somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক যে ছিল রূপকথা...

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজারকুমার ঘুমুলে একশো জোনাকি এসে ঢোকে ঘরে। ঘুমের ভেতর সে আলোতে রাজার কুমার দেখে ফুলের বাগান। আলোর বাগান। সারারাত আকাশে মিষ্টি বাতাসার মত চাঁদ। চাঁদ দেখতে ভাল লাগে রাজার ছেলের। বিশাল জানালায় মুখ বাড়িয়ে আলো মাখতে মাখতে যখন সে ঘুমুলো। তার স্বপ্নে এলো এক রাজকুমারী। কি বিষন্ন তার চোখ। টলটলে নদীর মত। পরনের ঝলমলে পোষাকটা কেমন মলিন! আর চুল গুলো এলোমেলো ছড়ানো পিঠে।
রাজার কুমারের ঘুম ভাঙলো যখন সে দেখে তার চোখে জলের ধারা। বুকের খাঁচাটা কেমন করছে! বাম হাতের তালু দিয়ে সে তার বুক ডলে দিতে থাকে আর ভাবে স্বপ্নে পাওয়া সেই মেয়েটি কে।
দিনের আলো ফোটে। পাখিরা গান গেয়ে ওঠে। বাগানের ফুলগুলো দুলে দুলে হাসে। সাদা রাজহাঁস দল বেধে নামে বাগানের ঝিলে। শাপলার পাপড়িতে দুধ সাদা সকালের রোদ এসে নাচে। রাজার কুমার মন খারাপ করে ঘোরে।
দিন যায় রাতে আসে। রাত এলে ঘুম নামে চোখে। রাজার কুমারের স্বপ্নে আসে বিষন্ন চোখের সে রাজকুমারী।
পরপর তিন রাত! রাজার কুমার খেতে পারেনা। ঘুমুতে পারেনা। সারাক্ষন ছটফট করে। সোনার বরন ছেলে শুকিয়ে যায় দিন দিন।
রাজ সভায় চিন্তিত রাজা। মন্ত্রী বলে নতুন ঘর লাগবে কুমারের।নতুর বাগান!
রানী কাঁদে আর বলে আমার সোনার টুকরা ছেলে। ওগো আমার ছেলের দিকে কে নজর দিলো গো!
বড় বড় বদ্যি আসে। নাড়ী টিপে দেখে। জিভ বের করে দেখে। কিছুতেই কিছু হয়না। রাজার কুমারের মুখ শুকিয়ে একটুকু হয়ে গেল। অবশেষে এলো এক ধ্যানী দরবেশ। রাজার কুমারের কনে আঙ্গুল তুলে নিলো বুকের ভেতর। তারপর চোখ বন্ধ করে বললো, কেউ ডাকে?

মাথা নাড়ে সোনার ছেলে। যেতে দিতে হবে। রাজার কাছে এসে খুলে বলে দরবেশ। সোনার ছেলেকে এসে ডাকে পাথর দেশের রাজকন্যা।
রানী কাঁদে আর বুক চাপড়ায়। বুক চাপড়ায় আর বলে আমার ছেলেরে কে ডাকে গো। কোন ডাইনীর মেয়ে!

রাজার কুমার যাবে পাথরের দেশে। সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে পাথরের দেশ। যে যায় সেখানে সেই হয়ে যায় পাথুরে পাহাড়। তাহলে কিভাবে হবে? কেমন করে রাজার কুমার যাবে সেখানে?
রাতে ঘুমুতে পারেনা কুমার। ছটফট করে সারারাত। রানী দরজার কাছে বসে কাঁদে। রাজা পায়চারী করে। সারারাত রাজপ্রাসাদে রাজার পায়ের খড়মের শব্দ শোনা যায় খটাস খটাস ফটাস ফটাস!

রাজার কুমার পথে বের হয়। খোলা বিরান মাঠকে বলে আমায় যাবার পথ বলতে পারো সোহাগী মাঠ? মাঠের বুক চিরে যায়। পথের ঘাস শুকিয়ে যায়। মাঠ বলে কি করে পথ বলি রাজার কুমার। মাঠের শেষেই তো আমার পথের শেষ। তুমি বরং পাখিকে বলে দেখো। সে ঘোরে এ দেশ ওদেশ। পাথুরে দেশের কথা জানতেও পারে।
রাজার কুমার হাঁটে আর হাঁটে। তার সোনার খড়মে পা ছিলে যায়। ফোসকা পড়ে বুড়ো আঙ্গুলে। হঠাৎ দেখে আসমান কালো করে উড়ে আসে ঝাঁক বাধা পাখিরা। রাজার কুমার পিঠের ঝোলা থেকে বের করে মটরের দানা। ছড়িয়ে দেয় মাঠে। পাখিরা খেতে এলে বলে আমায় পাথুরে রাজকন্যার কাছে নিতে পারো আদুরে পাখিরা?

পাখিরা বলে তোমার ওজন কি নিতে পারি কাঁধে। তুমি হলে রাজার কুমার। তোমার সোনার খড়মের ওজনেই তো আমরা দেবে যাবগো ছেলে!
তুমি বরং ময়ূরপঙ্খী নাওকে বলো।
রাজার কুমার আবার হাঁটে। যেতে যেতে হঠাৎ দেখে জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে ঘাস খায় পঙ্খীরাজ ঘোড়া। এ ঘোড়ার কথাই তো বলেছিলো ধ্যানী দরবেশ। পঙ্খীরাজের মুখের মুখ এনে দু চোখের মাঝখানে হাত রেখে রাজার কুমার ফিসফিস করে বলে যাদুর ঘোড়া আমাকে নিয়ে যাবে বল?

