somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতিতে জামায়াত...

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা জানি পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে। তাই পুরোনো লেখাগুলো যেন হারিয়ে না যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে জামায়াত শিবিরের লেখাগুলো। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটা লেখা চোখে পড়লো একটি পত্রিকার কলামে। ভালো লাগলো বলে শেয়ার করলাম। আসলে আমাদের দেশে রাজাকারদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এগুলো শেয়ার চলতেই থাকা উচিত। নেন পড়েন-
গভীর আতঙ্কের সঙ্গে ফ্যাসিবাদী সংগঠন জামায়াতে ইসলামের উস্কানিমূলক রাজনীতি আমরা লক্ষ্য করেছি। অগণতান্ত্রিক হঠকারিতা জামায়াতের রাজনীতির মূলমন্ত্র। রক্তলোলুপ বাঘ কখনো রক্ত মাংসের নেশা ছাড়তে পারে না। ১৯৭১ সালে জামায়াত নারী ধর্ষণ করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তানি খানসেনাদের দালালি করেছে, অগণিত বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে। সেই স্বভাব জামায়াত ছাড়তে পারেনি। বাঘ তার হিংস্র স্বভাব ত্যাগ করতে পারে না, সাপও তার স্বভাব ছাড়তে পারে না; তদ্রূপ জামায়াতও তার নেকড়ে স্বভাব কখনো ছাড়তে পারবে না। যে কোনো সুযোগের বাতাবরণ দিয়ে জামায়াত হিংস্র বাঘের হালুম-হুলুম হুংকার ছাড়ছে। এতো বড় স্পর্ধা তাদের যে, গোলাম আযামকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদের নামে যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে, তা জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারা মতিঝিলকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। সরাসরি পুলিশ বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে পুলিশ বাহিনীকে পিছু হটিয়ে দিয়েছিলো এক পর্যায়ে। পুলিশের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়েছিলো, পরে তা উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর আবুল বাশারকে পুলিশ ভ্যান থেকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে আহত-রক্তাক্ত করেছে। কী চায় জামায়াত? তারা আরেকটি একাত্তর উপহার দিতে চায় নাকি? নাকি তারা গৃহযুদ্ধ চায়? ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে তারা বেগম জিয়ার কাঁধে বন্দুক রেখে দেশে একটা গৃহযুদ্ধ বাঁধাতে চায়। গত কিছুদিন আগে একটি জাতীয় পত্রিকায় দেখেছি, রংপুর কারমাইকেল কলেজে নির্মীয়মান শহীদ মিনার রাতের অন্ধকারে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে শিবিরের ক্যাডাররা। এটা আইন হাতে তুলে নেবার সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত। জামায়াত কিন্তু জন্মের পর থেকে আইনের শাসন লঙ্ঘন করে এসেছে। মোল্লা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে কয়েক হাজার কাদিয়ানি হত্যা করা হয়েছিলো। তার ফাঁসির হুকুম হয়েছিলো। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দেন-দরবারে মওদুদী বেঁচে যায়। ১৯৭১ সালে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত হেন অপকর্ম নেই, যা করেনি। বাংলার প্রতিটি জনপদে জামায়াতের নখরের চিহ্ন আছে। বাংলার প্রতিটি বীরঙ্গানার কোমল অঙ্গে জামায়াতের পদচিহ্ন অঙ্কিত আছে। বাংলার জমিনে প্রতিটি বধ্যভূমিতে জামায়াতের ভয়াল হিংস্র থাবার চিহ্ন আছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াত সহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত জামায়াত আলোর মুখ দেখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর জিয়াউর রহমান রাজনীতিবিদদের জন্যে রাজনীতি জটিল করে দেবার জন্যে জামায়াতকে সশস্ত্রভাবে মাঠে নামার ছাড়পত্র দেয়। এরপর জামায়াত-শিবির বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের এই মনস্তত্ব কাজ করেছিলো যে, 'এখনই সুবর্ণ সুযোগ বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মডেলে রূপান্তরিত করার'। এরপর তারা কৌশলে বাংলাদেশের দুটো বিশ্ববিদ্যালয়কে বগলদাবা করে; সেখানে তারা পাকিস্তানি মডেলের রাজত্ব কায়েম