিনি বললেন, “খ্যাতি এখনো আছো, তবে আগের মতো বিক্রি নেই। এখন মানুষ চাকচিক্য খুঁজে। সুন্দর প্যাকেটের মধ্যকার ওষুধই তাদের পছন্দ।” আমি বললাম, “প্রতিযোগীতায় আপনারা কেন পিছিয়ে পড়লেন?” এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, “এই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না। এসব বিষয়ে কথা বলা নিষেধ আছে। আমাদের কারখানা গেন্ডরিয়াতে আপনি সেখানে গিয়ে কথা বলেন। এখান থেকে ৫০ টাকা রিকসা ভাড়া নিবে।” আমি বিভিন্নভাবে থাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও আর থাকে কথা বলাতে পারিনি। তারপর রিকসা যাত্রা। উদ্দেশ্য গেন্ডারিয়া, দীননাথ সেন রোডের সাধনার কারখানা। যাত্রা পথে রিকসা চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, “চাচা আপনি কি সাধনার ওষুধ খান?” জবাবে, “আগে খেতাম এখন আর খাই না। গ্যাস হলে দোকান থেকে এক টাকার একটা গ্যাসটিকের বড়ি কিনে খেলেই তো হয়ে গেলো। কিন্তু সাধনার ওষুধতো এখন আর আগের মতো সব খানে পাওয়া যায়না।” এভাবে কথা বলতে বলতে, ঘন্টা খানেকের মধ্যে পৌছলাম সাধনার কারখানায়। কারখানার বাইরে একটি বিক্রয় কেন্দ্র। কারখানার দিকে এগুতে পাশ থেকে এক লোক বলে উঠলো। কবিরাজের কাছে এসেছেন। কৌতুহলের স্বরে বলে উঠলাম, কবিরাজ! কোথায়। জবাবে, “দাদা মনে হয় নতুন এসেছেন।” আমি বললাম “হু, আজই আসলাম”। লোকটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, ঐ যে দোকনে বসে রয়েছে বৃদ্ধ লোকটি। উনিই কবিরাজ। যান ওনার সাথে আলাপ করেন। এগিয়ে গিয়ে বললাম “দাদা, নমষ্কার” জাবাবে “নমষ্কার, কি হয়েছে, আপনার।” জাবাবে, “কিছুই হয়নি। এসেছি আপনাদের করাখানা ঘুরে দেখতে। এক সময়ে অনেক নাম শুনেছি। পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম, তাই চিন্তা করলাম দেখেই যাই কারখানাটি। এখন বলেন, কেমন আছেন আপনি।” জবাবে, “ভালো, তাহলে আর আমরা কাছে কি, আপনি বরং ভেতরটা দেখে আসুন।” বললাম, “কারখানার মলিক কে ছিলেন।” ছবি দেখিয়ে বললেন, “এই যে ছবি দেখছেন, যোগেন্দ্র নাথ সেন। উনিই এই করাখানাটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই পাকিস্তান আমলেরর কথা। হাজার খানেক কবিরাজ কাজ করতো এখানে। জমজমাট ছিলো এখানটা। এখন দেখেন না, শুনসান নিরবতা।” কারখানাতে এখন কত লোক কাজ করে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “৫০ -৬০ জনের মতো হবে। এখন তো দাদা আগের মতো নেই। আগের মতো আর ওষুধ গুলো চলে না। মালিক থাকে ভারতে। কর্মচারীরা কোন রকম চালাচ্ছে।” দেশে এতো বড় কারখানা রেখে মালিক ভারতে কি করে, জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, “ভারতে সাধনার অনেক বড় ব্যবসা আছে। শিলা ঘোষ (যোগেন্দ্রনাথের দোহিত্র্য) বছরে দুই তিনবার এদেশে আসেন। সম্পাহ খানেক থাকেন, আবার চলে যান। এখানকার ব্যবসার প্রতি তার মন নেই। বেনী মাধব দা কারাখাটি ভালোই চালিয়ে ছিলেন। তিনি শিলার বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি গত হয়েছেন বছর তিনেক। আপনি বরং ভেতর থেকে ঘুরে আসুন। ওখানে নারায়ণ বাবু আছে, তিনি আপনাকে অনেক খোঁজ খবর দিতে পারবে।”
