somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিকল্পিত আবাসন দিনবদলে সত্যিকারের মাইলফলক

১৫ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মো: আহরার : সিইও, মাওলানা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি

আশির দশকে কেউ তেমন গুরুত্বের সাথে ভাবেনি বেসরকারি খাতে এদেশে আবাসন ও নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠবে। পাকা বা বহুতল ভবন বলতে তখন সরকারি অফিস-আদালত, কোয়ার্টার ও অন্যান্য অবকাঠামোকেই বুঝাত। এর বাইরে ছিটেফোঁটা পাকা দালানকোটা, যা গড়ে উঠত সবই সচ্ছল বিত্তবানদের বাসস্থান। মধ্য-সত্তরের আগে এ দেশের নারীসমাজ কর্মের প্রয়োজনে অন্দরমহলের চৌকাঠ ডিঙাবে এটা যেমন অকল্পনীয় ছিল, তেমনি অকল্পনীয় ছিল ষড়ঋতুর এই কাদামাটির শহর-জনপদের মধ্যে আকাশছোঁয়া বহুতল ভবন তৈরি হবে, হবে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘন জন-অধ্যুষিত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক শঙ্কা ও ভয়। কিন্তু মানুষের হাত দুটো যখন কর্মীর হাতিয়ার হয়ে ওঠে তখন ভয়ের স্থলে ওঠে জয়ধ্বনি। মধ্য আশিতেও যারা ভাবতে পারেননি বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে, তারা এখন সবিস্ময়ে দেখছে, বাংলাদেশ শুধু ঘুরে দাঁড়ায়নি। বলিষ্ঠ পদক্ষেপে সামনের দিকে এগোচ্ছে ।
এ দেশে যত আবাসন ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া কিছুটা দুরূহ হলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বল চলে যে, ঢাকা-চট্টগ্রম বড় বড় শহর ছাড়িয়ে এ শিল্প এখন দেশের ৬৪টি জেলা ও উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। আবাসন শিল্প এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। এ শিল্পে অতি দক্ষ ও কর্মঠ শ্রমিক মিলিয়ে এক বিশাল টেকনিক্যাল বাহিনী কর্মরত। যার সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ। উচ্চ মজুরির এ শিল্প খাতে কর্মী-শ্রমিকেরা যেমন ভালো আয় পাচ্ছেন, সাথে সাথে লোহ-ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, কাচ, কাঠসহ ইটপাথর ও বালুর এক বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। যার সাথে জড়িত প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। আবাসন ও নির্মাণ শিল্প খাতকে ঘিরে অন্য যেসব উৎপাদনমুখী শিল্পের বিকাশ ঘটেছে তাতে যে শুধু বিশাল অঙ্কের পুঁজি বিনিয়োগ হয়েছে তা নয় আমাদের চির অবহেলিত শ্রমিকের আয়-উপার্জনও এখন একটি যৌক্তিক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। শ্রমের বাজারই শুধু বাড়েনি, শ্রমের মূল্য বেড়েছে লক্ষণীয়ভাবে। আশি-নব্বই দশকে একজন দক্ষ নির্মাণশ্রমিক দৈনিক মজুরি পেতেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অদক্ষ শ্রমিক ১০০ টাকা। এখন দিন বদলে গেছে। বর্তমানে একজন দক্ষ নির্মাণশ্রমিক তথা রাজমিস্ত্রির বেতন ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। গড়ে ৬০০ টাকা অর্থাৎ গড়ে সাত ডলার বা মাসিক ২২০ ডলার এবং বছরে দুই হাজার ৬৩৪ ডলার। অথচ এক দশক আগেও এ দেশের গড় মাথাপিছু বার্ষিক আয় ছিল ৫০০ ডলার।
এ শিল্প শুধু যে শ্রমিকদের শ্রমের মূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে চলেছে তা নয়, এ দেশের এক বিরাটসংখ্যক উচ্চপ্রযুক্তিবিদ্যার মেধাবী তরুণদের চৌকস কর্মীতে পরিণত করেছে। প্ল্যানিং ডিজাইনিং, মনিটরিং, নির্মাণ ও সমন্বয় প্রভৃতি কাজের ব্যবস্থাপনায় যারা নিয়োজিত তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি এখন বিশ্বমানের তাই তাদের মজুরিও বিশ্বমানের। আমাদের তরুণ মেধাবী প্রকৌশলী, প্লানার, ডিজাইনার, ব্যবস্থাপক, বিশেষজ্ঞদের আর বিদেশ পাড়ি দিয়ে চাকরি খোঁজার বড় একটা দরকার আছে বলে মনে হয় না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বা মফস্বল যেকোনো শহরের দিকে তাকান না কেন, দৃষ্টিনন্দন, সুরম্য যে বহুতল ভবন নজরে পড়ছে, এসব অবকাঠামো শুধু নির্মাণের দিক দিয়েই নয়, ডিজাইন ও সাজসজ্জার দিক দিয়েও সর্বাধুনিক ও নবীনতম।
৫৫ হাজার বর্গমাইলের ুদ্র বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস। মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ ২০ ডেসিম্যালেরও কম। এমন ভয়াবহ ভূমি সঙ্কটে, আবাসন নির্মাণে আমাদের কুশলী ও বিবেচক হতেই হবে। ভূমির সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা করতে হলে বাংলাদেশের সব জনপদকে আজ হোক, কাল হোক একটি সুসমন্বিত আবাসন নির্মাণের চকে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে। যেখানে-সেখানে যার যেমন ইচ্ছে আর বাড়িঘর নির্মাণ করে ভূমির অপচয় করা যাবে না।
অল্প জমিতে কিভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বহু মানুষের বাস নিশ্চিত করা যায় তা এখন শুধু পরিবারের একার মাথা ব্যথা নয়, দেশ ও জাতির মাথা ব্যথা। আজকের আবাসন নির্মাণ শিল্পে দেশ ও জাতির সেই মাথাব্যথার উপশম দিতে অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষমাণ।
বাংলার মেহনতী মানুষের সোয়া কোটি সদস্য আজ অভিবাসনে, পৌনে এক কোটি দরিদ্র ঘরের জায়া-জননী-ভগ্নি আজ পোশাক শিল্পে। আর বাংলাকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার যে বিশাল আবাসন ও নির্মাণকাজ চলছে, তার মূল চালিকাশক্তিও ওই জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ। বাংলার ভাগ্যের সাথে আজ জড়িয়ে আছে তিনটি প্রধান খাতের চার কোটি মানুষ। সুতরাং এ দেশকে আর কোনো কালো হাত দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের আর বাংলাদেশ বির্নিমাণের প্রধান কাণ্ডারি এ দেশের খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমবেত শক্তি যে কোনো বিপ্লব ও পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট।

http://www.dailynayadiganta.com/?p=3287
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×