করে। শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ছাত্রদের গলাকাটা, রগকাটা, হাতকাটা, পা-কাটা ও হাতুড়ি দিয়ে মস্তক চূর্ণ করা। এক সময় রাজশাহীর মতিহার শিবিরের তাণ্ডবে, নৃশংস হত্যাকাণ্ডে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা শিবির ক্যাডারদের ভয়ে সর্বক্ষণ আতঙ্কিত থাকতো। স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাসও নিতে পারতো না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হলো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা শহীদ মিনারে ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে ফুল দিতে পারতো না। বিএনপির প্রশ্রয়ে তারা এতোটাই শক্তি সঞ্চয় করেছিলো। অতি সামপ্রতিককালে একটি জাতীয় দৈনিক শিবির ক্যাডারদের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার শিরোনাম দেয়া হয়েছে, 'শিশুদের যেভাবে দলে টানছে শিবির'। খবরে বলা হচ্ছে, 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের তৎপরতা ব্যাহিকভাবে কিছুটা শিথিল থাকলেও সংগঠনের বিস্তারে ভেতরে ভেতরে তারা যথেষ্ট সক্রিয়। তারা কৌশলে বাড়িয়ে চলেছে সংগঠনের কর্মীসংখ্যা। এক্ষেত্রে তারা টার্গেট করেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। জড়ানো হচ্ছে পরিবারের নারীদের। চলছে নিয়মিত চাঁদা আদায়। সমপ্রতি চট্টগ্রামে আটক শিবির নেতা-কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা বই ও নথি পর্যালোচনায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।' (কালের কণ্ঠ-৮/১/০১২)। ভেবে দেখুন, কী সাংঘাতিক ঘটনা! অন্যান্য ছাত্র সংগঠন যেখানে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মগজে রাজনীতি না ঢোকাবার কাজ করে নীতিগতভাবে, এজন্যে প্রাইমারিতো দূরের কথা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও সংগঠন তৈরি করে না। সেখানে শিবিরের কসাইরা প্রাইমারি স্কুলে ঢুকেছে সামপ্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপণ করতে, কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের রাজাকার-নাগরিক বানাতে, দেশদ্রোহী-জঙ্গী-বাংলা ভাই বানাবার মন্ত্রণা দিতে। গতরাতে (৮/২/০১২) টিভির খবরে দেখলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। উভয় পক্ষে গুলি বিনিময় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহ ৩০ জন ছাত্র আহত হয়েছে এবং দু'জন নিহত হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উভয় সংগঠন পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। টিভির সংবাদ পরিবেশক তার বিবৃতিতে বলেছেন যে, গোপন পদ্ধতিতে শিবিরের ক্যাডারদের জেহাদী বই বিতরণে বাধা দিলে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ বাঁধে। দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ে কী নিয়ে তর্ক বেঁধেছিলো, তা জানা যায়নি। টিভির প্রতিবেদন শুনে বুঝেছি, দু'সংগঠনের দু'ছাত্রনেতার মধ্যে জেহাদী বই বিতরণ নিয়ে তর্ক জমে ওঠে। তারপর উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয়, গুলি বিনিময় হয়। সারা দেশে হিযবুত তাহরী ও জামায়াতের ক্যাডাররা উস্কানিমূলক জেহাদী বই বিলি করছে। ২০০৮ সালে পল্টনে লগি-বৈঠার যে বিপ্লব ঘটেছিলো, তখন বায়তুল মোকাররম মসজিদ দখল করে জামাতীরা হুকুম দিয়েছিলো, 'গুলি ছোড়ো, বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ো।' জামায়াত যদি এমনি বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ার রাজনীতি বহাল রাখে, বিএনপি সমর্থন দিয়ে যেতে থাকে তাহলে অনিবার্যভাবে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগবে। জামায়াত কিন্তু প্রচলিত গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের সঙ্গে সহ অবস্থানে বিশ্বাস করে না, বাংলাদেশের সংবিধান মেনে চলে না, শহদী মিনারে যাওয়া মেনে নেয় না, রবীন্দ্রনাথ রচিত জাতীয় সঙ্গীত বরদাশত করে না, মুক্ত চিন্তা সহ্য করে না, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে না। অর্থাৎ বাংলাদেশই মানে না। তাহলে তারা গৃহযুদ্ধ না বাঁধিয়ে কিছুতেই থামবে না। অতএব, সাধু সাবধান।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×