somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মুরগী পোষা আর ছেলেবেলা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার স্কুল ছিল মিরপুর ১১ নাম্বার এ। মিরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুল থেকে হেটে গেলেই ১১নাম্বার বাজার। তো আমারে স্কুল থেকে আনার সময় আম্মু আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ১১নাম্বার বাজারে যেত টুকটাক কেনাকাটার জন্য। এমনি একদিন হঠাত দেখি বাজারের মেইন রাস্তার পাশে ছোট ছোট বাচ্চা মুরগী বিক্রী হচ্ছে। আম্মুরে টান দিয়ে নিয়ে গেলাম। কি সুন্দর বাচ্চাগুলা। হলুদ রঙের নাদুস নুদুস। এত সুন্দর কিউট বাচ্চাগুলার পিস মাত্র ৬টাকা। আম্মুর কাছে আবদার ধরলাম কিনে দিতে। প্রথমে রাজি হয় নাই, ভাল করে চেপে ধরতে কিনে দিল একজোড়া ছানা। আমার খুশি দেখে কে।



বাসায় এনে একটা কারটন কে মুরগীর ছানা দুইটা্র ঘর বানালাম। খাবার দিলাম। সারাদিন বাচ্চা দুইটার পিছনে ছিলাম। খেলা পাগল আমি খেলতে না গিয়ে বাচ্চা মুরগি দুইটাকে বারান্দায় ছেড়ে দিয়ে অদের সাথে খেল্লাম। রাতে কারটনটা আমার খাটের নিচে রাখলাম। ঘুমায় গেলাম। ভোর বেলায় স্কুল এ যাবার জন্য আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংগলো। আম্মুর গলা ছিল অন্যরকম আদর মাখা। বুঝলাম SOMETHING WRONG। উঠে শুনলাম বিড়ালে মুরগী খেয়ে ফেলসে। আমার চোখে পানি চলে আসলো। স্কুলএ যেতে চাইলাম না। আম্মু বলল আবার কিনে দিবে। তাও যেন যাই। সেদিন আবার ৪টা কিনে নিয়ে আসলাম।



হারামজাদা বিলাই এই ৪টাও খেয়ে ফেলল। নতুন কারটনের চারিদিকে রড, টড দিলাম তাও কেমনে বিলাই এত শক্তি পাইলো বুঝলাম না। সকালে উঠে দেখি একটা মুরগী ছানার ঠ্যাং পড়ে আসে। আবার চোখ থেকে পানি ঝরল। এবার আম্মু বলল খাচা কিনে দিবে। খাচাসহ আরো ৪টা ছানা কিনে ফিরলাম। আমার তাও ভয় করতেসিল। যাই হোক ভালয় ভালয় রাত পার হল। আমিও হাসি মুখে স্কুল এ গেলাম। এভাবে কয়েকদিন গেল। বাচ্চাগুলার পাখনা সবে সাদা হইসে। তখন আমি দিনের বেলা বাচ্চাগুলারে ছেড়ে দিতাম বাসার মধ্যে। হথাত একদিন দুপুরে আর পাই না। কই কই? বুঝালাম আবার বিড়ালে ধরসে। কষ্ট কারে কয়, বিলাইটারে যে কি কমু বা করমু নিজেও বুঝতেসিলাম না। ভাঙ্গা মন আর হৃদয় নিয়া অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলাম। :(( :((



মাঝখানে আবার দুইটা কিনলাম। কিন্তু যে দুইটা কিনলাম এইগুলার সাইজ অনেক ছোট। তখন আবার ছিল শীতকাল। যেদিন কিনসি সেদিনই মারা গেল ঠান্ডায়। নাহ এবার আর কষ্ট লাগলো না। লাগবে কেমনে, হৃদয়তো আগেই পাথর হয়ে গেসে। :|



মুরগীছানা পালার ইচ্ছা চলে গেল। আমার আম্মুও হাফ ছেড়ে বাঁচল। হঠাত একদিন এলাকার বাজারে দেখলাম মুরগীর ছানা বিক্রী হচ্ছে। পকেটে ২০টাকা ছিল। কোনকিছু চিন্তা না করেই আবার ১২টাকা দিয়ে দুইটা কিনলাম, ৪টাকার খাবার আর ২টাকার মুরগীর কি জানি ভিটামিন ওষুধ কিনলাম। বাসায় আন্তেই আম্মু চিল্লাচিল্লি শুরু করল। আমি পাত্তা দিলাম না।



এইবার আর বিলাই মামা সুযোগ পায় নাই কিছু করার। মনের সুখে পালতে লাগ্লাম। বড় হইল কিছুটা। এই মুরগীগুলা সহজে বড় হয় না। সময় লাগে। আমার মনে হয় ২-৩মাস সময় লাগসে। মুরগীগুলারে বাসায় ছাইড়া দিতাম। যত বড় হইতে লাগল হাগুর পরিমাণও বাড়তে লাগল। তাই আম্মুও চিল্লাচিল্লি দ্বিগুণ হারে বাড়ায় দিল। পরে আম্মুর চিল্লাপাল্লায় অতিস্ট হয়ে আব্বু আমারে offer দেয় দুইটা মুরগী তার কাছে বিক্রী করতে আমাকে 300টাকা দিবে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম। offer টা লোভনীয় ছিল। কিন্তু আমি রাজি হইলাম না। আব্বু অনেকটা জোর করেই আমার হাতে ৩০০টাকা ধরায় দিল। আর আমার অনুপস্থিতিতেই মুরগী দুইটা জবাই দিয়ে দিল। আমি খবর পেয়ে আমার দুই ফোটা জল ফালাইলাম। মেজাজ খারাপ করে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলাম।



সারাদিন খাইলাম না। পরে আম্মু তার আদর দিয়ে আবার ঠিক করল। আমার মুরগী আমি মুখেই দিলাম না। আসলেই কস্ট পাইসিলাম অনেক। এতদিন ধরে পাল্লাম। মায়া পড়ে গেসিল একটা।



এর বহুদিন পর কলেজ এ থাকতে আবার এক জায়গায় দেখলাম মুরগী বিক্রী হইতেসে। আমি কিনলাম। তার মধ্যে একটা মুরগী হারায় গেল, মানে পালায় গেল। আরেক্টারে আমার দুস্ট ভাতিজা ক্রিকেট বল বানাইয়া খেলল। কষ্ট রে কষ্ট। :'(



ও ভাল কথা। ওই বিলাইরে আমি ছাড়ি নাই। একদিন লাইন এ খেলতেসিলাম। একটা বিল্ডিং এর উপর দেখ হারামজাদা পা চাটতেসে। একটা ইট নিয়া মারলাম। সোজা লাগসে চোখে। শালারে কানা বানাইয়া ছাড়সি। B-)
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×