somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটোর এক্সপ্রেস (এ জার্নি ফ্রম নাটোর টু দিনাজপুর)

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না !!!!!! নাটোরের বনলতা সেনকে খোঁজার জন্য নয়, নির্ভেজাল অফিসিয়াল কাজের উদ্দেশ্যে আমার গন্তব্য ছিল নাটোর। কিন্তু এই নাটোর ভ্রমণ যে আমার জন্য জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে তা আমি যখন ধুমকেতু ট্রেনে রওনা দিই তখন কি ঘূর্ণাক্ষরে বুঝতে পেরেছিলাম!!!! (যারা ট্রেনের গন্তব্য সম্পর্কে ধারণা আছে তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, কি ব্যাপার বলল যাবে নাটোর তবে রাজশাহীর ট্রেনে কি করে মেয়েটা!!) হ্যাঁ ছোটবেলা থেকে আমার অ্যাডভেঞ্চারের অদম্য আগ্রহ, তবে তা শুধুমাত্র ঘোরাঘুরির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেডক্রস এ্যান্ড রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কল্যাণে ট্রেনিং এর উদ্দেশ্যে আমার বরিশাল, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা অনেক জায়গায় যাওয়ার সুযোগ হয়, তাই এবার ভাবলাম এই সুযোগে উত্তরবঙ্গ একটা ট্যুর দিয়ে আসি। অনেকটা কইয়ের তেলে কই ভাজার মতো। যে টাকা পাব সেই টাকায় কাজও হবে সেইসাথে ফ্রিতে ঘুরাঘুরিও হয়ে যাবে!!! এইজন্য ভাবলাম প্রথমে রাজশাহী ঘুরে তারপর নাটোর যাব। কারণ রাজশাহী থেকে নাটোর মাত্র ১ ঘন্টার পথ। তাই ধুমকেতু ট্রেনের এসি বগিতে আয়েশ করে বসলাম আর ভাবছিলাম মানুষ যে এই গরমে এসি ছাড়া কিভাবে যাতায়াত করে......আমিতো ভাবতেই পারিনা (এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন মোটা বেতনের চাকুরী পাওয়ার পর আমার তো এসি ছাড়া চলেনা অবস্থা......ভুলতেই বসেছিলাম এই আমি খরচ বাঁচানোর জন্য কত কসরৎ করে নরমাল বা লোকালে যাতায়াত করতাম)। বিধাতা যেন আমাকে তা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য উপর থেকে মুচকী মুচকী হাসছিলেন!!!!
ট্রেন জীবনানন্দ দাশের মাঠ-ঘাট, বন-বাদাড়, পুকুর-নদী পেড়িয়ে চলছে........... আর আমি বিভোর হয়ে এই বাংলার রূপ দেখছি। রোজা রাখার জন্য সেহেরী খেয়ে ট্রেনে উঠলাম, ট্রেন ছিল সকাল ৬.৩০ কিন্তু সেই ট্রেন ছাড়লো ১০.০০টায় (কথায় বলে ৬টার ট্রেন কয়টায় ছাড়ে.......উত্তরবঙ্গের ট্রেনের বেলায় এই কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য)। আর এসি বগির টিকিট না কাটলেও চলবে কারণ বেশ কিছু সিট খালি থাকে, তাই যেকেউ নরমালের টিকিট কেটে এসি বগিতে এসে একটা লম্বা ঘুম দিতে পারবেন, শুধু টিকিট চেকার ধরলে সব দাঁত দেখিয়ে একটা নির্ভেজাল হাসি দিয়ে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে ব্যাস আবার ঘুম অবাক হয়ে খেয়াল করলাম ট্রেনের যুবতী যাত্রীদের মধ্যে দেখি সব একবারে সুন্দরীর চুড়ান্ত!!!! মনে মনে ভাবছিলাম রাজশাহীর মেয়েরাতো অনেক সুন্দরী আর খুব স্মার্ট। যাইহোক আফসোস হলো ট্রেনের অন্য বগির যুবকদের জন্য যারা এই সুন্দরীদের শুধু এক পলক দেখার জন্য এক বগি থেকে আরেক বগিতে বাথরুমে যাওয়ার জন্য আসা যাওয়া করতো!! কেন এ কথা বলছি ভাবছেন..... আমার এই জীবনে অনেকবার ট্রেনে যাতায়াত করার অভিজ্ঞতা আছে, সেই অভিজ্ঞতায় দেখেছি কি এক অদ্ভ’ত কারণে ১৫ থেকে ২৫ বৎসর বয়স্ক ছেলেরা ক্রমাগত ট্রেনের এক বগি থেকে আরেক বগিতে অকারণে কিন্তু ভাবটা এমন কোন জরুরী প্রয়োজনে আসা যাওয়া করছে!!!! প্রত্যেক বগিতে বাথরুম থাকা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে দূরের বগির বাধরুমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, বিশেষ করে যে বগিতে সুন্দরীদের আনাগোনা বেশি!!!! পরে আমি আমার এক ভাইকে এর অর্ন্তনিহিত কারণ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম, তখন ও আমাকে বলল বিশেষ করে যখন একই বয়সী ছেলেরা ট্রেনে ভ্রমণ করে তাদের মধ্যে গ্রুপ ভাগ করে দেয়া হয় এক এক বগিতে যারা গিয়ে খোঁজ নিবে কোন বগিতে কেমন সুন্দরী মেয়ে আছে এরপর সব তথ্য এক করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সুন্দরী মেয়ের বগিতে কতক্ষণ পরপর কারা কারা গিয়ে রাউন্ড দিবে। শুধুমাত্র এক পলক দেখা, একটু চোখাচুখি আর যদি এক চিলতে মুচকী হাসি পাওয়া যায় তবেতো দিল ধক্ ধক্ ।