গর্বে পঙ্খীরাজের বুক ফুলে যায়। ডানা কাঁপতে থাকে। এত আদর করে কেউ তাকে যাদুর ঘোড়া কখনো বলেনি। কতকাল মনিব হারিয়ে সে পথে পথে ঘুরছে! পিঠে তুলে নিয়ে সে উড়ে চলে আর চলে। সাত দিন সাত রাত আসমানে আসমানে।অবশেষে পাথুরে নগর। দূর থেকে সে নগরের গাছপালা দেখা যায়। মানুষের গায়ে গায়ে লেগে যে দেয়াল। আর ফটকেও সব পাথুরে নীল পাখি দিয়ে কারুকাজ। সন্ধ্যা নামে। ঢোলের পিঠের মত চাঁদ, মাছরাঙা পিঠার মত তারা আহা যেন স্বপ্নের দেশ!
কিন্তু রাজকুমারী কোথায়? রাজার কুমারের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল ঘোড়ার পিঠে। পঙ্খীরাজ ঘোড়ার শরীর জ্বলে যায়। মুখে ফেনা উঠে আসে দুঃখে। মুখ ঘুরিয়ে বলে আপনি কাঁদবেন না রাজার কুমার। আমরা রাজকুমারীকে খুঁজে বের করবই।
ফটকের প্রান্তে এক ছোট ছেলের পাথুরে শরীর। ব্যাঙ ধরতে হাত বাড়িয়েছিল। আর ওমনি ব্যাঙ আর ছোট্ট ছেলে , ছোট্ট ছেলে আর ব্যাঙ দুজনেই হয়ে গেল পাথর। পঙ্খীরাজের পিঠ থেকে নেমে আসে রাজার কুমার। বাগানের ফুল ছিলো কুমারের ঝোলায়। ফুল ঠেকাতেই ছোট্ট ছেলে জীবন ফিরে পেলো। রাজার কুমার ঘোড়ার মুখে ফুল তুলে দিল। ঘোড়া উড়ে উড়ে সব পাথরে ছোঁয়াতেই সবাই ফিরে পেল জীবন। কিন্তু রাজকুমারী?
রাজকুমারীকে খুঁজেও পাওয়া যায়না। কেউ বলতেও পারেনা। সবাই উৎসবে মেতে উঠলো জীবন পেয়ে। রাজার কুমার মন খারাপ করে উচ্ছল নগরীতে ঘোরে আর ঘোরে। মাটির দিকে তাকায় ঘাসের দিকে তাকায় রাজকুমারীর শোকেই যেন মরো মরো।
রাতে এসে ঘুমালো সাদা গোলাপ গাছের তলে। রাতে স্বপ্নে এলো সেই রাজকুমারী। নীল কাপড়ের প্রান্ত তার ধুলোয় লুটায়। তারপর বললো,
আজ রাতের দ্বিতীয় প্রহরের মধ্যে যদি এই গোলাপ গাছের গোড়ায় তাজা রক্ত না পড়ে তবে...
সময় ফুরিয়ে যায়। সময় নেই প্রহরের! রাজার ছেলে আমায় তুমি বাঁচাতে পারোনা। শুকনো ঠোঁটে ঢোক গিলে বলে রাজকুমারী। তার বিষন্নতা সুর হয়ে বাজে পাথুরে দেশে।
রাজার ছেলের ঘুম ভেঙে যায়। সে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
পাশেই ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছিলো পঙ্খীরাজ ঘোড়া সব শুনে সেও কান্না শুরু করলো। কোথায় পাওয়া যাবে এখন রক্ত! রাজার কুমার কাঁদে আর কাঁদে। চোখে এসে রক্ত জমা হয়।
সাদা গোলাপের গাছ ঝুঁকে নামে রাজকুমারের কোলে। ওমনি পঙ্খীরাজ তার ডানা বাড়িয়ে আড়াল করে রাজার কুমারকে। গোলাপ গাছের কাঁটায় রাজার কুমার ব্যাথা পাবে যে!
তারপর সে বলে আমার ডানা কাটো রাজার কুমার। সময় কম।ঝরাও রক্ত,রক্ত ঝরাও। রাজকুমারীকে বাঁচাও।
রাজার কুমার কোমর থেকে বের করে জোড়া তলোয়ার। ঘচাৎ করে কাটে ডানা জোড়া। খলবলিয়ে রক্ত ঝরে গাছের গোড়ায়! গলে যেতে থাকে কাঁটার গাছ। জোছনার ধোঁয়ায় মাটি থেকে উঠে বসে রাজকুমারী। নীল ঝলমলে কাপড়ে রাজকুমারের চোখ ঝলসে যায়।
হাত ধরে হাঁটতে থাকে তারা দুজন রাজপ্রাসাদের দিকে।

তারপর আর কি! তারা দুজন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো। আর ওদিকে পঙ্খীরাজ ঘোড়া যে তার ডানা হারালো সারাজীবনের জন্য! তাইতো রাজার কুমার তাকে সবার চেয়ে বেশি ভালবাসে। বাগানে ঘোরে ফুল দেখে পাখি দেখে আর আদুরে ঘোড়াকেই সাথী করে। তাহলে আর কি বলছি তখন থেকেই তো সব ঘোড়াদের ডানা নেই!

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:০৫
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×