somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল জ্যোৎস্নায় নীল বেদনা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশে এক ফালি চাঁদ ভেসেছে। এই আষাঢ-শ্রাবণেও চাঁদটাকে মেঘ বারবার আপন করে বুকে পেতে ঢেকে দিতো। কিন্তু চাঁদটার বোধ করি মেঘটাকে একটুও পছন্দ ছিল না। তাই চাঁদটা মেঘকে ফেলে প্রতিনিয়তই ছুটে চলতো রাঙ্গা রূপ নিয়ে অন্য কোন রাজ পুত্রের খোঁজে, আকাশের অন্য কোন কোনে। দিনের পর দিন জ্যোৎস্নাকন্যার অবহেলা পেয়ে মেঘ বালকের মনটা ভিষন খারাপ থাকতো। থাকবেই না বা কেন? প্রিয় কারো অবহেলা কতদিনই বা সহ্য করা যায়। সহ্যও হয়নি মেঘ বালকের। নিবিড় করে না পাওয়ার দহন গোপন করলেও, মন খারাপের বাষ্প গুলো চাপা রাখতে পারেনি। ক্ষণে ক্ষণে কান্না করতো। কখনো আবার রাগে-দুঃখে-অপমানে চারপাশ লন্ড ভন্ড করতে চাইতো। মেঘ হওয়াটাই কি তার দোষ ? মেঘ হয়েছে বলেই তার কি চাঁদকে নিবিড় করে পাওয়ার ইচ্ছে জাগবে না? কান্নাও যে একদিন শুকিয়ে যায়। মেঘবালকের কান্নাও শুকিয়ে গিয়েছিলো। হতাশা আর বেঁচে থাকার বিতৃষ্ণাকে সঙ্গে নিয়ে মেঘবালক ফেরারী হয়েছে হিমালয়ের ওপারে। এখন ভাদ্র মেঘ জ্যোৎস্নাকন্যার মুখোমুখি হয়েছে। কাশফুল আর সাদা রঙে সাজাতে চেয়েছিল জ্যোৎস্নাকন্যার সংসার। সাড়া দেয়নি জ্যোৎস্নাকন্যা। সে এখন মেঘবালকের পথচেয়ে । কেমন নিঃসঙ্গ লাগছে। কোন মেঘ বালকের ভিড় নেই, উত্যাক্ত করার কেউ নেই। চাঁদটা চেয়েও ছিল বোধ হয় এমন একটা জীবন। অথচ সেটা পেয়েছে বলেই শরৎ জ্যোৎস্নাকন্যাকে কেমন নিঃসঙ্গ লাগছে !! একা থাকার যন্ত্রনায় কেমন নীল হয়ে আছে । রাঙা রূপের জ্যোতি ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে প্রায়শ্চিত্য করছে।

এসবই ভাবছিলো নওমি নীল জোৎসনায় স্নান করতে করেতে। বর্ষার মেঘ যেমন চাঁদকে একা করে চলে গেছে , অভিমানি এরিখওতেমনি নওমি কে একা করে কোন এক অভিমানে চলে গেছে না ফেরার দেশে। আর ফিরে আসেনি। মাঝে মাঝে এরিখ বলতো কোন দিন যদি একা লাগে তবে ভেবো আমার অস্তিত্ব তোমার পাশেই আছে। রূপালী জ্যোৎস্না রাতে আমাকে ভেবেই জ্যোৎস্নাকন্যা গন্ধ গায়ে মেখো। তাইতো, নওমি তো একা নয়। আকাশে শরতের ভরা নীল পূর্ণিমা। পাগল করা চাঁদনি রাত এরিখ হয়ে তাকেই যেন ডাকছে। এইতো জ্যোৎস্নার আলো হয়ে ছোঁয়ে যাচ্ছে তার, চোখ, চোখের পাপড়ি, গাল, নাক ,ঠোট, চুল, তার সর্বাঙ্গ। তার অস্তিত্ব হাতে হাত রাখছে নওমির। এইতো স্পর্শ পাচ্ছে। এখন আর জ্যোৎস্নাকেও একা মনে হচ্ছে না । মেঘ বালক নেই তাতে কি হয়েছে, হাজরো প্রণয় চোখ আড়াল করে চাঁদটার কি সাধ্য আছে যে একা হবে?