ভেতরটা দেখতে আমরাও আগ্রহের কমতি ছিলো না। তাই আর কালক্ষেপন না করে দ্রুতই পা বাড়ালাম। পথে দাঁড়োয়ান বাধসাধলো। দাঁড়োয়ান, “কার কাছে যাবেন।” জবাবে, নারায়ন বাবুর কাছে। আপনার পরিচয়। বলেন শহর থেকে একজন দর্শনার্থী এসেছে। ওনার সাক্ষাত্ প্রার্থী।” জবাবে, “আপনার পরিচয় বলুন। ওনার সাথে আপনার পরিচয়।” নারায়ণ বাবুকে কে গিয়ে বলুন, দর্শনার্থী। জবাবে, “আপনি কে বলুনতো। শহর থেকে এত দূরে কেউ তো এই কারখানা দেখতে আসে না। হঠাত্ আপনি।” জবাবে, “এজন্যই তো এলাম। করাখানাটি একটু ঘুরে দেখতে চাই।” জবাবে, “কারখানায় বাইরের লোক প্রবেশ নিষেধ। আর নারায়ণ বাবু থাকলেও তিনি বাইরের কারো সাথে দেখা করেন না।” দাঁড়োয়ানকে অনেক ভাবে বুঝিয়ে কোন লাভ হলো না। অবশেষে আমার একখানা ভিজিটিং কার্ড বের করে দাঁড়োয়ানের হাতে দিয়ে বললাম, “নারায়ণ বাবুকে বলেন, শহর থেকে একজন সাংবাদিক এসেছে। তার সাথে দেখা করতে চায়।” জবাবে, “আপনি সাংবাদিক। আচ্ছা যাচ্ছি।” আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম, যাক পরিশ্রম তাহলে সার্থক হচ্ছে। হয়তোবা এবার সাক্ষাত্ মিলবে। অতঃপর কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে সে জানালো, “তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন না। মালিকপক্ষের নিষেধ আছে।” নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তার পর নারায়ন বাবুর ফোন নম্বর জোগাড় করে ফোন দিলাম। পরিচয় দিলাম। অনেক অনুরোধ করলাম। আপনাদের নিয়ে একটা পজেটিভ স্টোরি করতে চাই। এজন্য আপনার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলতে চাই। কোন ভাবেই তিনি রাজি হলেন না। তার একই কথা, “কোম্পানীর এমডি থাকেন, ভারতে, তার অবর্তমানে তিনি কোন কথা বলেতে পারবে না।” তিনি কবে আসবেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি নিদিষ্ট করে কিছুই বলতে পারলেন না। অবশেষে বুঝতে পারলাম কাজ হবে না। দাঁড়িয়ে ভেতরটা পর্যবেক্ষণ করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে ঘড়ির কাটা ২ টায়। কারখানা ছুটি। ধুঁতি পরিহিত কঙ্কালসার দেহের কয়েকজন কবিরাজ বের হলো। তাদের একজনকে ডাক দিলাম। দাদা কি কাজ শেষ । জবাবে, “হু”। দাদা ঐ যে বড় বড় হাঁড়ি দেখা যাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে কি? জবাবে, “এগুলোর মধ্যে গুড়। এগুলো থেকে সালসা তৈরি করা হবে।” কবিরাজের বাড়ি ফেরার ব্যস্ততায় তারসাথে বেশিক্ষণ কথা বলার সুযোগ হলো না।
কারখানার পাশের একটি দোকানে বসলাম চা খেতে। দোকানীর সাথে অযথা কথা বলে ভাব জমালাম। কথার এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞাসা কররাম, “আপনার তো মনে হয়, ওষুধ কিনতে হয়না। পাশেই ওষুধের এতো বড় করাখানা।” জাবাবে, “কি বলেন দাদা, এগুলো কি খাওয়া যায়। দেখেন না গুড় পঁচাইতেছে। এগুলো দিয়ে নাকি সালসা বানাইবো। কখনও ভেতরে যান নাই, ময়লা-আবর্জনা, কবিরাজরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না। নিজ চোক্ষে দেখে এই ওষুধ খাওয়া যায়।”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×