somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুহম্মদ রেজাউর রহমান
আমি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসি। এই মানসিকতা নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছি এম.আর.আর. ফাউন্ডেশন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি; বেকার যুবকরা প্রশিক্ষিত হয়ে নিজেই নিজের বেকারত্বের সমাধান করতে পারেন। বিশেষ প্রয়োজনে আমাকে ০১৬৩১৬০৬০৬০ অথবা ০১৬৩৪৫০০৫০০ নাম্বারে পাবেন।

কীটবিনাশী গাছপালা দিয়ে কীটনাশক তৈরি ও "জাদুর ফাঁদ" হতে পারে কীটনাশকের বিকল্প

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাদুর ফাঁদ



ফসল ও ফল উত্পাদনে নানা রকম কীটনাশক বা বিষের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কীটনাশকের বিষক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ফল ও ফসল নিয়ে আসা হচ্ছে বাজারে। পোকামুক্ত এসব ফসল ও ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে হাইব্রিড ফলে বেশি কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কীটনাশকযুক্ত খাবার গ্রহণই লিভারে জটিলতা, কিডনিতে স্থায়ী সমস্যা, প্রেসার, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ও প্রজনন প্রক্রিয়ার সমস্যা সৃষ্টিসহ জটিল দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি অস্বস্তিবোধ, চুলকানি, ঘা-পাঁচড়া, বমিসহ বিভিন্ন তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ফল ও ফসলের পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ ও রোগবালাই দমনের জন্য কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে সমন্বিত বালাইনাশক, জাদুর ফাদ ইত্যাদি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১২৩ ধরনের কীটনাশক ১৩৯০টি বাণিজ্যিকি নামে বাজারজাত করা হচ্ছে। পেস্টিসাইড নিয়ম না মানায় প্রতিবছরই বিভিন্ন কীটনাশক বাজারজাত প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছে।

কৃষিবিদ আহমেদ মুকুল বলেন, সর্বাধিক বিষাক্ত, অধিক বিষাক্ত, বিষাক্ত ও কম বিষাক্ত—এই চার ধরনের কীটনাশক রয়েছে। সর্বাধিক বিষাক্ত ও অধিক বিষাক্ত অনেক কীটনাশক আমাদের দেশে আমদানি ও বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। তুলনামূলক কম বিষাক্ত কিছু কীটনাশক ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো অতিরিক্ত ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে।

কৃষিবিদরা জানান, ফসলের কীটপতঙ্গ দমনের জন্য ব্যবহৃত অর্গানোক্লোরিন জাতীয় ডিডিটি ক্লোরোডেন, ডাই-এলড্রিন, হেপ্টাক্লোর–এগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। অর্গানোক্লোরিন জাতীয় কীটনাশকের বিষক্রিয়া পানিতে ও গ্রহণকারী মানুষের শরীরে ৩ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বিদ্যমান থাকতে পারে। বাংলাদেশে এগুলোর আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ। কিন্তু ভারত ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চোরাপথে এ জাতীয় কীটনাশক আসছে এবং অধিক কার্যকর হওয়ায় চাষীরা ব্যবহার করছে।