তিন বছর আগে সেদিনও আজকের মত ব্লু মুন ছিল আকাশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণিল দিন গুলো পেরিয়ে তারা সবে ঘর বেধেছে। এরিখ একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে ঢুকেছে। নওমি একটা কলেজে ফিজিক্স পড়ায়। ভালই কাটছিলো দুজনের ছোট সংসার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছন্নছাড়া পাগলামি ভালোবাসা গুলো ঘর পেয়ে বেশ আহ্লাদি হয়ে উঠেছিলো। কি পাগলের মতই না ভালবাসতো এরিখ। নওমিও উন্মোখ হয়ে থাকতো সে ভালোবাসার ছোঁয়া পেতে। সারাদিন দুজনেই কাজে ব্যস্ত থাকতো। সন্ধা হলেই ভালবাসারা পাখা মেলতো। কখনো চাঁদনি রাতে, কখনো লাইট নিভিয়ে মোমের আলোতে উড়ে যেতো কল্পিত কোন স্বর্গ রাজ্যে। হাতে হাত রেখে তাদের সেই চলার পথে হঠাৎ একদিন নওমি জানালো, সে মা হতে চলছে। শুনে এরিখের সে কি উৎফুল্লতা। সেই স্মৃতি আজও নওমিকে আচ্ছন্ন করে রাখে। খবরটা শুনার পর মিথ্যে বাহানায় অসুস্থতার অযুহাত তুলে তিন দিন অফিসে যায়নি এরিখ। চতুর্থ দিন নওমির পিড়াপিড়িতে অফিসে যেতে হলো। অফিস থেকে ফেরার পথে প্রতিদিন এরিখ নওমির জন্য চকলেট নিয়ে আসতো। রাতে খাবার শেষে মোমের আলোয় মুখোমুখি বসে এরিখ সে চকলেট নওমির মুখে পুরে দিত। তারপর হারিয়ে যেতো বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতের মত কোন এক অচেনা জগতে। সেদিন সে ব্লু মুন রাতে নওমি যখন চকলেট চাইলো, এরিখ যেন বৈদ্যতিক ধাক্কা খেলো। চকলেট কিছুতেই আর খোঁজে পেলো না। নওমি কপট অভিমানে গাল ফুলালো। আজকের এই বিশেষ রাতে কেন এরিখ এরকম একটা ভুল করবে? এরিখ বোঝাতে চাইলো সে চকলেট কিনেছিল। হয়তো কোথাও পড়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু নওমি কিছুই বোঝতে চায় না । আজ এই রাতে তার চকলেট চাই ই চাই। ব্যস্ত হয়ে এই রাতেই এরিখ বেরিয়ে গেলো দোকানে। নওমি তাকে ফেরাতে যাযনি। বরং মনে মনে চাচ্ছিলো আজ এই বিশেষ রাতে এরিখ তার জন্য এতটুকু করুক। নওমির মনে হচ্ছিলো এতটুকু আদর সে চাইতেই পারে। বেশ কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলো। অধৈর্য হয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালো নওমি। কেমন যেন অসস্তি লাগছিল তার। বেলকনিতে দাঁড়াতে নিচে একটা শোরগোল শুনতে পেলো। পাশের ফ্লেটে একজন বলে গেল এরিখ একসিডেন্ট করে রাস্তায় পড়ে আছে। হাসপাতালে ডাক্তররা মৃত ঘোষনা করলো। নওমির কেবলই মনে হতে লাগছিলো এরিখ তার জন্যই মারা গেলে। সে কেন এর রাতে এরিখকে বাইরে যেতে দিলো। এরিখ ছাড়া তার কেবলই চারপাশ শূণ্য লাগছিল। বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছে টুকু ধিরেধিরে নিঃশেষ হচ্ছিল। সেদিন রাতেই পৃথিবীতে এলো অভ্র। এরিখের অস্তিত্ব। অভ্রকে বুকে নিয়ে আজও নওমি বেঁচে আছে। থাকতেই হবে। এখন তার কাছে বেঁচে থাকা মানে শ্বাস নেয়া। মানসিক মৃত্যু এরিখের সাথে সে রাতেই হয়ে গেছে। তবু সে বাঁচতে চায় অভ্র'র জন্য। চোখ আর কিছুতেই বাঁধ মানছে না। চোখ ভেঙ্গে নেমে এলো কান্না। জানালার ফাঁক গলিয়ে এসে অভ্রর মুখে জ্যোৎস্না খেলা করছে। নিজেকে সামলে নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো নওমি। ওমনি যেন কান্না তাকে আরো জোরে পেয়ে বসলো। অভ্রকে ছেড়ে বেলকনিতে গেলো। ছলকে উঠা কান্নাকে এখন তার থামানোর চেষ্টাও করলো না। ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়া নীল জোৎসনায় তার নীল বেদনা গুলো মিশে যেতে লাগলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:২২
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×