যাইহোক আমি প্রসঙ্গের বাইরে চলে যাচ্ছি আবার ধুমকেতু ট্রেনে ফিরে আসি। কোথায় ছিলাম...... আহ্ তো আমার ক্ষুধায়তো পেঁট চোঁ চোঁ করছে, কি করব বুঝতে পারছিনা , একবার ভাবলাম অ্যাটেন্ডকে ডেকে কিছু একটা অর্ডার করব নাকি আবার ভাবলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, রোজার দিনে এই এক কষ্ট রোজা রাখলেও কষ্ট আবার না রাখলেও কষ্ট!!!! শেষে টাঙ্গাইল যাওয়ার পর মানুষ যখন একটু খালি হলো তখন আস্তে আস্তে লজ্জিত হয়ে অ্যাটেন্ডনকে বললাম খাবার দাবার কিছু আছে কিনা সে এক গাল হেসে এমন জোরে জোরে খাবারের মেন্যু বলা শুরু করল রীতিমতো বিব্রত বেধ করলাম। শেষে যে খাবার এনে দিল তা দেখে আমার ক্ষুধা আরো তীব্র হয়ে গেলো,,,, না মজাদার খাবার দেখে নয় এক সপ্তাহ আগের শুকিয়ে চিমসে হয়ে যাওয়া চিকেন ফ্রাই আর লোহার মতো শক্ত আদার গন্ধময় কাটলেট আর তারো বেশ কিছুদিন আগের টোস্ট দেখি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এদিকে খাবার আসার আগে পানি খেয়ে ইতিমধ্যেতো রোজা ভেঙ্গে ফেলেছি, কি করব বুঝতে পারছিলাম না এদিকে পেটে রাক্ষুসে ক্ষুধা ওদিকে অখাদ্য মেন্যু। যা থাকে কপালে বলে কাটলেট মুখে দিয়ে কামড় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছি ভাবছি আমাকে পারতেই হবে সে মূহূর্তে দেখি এক পুচঁকে ছেলে ৬-৭ বছর হবে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকী মুচকী হাসছে আর ওর মাকে দেখাচ্ছে। আমিতো পুরো বিব্রত, কোনোরকমে যুদ্ধ করে যা পারলাম খেলাম তারপর দেখি আরেক বিপদ ওয়েটার কে আমি যা যা আনতে বলেছিলাম ও তার ডবল ডবল নিয়ে এসেছিল, এখন বলে সবগুলোর দাম দিতে হবে আমি বললাম তুমি বেশি কেন এনেছ আমি কি তোমাকে আনতে বলেছি?? তার ঐ এক কথা যাক্ শেষে দফারফা হলো।
ট্রেনে ভ্রমণ করলে একটা মজার জিনিষ সবচেয়ে উপভোগ করি তা হলো এক এক স্টেশনের নাম, কি যে অদ্ভূত সব নাম!! মনেও থাকেনা নামগুলো। ট্রেন এক এক স্টেশন পার হয়ে যেতে যেতে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে উঠল। ট্রেনটি খুবই আস্তে আস্তে চলছে, আমি ভাবলাম বুঝি যমুনা সেতুর সোন্দর্য্য দেখার জন্য এতো ধীরে যাচ্ছে কিন্তু পরে এক সহযাত্রী বলল, সেতুটি যখন তৈরী করা হয় তখন ট্রেন যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিলনা কিন্তু পরে ট্রেন চলাচলের সিন্ধান্ত নেয়া হয়। যার ফলে সেতুটি খুবই ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে উঠে সে ঝুকিঁ কমানোর জন্য এতো ধীরে ট্রেন চালানো হয়, এখনি নাকি মাঝে মাঝে ফাটল ধরেছে। হায়রে বাংলাদেশের নীতি!!!!!! (যদিও তথ্যগুলো যাত্রীসকলের কাছে শোনা)। আমি ভাবলাম ধুর ফাটল ধরুক আর না ধরুক আমার কী আমার সময় সেতু না ভাঙ্গলেই হলো, এতা তাড়াতাড়ি এই ধরাধম ত্যাগ করার কোন ইচ্ছা আমার নেই। যমুনা সেতুর মধ্যেবর্তী জায়গায় চর উঠেছে, এতো অদ্ভূত সুন্দর!! চারদিকে পানি আর মাঝে একটা দ্বীপ, এতটুকু দ্বীপে আবার ধানের চাষ হচ্ছে। কতজন হবে জনসংখ্যা ??? ৫০ বা ১০০ এর কাছাকাছি!!!! মানুষ এমন এক জাতি বিধাতা তাকে সব ধরণের পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা দিয়েছে আমাদের সাইকোলজির ভাষায় যাকে অভিযোজন বলে। ঝড়-বৃষ্টি, নদীর জোয়া-ভাটার মধ্যে চলছে তাদের ক্রমাগত অভিযোজন প্রক্রিয়া!!! এরমধ্যেই চলছে ঘুম, খাওয়া, জীবিকার তাগিদে কাজ করা আর অপ্রতিরোধ্য যৌনতা, যার ফসল হচ্ছে চরের ছোট ছোট শিশুরা। এদর ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউ ভাবার নেই, ভাবার অবকাশ নেই তাদের মা-বাবাদেরও, কারণ এত ভাবার সময় কই ভোর হলেই তারা জীবিকার তাগিদে নদীর বুকে ভেসে বেড়ায় তারপর দিন শেষে যা পাওয়া যায় হয়তোবা সামান্য ছোট মাছ, লাউশাক আর এক গামলা ভাত সাথে কাচা মরিচ আর রাতে অদম্য যৌনতা।


( চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×