কার্বামেট জাতীয় কীটনাশক কার্বারিল, মিপসিন, মার্শাল, কার্বোফুরান ও পাদানসহ আরো কয়েকটি কীটনাশক বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাধারণত ১৫ থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত এগুলোর বিষক্রিয়া থাকে। পাইরিথ্রয়েড জাতীয় রিপকর্ড, সিমবুশ, ডেসিস, সুমিসাইডিন, সুমি-আলফার বিষক্রিয়া থাকে ৭ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত। পাইরিথ্রয়েড জাতীয় কীটনাশক মূলত উঁচু জমির ফসলে, রবিশস্যে ব্যবহারের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত হলেও ধান জাতীয় ফসলেও এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যাচ্ছে। মানুষের পাশাপাশি এগুলো মাছের জন্যও ক্ষতিকর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ রওশন জামিলের জরিপ ও গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ফল ও ফসলে ব্যবহৃত কীটনাশকের রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে ক্রমেই বাড়ছে জটিল রোগীর সংখ্যা, কমছে রোগ প্রতিরোধ ও কর্মক্ষমতা। প্রতিবেদনে কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করে একজন মানুষের প্রতিগ্রাম রক্তে শূন্য দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম বিষ সহনীয় হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের শরীরে রয়েছে গড়ে ২ দশমিক ১ মাইক্রোগ্রাম। ছাত্রীদের শরীরে ১ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শরীরে ২ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম, তুরাগ নদীর মাছ আহরণকারী জেলেদের শরীরে ৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, জেলেদের স্ত্রীদের শরীরে ৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম, বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে মাছধরা জেলেদের শরীরে শূন্য দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম, জেলেদের স্ত্রীদের শরীরে ১ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রাম, ঢাকার গার্মেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে পুরুষের শরীরে ৯ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম ও মহিলাদের শরীরে ২ দশমিক ৪ মাইক্রোগ্রাম, রাজধানীর পথশিশুদের শরীরে ৪ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। বিষক্রিয়ার ৯০ শতাংশই চর্বিতে মিশে আছে। প্রতিবেদনটি তৈরিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রেণী ও পেশার ১৪৪ ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত রক্ত ১২ গ্রুপে ভাগ করে ওই রক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ ও সুইডেনের স্টকহোম ইডনিভার্সিটির ল্যাবরেটরিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মেথড অনুযায়ী পরীক্ষা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই বিষক্রিয়ার কারণে মানুষের রক্তের কোষ ধ্বংস হয়। থ্যালাসেমিয়াসহ অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। মানুষের প্রজনন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। বিকালঙ্গ শিশু জন্মের আশঙ্কা বাড়ে।

কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন জানান, কীটনাশক দেয়া শাকসবজি কোনো রকম বিরতি না দিয়ে (বিষক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে) বাজারে নিয়ে আসা হয়। এতে এগুলোর ভোক্তারাও সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।

কৃষিবিদ ডা. শফিউল আহাদ সরদার জানান, কীটনাশক ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বড় সমস্যা হলো জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাওয়া। মাটির উর্বরা শক্তি বাড়াতে কেঁচো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মৌমাছি পরাগায়ণে ভূমিকা রাখে। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মৌমাছি ও কেঁচো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মরে যাচ্ছে জোঁক-ব্যাঙসহ কৃষিবান্ধব অনেক প্রাণী।


কৃষিবিদ ড: খান বলেন, মানব শরীরে কীটনাশকযুক্ত খাবার গ্রহণে তাত্ক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী হয়। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় অস্বস্তিবোধ, চামড়ায় চুলকানো, ঘা হওয়া, বমি হওয়া, মাথা ঘোরা, পেটে গ্যাস হওয়া, বুকজ্বলা—এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে ক্যান্সার, লিভার ও কিডনিরোগ, বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হওয়া, প্রজননক্রিয়াসহ আরো বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এমনকি কীটনাশক নাক বা মুখ দিয়ে গ্রহণের মাধ্যমে মৃত্যুও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞ এই কৃষিবিদ জানান, বনজঙ্গল ও বাড়ির আশপাশে এমন অনেক গাছপালা আছে, যেগুলো দিয়ে ভেষজ বালাইনাশক তৈরি করা যায়। পোকামাকড়ের হাত থেকে ফল ও ফসল রক্ষার জন্য কীটনাশক প্রয়োগের আগে সমন্বিত বালাই দমনের প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি পদ্ধতি রয়েছে, তাছাড়া জাদুর ফাদও বেশ কর্যকরী। এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অবশ্যই পোকামাকড় দমন সম্ভব। নিম, নিশিন্দা, বিষকাটালী, মেহগনিসহ প্রায় ৮০টি কীটবিনাশী গাছপালা দিয়ে কীটনাশক তৈরি ও তা ব্যবহার করে ফসলের বিভিন্ন ক্ষতিকর পোকামাকড় এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিভিন্ন দ্রব্য যেমন চুন, লবণ, চিনি, গোমূত্র, গোবর দিয়ে বালাই দমন করা যায়। জাদুর ফাঁদ পেতেও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে, উপকারী ও কৃষিবান্ধব পোকামাকড় যাতে ধ্বংস না হয়।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×