somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনন্ত জলিল: পোস্টমর্টেম

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০০ সালের পর থেকে এক যুগ পার হলেও বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি কতটুকু হয়েছে বা পরিচালকরা করতে পেরেছেন তা আর নতুন করে বলে দেবার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।আজ মনে হয় আমাকে জোড় করে মানতে হবে যে গত এক যুগ ধরে সিনেমা পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রিরা এদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এত এত উন্নতি সাধন করেছে এবং কোনরুপ ব্যাবসা না করে সবাই শুধু সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করেছে কিন্তু হতচ্ছারা এক জলিল এসে বাংলা সিনেমার বারোটা বাজাইছে এবং সেই একমাত্র ব্যাক্তি যে কিনা সিনেমার ব্যাবসা করে।

জলিলের অপরাধ কি?

ডিপজল, মিজু আহম্মেদ, মিশা, কাবিলা, মুনমুন, ময়ুরি, শাকিব, মেহেদি, অমিত, ওমর সানি, অপু-নিপু অভিনিত সিনেমাগুলো যখন তিলে তিলে সব ভদ্র মানুষগুলোকে গত এক যুগ ধরে সিনেমা হল থেকে দূরে রেখেছে, সেক্ষেত্রে জলিল মিয়া নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে উচ্চাভিলাষী সপ্ন দেখেছে আর বিগ-বাজেটের সিনেমা বানায়া সিনেমা হল বিমুখ মানুষগুলোকে সিনেমা হলে ফিরায়া আনতে চেয়েছে। একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ করে সিনেমা হল মালিকেরা যখন বড় বড় শপিং মল বানাচ্ছেন সেখানে মিঃ জলিল যদি জেলায় জেলায় সিনেপ্লেক্স বানাইয়া খোঁজ দ্য সার্চ,স্পীড টাইপ মার্কা মারা সিনেমা গুলা চালায় তাহলে সমস্যা কি? জলিলের অভিনয় বা সিনেমা যদি কারো পছন্দ না হয় তাহলে তারা জলিলের সিনেমা দেখতে না যাক।

তামিল বা হিন্দি সিনেমা কপি পেস্ট মেরে সিনেমা বানিয়ে ব্যবসা করা যদি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী হয় তাহলে কলকাতার বাংলা সিনেমা আমদানি করে ব্যাবসা করা বুঝি সামাজিক দায়শোধ?

জলিল সাহেব পরিপূর্ন একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি নিজের ব্যবসার কথা -ই ভাবেন >>>>>
যুক্তিসুংগত বলা যায়, কোন একটা সিনেমায় জলিল সাহেব ব্যাবসা সফল হওয়া মানে সিনেমা হল মালিকরাও ব্যাবসা সফল হওয়া, আর যেহেতু তিনি পরিপূর্ন একজন ব্যবসায়ী তাই তিনিই বুঝেন কি ধরনের সিনেমা বানালে তার নিজের পাশাপাশি সিনেমা হল মালিকেরাও লাভবান হবে এবং কিছুটা হলেও দেশের টাকা কলকাতায় ও হলিউডে রপ্তানী হবেনা।

জলিলের সিনেমায় জলিলকে ও তার স্ত্রীকে দেখতে ভাল লাগেনা, সুতরাং আমি কি করতে পারি? একটা কাজই করতে পারি তার সিনেমা আর দেখবনা, তাই বলে তার সমালোচনা করে অন্যদেরকে তার সিনেমা দেখতে নিরুতসাহিত করব এই চাকরিতো আমাকে কেউ দেয় নাই। আর এই জাতীয় নিন্দিত কাজ করার আমি কে? জীবনের ত্রিশ বছর পার করে বাংলা সিনেমার উন্নতিতে কি করেছি আর বাকি ত্রিশ-চল্লিশ বছরেই বা কি করব? যেখানে আমার মত অকাল-কুস্মান্ডা সিনেপ্লেক্সে যেয়ে ট্রান্সফরমার, এভেঞ্জারস আর বাসায় সেট-ম্যাক্সে রা-ওয়ান দেখতে ভালবাসি সেখানে নিতান্ত কৌতুহল বশতঃ হোক/ হাস্যকর ইংরেজি উচ্চারন শুনতে কিংবা বাংলা সিনেমা দেখতে আপনাকে আর আমাকে সিনেপ্লেক্সে নিতে পেরেছে তো মিঃ জলিল ই তাইনা?

