হায় হলমার্ক ! হায় আমাদের যাপিত বিষাদ !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
হায় হলমার্ক! হায় আমাদের যাপিত বিষাদ!
ফকির ইলিয়াস
=============================
আমেরিকায় একটি স্টোরের নাম আছে ‘হলমার্ক’। ওরা কার্ড বিক্রি করে। জন্মদিন, মৃত্যুদিন, বিয়ে, চাকরি পাওয়া কিংবা হারানোর কার্ড। আরো গিফট আইটেম। বাংলাদেশে হলমার্ক নামে একটা গ্রুপ গড়ে উঠেছে তা কস্মিনকালেও আমার জানা ছিল না। জানলাম এই সেদিন। কাগজ পড়ে। টিভি দেখে।
কী কা-ই না হয়ে যাচ্ছে দেশে! আমি একজন লেখক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে চিনতাম। তিনি কলাম লিখতেন। সাপ্তাহিক খবরের কাগজ-এ। সম্পাদক ছিলেন কাজী শাহেদ আহমেদ। ঐ সময় ঐ কাগজে কলাম লিখতেন- আহমদ শরীফ, শামসুর রাহমান, আহমদ ছফা, তসলিমা নাসরিন, ফজলুল আলম, আকিদুল ইসলাম আরো অনেকে। আমিও লিখতাম ঐ সাপ্তাহিকে। বাহ! কী চমৎকার ছিল ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর লেখনী। সবই ন্যায়ের পক্ষে। সৎ-মহৎ কতো কথাবার্তা। চমকে উঠেছি, হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সেই সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর নাম দেখে! কী দেখছি এসব! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়েছেন তিনি এই সেদিন। দেশের মানুষ তো সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে একজন নীতিবান লেখক হিসেবেই জানতো। তার নাম আমরা ভুল দেখছি নাতো? কী আর বলা যাবে? হলমার্ক নিয়ে দেশে এখন অনেক কথা।
হলমার্ক গ্রুপকে ঋণ দেয়ায় অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। হলমার্ক গ্রুপকে সোনালী ব্যাংকের আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার পর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের কার্যক্রমে সংসদীয় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে।
এদিকে অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে সমালোচনার মুখে থাকা সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামকে পুনঃনিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সমালোচনা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তারপরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহম্মদ আল কবির, অগ্রণী ব্যাংকের খন্দকার বজলুল হক, জনতার আবুল বারকাত, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু এবং আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল এ তাহেরের মেয়াদ বেড়েছে দুই বছর করে।
ঘটনা নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড় যখন চলছে তখন অর্থমন্ত্রী আবারো বলেছেন ‘এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা দুষ্টু। তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘টাকা আদায় করাই মূল লক্ষ্য। তবে এটা নিয়ে হই চই না হলে টাকাটা আদায় করা সহজ হতো।’ সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রাথমিকভাবে দুই হাজার কোটি টাকা নিশ্চিতভাবে আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কী বলছেন এসব তিনি। মাননীয় অর্থমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের মাননীয় সাংসদ। আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি, তার আসনে তার পায়ের নিচে মাটি নেই। তারপরও ঐ আসনে প্রার্থী তিনি দশম সংসদীয় নির্বাচনে। তিনি কি জিততে পারবেন? তিনি কি ভেবে দেখেছেন তার আসনের মানুষ কী চেয়েছিল, আর কী পেয়েছে? সোনালী ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আবারো বলছি, চার হাজার কোটি টাকার ঘটনা তেমন কিছুই না। আমরা বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। এটা তার ১০ শতাংশ।’ কেলেঙ্কারিকে এভাবে জায়েজ করতে চাইবেন আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী? তিনি বলেছেন, আমরা বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। এর মধ্যে তিন বা চার হাজার কোটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এটা কোনো বড় অংকের অর্থ নয় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোনালী ব্যাংকে হলমার্কের অর্থ জালিয়াতি প্রসঙ্গে নিয়ে হই চই করারও কিছু নেই। বরং সংবাদ মাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা করে দেশের ক্ষতি করছে। এমনভাব যেন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধসে গেছে। এতে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এর আগে শেয়ারবাজারে ধস কারা নামিয়েছে? সরকার ওদের মুখোশ উন্মোচন করতে পারেনি কেন? কেন এদেশে বারবার মানুষ প্রতারিত হচ্ছে? ডেসটিনি, হলমার্ক-এর মতো মাল্টি কোম্পানিগুলো দেশের মানুষকে আর কতো বোকা বানাবে?
দেশে এখন একটা বিষাদকাল চলছে। এভাবে বিষাদগ্রস্ততা চলতে পারে না। কারণ রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, তবে কোনো জাতি দাঁড়াতে পারবে না। নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই একের পর এক নানা রকম খাদকের আবির্ভাব হচ্ছে বাংলাদেশে। এটা শুভ লক্ষণ নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তা কমেছে। আরো কমবে এমনটি চলতে থাকলে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার। মুখ চেয়ে নয়, কেউ দোষ করে থাকলে তাকে সরিয়ে দিতে হবে। অনেক হয়েছে। আর যদি দেরি করা হয় তবে আম ও ছালা দুটোই খোয়াতে হতে পারে। অতএব সাধু সাবধান!
আমার মনে হয় আমার মতো একজন নগণ্য কলাম লেখকের এর চেয়ে স্বচ্ছ করে আর কিছুই বলার নেই।
৬ সেপ্টেম্বর ২০১২
=============================================
দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা / ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ শনিবার
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা
এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম
জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন
পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?
বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন