কৌশল, কৌশল আর কৌশল। সর্বত্র চলছে কৌশলের খেলা। কে, কাকে, কিভাবে ঘায়েল করবে এ কৌশল এখন ওপেন। রাজায় রাজায় কৌশল। প্রজায় প্রজায় কৌশল। সরকারি দল আর বিরোধী দলে কৌশল। নেতায় নেতায় কৌশল। কথার কৌশল, বলার কৌশল সর্বোপরি জয়ের কৌশল চলছে সবখানে, সব জায়গায়। শুধু কি তাই? না, আরও আছে- পিতা আর পুত্রের কৌশল, মা আর মেয়ের কৌশল, ভাইয়ে ভাইয়ে কৌশল। কোথায় নেই কৌশল? যুদ্ধ জয়ের কৌশল, নির্বাচনে জয়ের কৌশল। সরকারে টিকে থাকার কৌশল। রাজপথে আন্দোলনের কৌশল। তবে সবই মার খেয়েছে অর্থ আত্মসাতের কৌশলের কাছে। ব্যাংক থেকে প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা আত্মসাতের পর এ কেলেঙ্কারির হোতা তানভীরের বাঁচার কৌশল এখন প্রকাশ্যে। মন্ত্রী, উপদেষ্টা একেকজন একেকভাবে কথা বলছেন। এখন প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রী এক্ষেত্রে কোন কৌশল নিয়েছেন? তিনি ৪০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি কিছুই না বলে কি বোঝাতে চেয়েছেন? দুদক যথারীতি তাদের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত। দুর্নীতির গন্ধ পেলে যেমন তারা নড়েচড়ে বসেন, এক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। হলমার্কের এমডি, তার স্ত্রী, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি সবাইকে তলব করা হয়েছে দুদক কার্যালয়ে। প্রত্যেকেই যার যার কৌশল নিয়ে হাজির হয়েছেন সেখানে। এখন কৌশল টাকা উদ্ধারের। আর অন্যদিকে টাকা ফেরত না দেয়ার কৌশল খুঁজছেন তানভীর। আবার পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের কৌশলের কাছে কাবু সরকার। শেষ পর্যন্ত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগের কৌশলই বেছে নিতে হয়েছে। এখনও অনেক কৌশল বাকি। এরপর কে পদত্যাগ করে আবার কোন কৌশল সামনে নিয়ে আসে কে জানে? তবে এ মুহূর্তে বাড়িওয়ালা আর ভাড়াটিয়ার কৌশলের কথা মনে পড়ছে খুব করে। এক লোক বাড়ি ভাড়া খুঁজতে বেরিয়েছে। সঙ্গে তার স্ত্রী আর তিন সন্তান। বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে এক বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখে টু-লেট লেখা। বাড়ির ভেতরে ঢুকলো ওই ব্যক্তি। কলিং বেল টিপতেই বাড়িওয়ালা দরজা খুলে দিলেন। কি ব্যাপার? আমরা বাড়ি ভাড়া নিতে এসেছি। ও আচ্ছা। তাহলে আসুন। ভেতরে গিয়ে বসলেন তারা। কথাবার্তার একপর্যায়ে বাড়িওয়ালা বললেন, এ তিনজনই বুঝি আপনার সন্তান। ভাড়াটিয়া বললেন, না ৩ জন নয়, ৭ জন। বাড়িওয়ালা বললেন, তাহলে বাকি ৪ জন কোথায়? ভাড়াটিয়া বললেন, ওরা গোরস্তানে। বাড়িওয়ালা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ, ঢাকার বাড়িওয়ালাদের বেশির ভাগই কম লোক দেখে বাড়ি ভাড়া দেন। তাদের কৌশল হলো কম লোক হলে পানি খরচ হবে কম। আরও অনেক সুবিধা আছে। যাক, দু’জনে কথা বলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে গেলেন। কিছু টাকা অ্যাডভান্সও করে গেলেন। আগামী ১ তারিখ এসে উঠবেন বাড়িতে। ৪ দিন পরই ১ তারিখ। যথারীতি ভাড়াটিয়া তার মালপত্র নিয়ে নতুন বাড়িতে উঠেছেন। ১-২ দিন পর বাড়িওয়ালা এসেছেন নতুন ভাড়াটিয়ার ঘরে। উদ্দেশ্য কৌশলে জেনে নেয়া তারা কেমন? কি অবস্থায় উঠেছেন? ঘরে গিয়ে তো বাড়িওয়ালার চোখ মাথায়। ৭ জন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে ঘরে হইচই করছে। একি! ডাকলেন ভাড়াটিয়াকে। ওরা কারা? ভাড়াটিয়া বললেন, কেন আমার সন্তান। রেগে মেগে বাড়িওয়ালা বললেন, আপনি না সেদিন বলেছিলেন, আপনার ৩ সন্তান। ভাড়াটিয়া বললেন, আপনি মিথ্যা বলছেন। আমি তা বলিনি। আমি ৭ জনের কথাই বলেছি। এবার বাড়িওয়ালা বলেন, আপনি বলেছেন, বাকি ৪ জন গোরস্তানে। ভাড়াটিয়া বললেন, তা তো বলেছিই। সেদিন ওদের স্কুলের এক শিক্ষক মারা যান। তাকে দাফন করতে গোরস্তানে গিয়েছিল তারা। বাড়িওয়ালা তো অবাক। বাড়িওয়ালা ভেবেছিলেন, ভাড়াটিয়ার ৪ সন্তান মারা গেছে। তাদের গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। এমন কৌশল আর কত?