জলিল তো গাধা-আহম্মক, সিনেমা বানায়া ব্যাবসা করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই, আত্নপ্রচারনার উদ্দেশ্যে নিজেই নিজের ৪টা সিনেমার নায়ক আর নিজের স্ত্রী নায়িকা।সে কত বড় গাধা!!!!! আমরা যারা এমনটা ভাবছি বা সমালোচনা করে নিজের পিত্তি ঠান্ডা করছি, আমাদের উচিত-
বাপ-দাদার সহায়-সম্পত্তি সব বিক্রি করে একটা সিনেমা বানানো আর সেই সিনেমা পাবলিকরে মাগনা দেখাইয়া জলিল ব্যাটারে বুঝায়া দেয়া যে সামাজিক দায়বদ্ধতা কাকে বলে ও কত প্রকার? যারা যারা একমত আছেন আসেন যদি ক্ষমতা ও সাহস থাকেতো সকল প্রকার সমালোচনা বাদ দিয়ে সামাজিক দায়শোধ করতে এমন একটা সিনেমা বানাই তারপর মাগনা দেখাই আর তারপর ফারমগেট ওভার-ব্রীজে থালা নিয়ে বসে পরি।তখনি বুঝবেন সামাজিক দায়বদ্ধতা বলা অনেক সহজ !!!!!

সিনেমার উদ্দেশ্য যদি বিনোদন আর সামাজিক দায়িত্নবোধের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকতো; কোনো ব্যাবসায়িক ধারনা যুক্ত না থাকতো তাহলে আমি হলফ করে বলতে পারি সিনেমা বানাতে কোন প্রতিযোগিতা থাকতোনা, আর প্রতিযোগিতা না থাকলে সিনেমার মান-উন্নয়ন এবং ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন ও হতনা, প্রতিটা সিনেমা বানানোর পর সিনেমা শিল্পিদের আর সিনেমা জগতে খুজে পাওয়া যেতনা, মোটকথা মুখ ও মুখোশ এবং পথের-প্যাচালির পর বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে আর কোন সিনেমা কেউ দেখতে পেত কিনা সন্দেহ থেকে যায়।

জলিলের ইংরেজি উচ্চারনে সমস্যা আছে, খোজ দ্যা সার্চ দেখেই তো বুঝেছেন, সুতরাং পছন্দ না হলে তার আর কোন সিনেমা না দেখাই ভালো।
পরিশেষে, একটি কথা বলে শেষ করতে চাই যে,
“জলিল সাহেব ঘানা –রাশিয়াকে যেভাবে মিন করেছেন তেমনি যদি বিদেশী কেউ বাংলাদেশকে নিয়ে বলে তাহলে কেমন লাগবে??” এটাতো ভবিষ্যতের ব্যাপার হয়ে গেল(যদি বিদেশী কেউ বাংলাদেশকে নিয়ে বলে), কিন্তু আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করি বিদেশিরা বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত কিভাবে অপমান করছে, হয়তোবা অনেকেই সেটা অনুভব করেন না। সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীর শিরচ্ছেদের পর সৌদিরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের অপমান করে বলত তোরা তো খুনি, সৌদি কূটনৈতিক খুন হওয়ার পর ও একই কাহিনী, পদ্মা সেতু দূর্ণীতি নিয়ে সমগ্র ইউরোপ-আমেরিকাইয় বাংলাদেশের পরিচয় দূর্ণীতিবাজ, তাছাড়া হাইকোর্ট তো অনেক আগেই রং-হেডেড বলেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে, এতসব পরিচয় নিয়েইতো বাংলাদেশে বেচে আছি, আর বাংলাদেশি নায়ক থেকে যদি এখনই শাহরুখ খানের পারফরমেন্স আশা করি তাহলে নিতান্তই অবিচার, তাকে তো সময় দিতে হবে, সে হয়তো পারবে নয়তো পারবেনা, সবচেয়ে বড় কথা সেতো নতুন ধারা/প্রযুক্তির সিনেমা শুরু করেছে।জলিল এর উদ্দেশ্য অবজ্ঞা করে যে উক্তিটি করা হয়েছিল “ঐ যে বাংলা ছবির নায়ক” তার জবাবে অনন্ত যথার্থই বলেছে যে ঐ ছেলেটিও বাংলাদেশের , সে ঘানা থেকেও আসেনি এবং রাশিয়া থেকেও আসেনি। এখানে ছেলেটি বিদেশী নয় এবং সে যে বাংলাদেশী সেটা বুঝাতেই ২/৩টা দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে; কোন দেশকে তুচ্ছ করার জন্য যে নয় এটা তো স্বাভাবিক ভাবেই বুঝার কথা।অনন্তের আলোচিত উক্তিটির উচ্চারন হাস্যকর কিন্তু কেউ যদি তার বক্তব্যের স্থান-কাল-পাত্র ও ইনার মোটিভ বুঝতে না পারে তাহলে সেটা তাহার অজ্ঞতা বৈকি আর কিছুই নয়।

কাউকে কটাক্ষ ও আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখাটা লেখা হয়নি
লেখাটি লেখতে অনুপ্রানিত করেছে
“জলিলকে পচাবই - এস.বি.আলী এর বাংলা ব্লগ ”
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৩৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×