somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরীব দেশের বড়লোক অর্থমন্ত্রী

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের দু’জন সরাসরি রোজগারের সাথে জড়িত। বাবা পেনশন পান। তারপরেও মাস শেষে চলতে কষ্ট হয়।হতাশ হইনা। কারণ আমাদের পরিবার বা আমি বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সামগ্রীক অবস্থারই প্রতিনিধিত্ব করছি। সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা বিচ্ছিন্ন বা অবহেলিত পর্যায়ের কেউ নই। সমাজের শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা এরচেয়েও খারাপ। একদিন কাজে না গেলে পরের দিন খাবার জোটেনা।

মহল্লার রাস্তাঘাটগুলোর ইট-সুরকি সরে গিয়ে প্রাগৈতিহাসিক কালের মাটির স্তরগুলো ভেসে উঠেছে। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। শত দেন-দরবার করেও কিছু করা যাচ্ছেনা। কারণ একটাই, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নাই। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলাম। গত কয়েক বছরে নতুন কোন রাস্তা পাকা করা হয়নি। পুরাতন পাকা রাস্তাগুলোরও কোন সংস্কার হয়নি। এখানেও কারণটা অপর্যাপ্ত বরাদ্দ বা অর্থাভাব।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে গেলে দেখা যাবে সীটের অভাবে বারান্দা, ফ্লোরে রোগীরা কাতরাচ্ছে। টাকার অভাবে সীটের সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছেনা। একটা এম্বুল্যান্স বা এক্সরে মেশিন নষ্ট হলে অর্থের অভাবে বছরের পর বছর অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকে। বাইরের প্যাথলজি থেকে রোগীর পকেটের টাকা খরচ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে আনতে হয়।

পদ্মাসেতুর টাকা সংগ্রহের জন্য আমাদের অর্থমন্ত্রী প্রতিদিন দেন-দরবার করছেন। বিশ্বব্যাংক-কে মানানোর জন্য এডিবি, জাইকা-কে নিত্য তোষামোদ করছেন। গতকালকে তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংকে মানানোর জন্য প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। সরকার প্রধান একসময়ে বড়াই করে বলেছিলেন, নিজেদের টাকায়ই পদ্মাসেতু করা হবে। এখন তার সরকারের অর্থমন্ত্রীর কর্মকান্ডে বিষয়টা প্রতিষ্ঠিত যে, অতো বড় সেতু করবার সামর্থ্য আমাদের নেই।

উপরের বর্ণনাগুলোর সাথে দেশের প্রায় ৯৯% মানুষ পরিচিত। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা এ পরিস্থিতিগুলো মেনেও নেই। কিন্তু আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রীর গত পরশুদিনের (০৪/৯/২০১২) একটি মন্তব্যে মনে হচ্ছে, শুধু শুধু যেচে যেচে আমরা এ কষ্ট বা নেতিবাচক পরিস্থিতিগুলো মেনে নিচ্ছি। আমাদের দেশ আদতে অনেক ধনী। আমাদের অর্থমন্ত্রীর মতে ৪০০০ কোটি টাকার অনিয়ম বড় ধরণের কোন অনিয়মই নয়। যে দেশের অর্থমন্ত্রী মনে করেন ৪০০০ কোটি টাকা কোন বড় ধরণের টাকা নয় সে দেশের সাধারণ মানুষের নুন আনতা পান্তা ফুরানো, কাজ না থাকলে পেটে ভাত না থাকা, হাসপাতালের বারান্দায় বিনা চিকিৎসায় কাতরানো আর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বের দরবারে ভিক্ষা চেয়ে বেড়ানো ধনীর দুলালের দুঃখবিলাস ছাড়া আর কি হতে পারে?

আসলে আমাদের কপালটাই মন্দ। একমাত্র তাজউদ্দিন আহমেদ ছাড়া স্বাধীনতার পর হতে এ পর্যন্ত গণমানুষের জীবনধারা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, অরাজনৈতিক, ডিগ্রীর বহরধারী ব্যক্তিদের ধরে এনে অর্থমন্ত্রী করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাদেরকে রাজনীতিবিদ বানানো হয়েছে। অবশ্য ওনারা পাশ করলেও অর্থ মন্ত্রী হতেন, ফেল করলেও হতেন।সাধারণ মানুষের জীবনমানের চেয়ে ওনাদের কাছে অথনীতির জটিল সূত্রগুলোই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। বিলিয়ন ডলারের চুক্তি আর অর্থনীতির কঠিন ও জটিল হিসাবের মাঝে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর হাহাকার আর চাহিদাগুলো সব সময়েই মিলিয়ে গেছে।

হয়তো দিন বদলাবে। এই বদলানোর সূত্র ধরেই এমন একজন অর্থমন্ত্রী পাব যিনি অর্থনীতির জটিল সূত্রের চেয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের চাহিদাগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিবেন।

হয়তো কোনকিছুই বদলাবেনা। হয়তো আমার চিন্তাটাই রাবিশ।
১৬টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×