somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপাল ভ্রমণ এবং নেপাল থেকে দার্জিলিং - ৩

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে পাহাড়ী পথে যে মাইক্রো বাস গুলো চলে সবই ব্রান্ডনিউ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির প্রতিটি চাকায় গিয়ার থাকে। নতুন গাড়ীগুলো কিছুদিন পরে পুরানো হয়ে গেলে আর এই রাস্তায় চালানো যায়না। এসব কথা আমাদের গাড়ির ড্রাইভার আমাদের বলছে।









আমি খুব আনন্দে আছি শুধু কথা বলা নিয়ে। আজ আমি মনের সুখের বাংলায় কথা বলছি, বাংলায় কথা শুনছি। যা গত পনের দিনে আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

গাড়ি সাই সাই করে পাহাড় বেয়ে পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরি রাস্তা দিয়ে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। আমরা সবাই প্রাণ ভরে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। পাহাড়ের কোল ঘেষে তৈরি রাস্তা গুলো দেখে অবাক হচ্ছি এগুলো কিভাবে তৈরি করা হলো। রাজু বলল, এগুলো সব ব্রিটিশদের অবদান। ব্রিটিশরা না হলে এই রাস্তা এই দার্জিলিং শহর কিছুই হতোনা। ছিদ্দিক ওর নামটা যাই হোক ওকে এখন আমি ছিদ্দিক বলেই বলব যার একটাই গুণ কৌতুক বলে কিংবা হাস্যরসাত্তক কিছূ বলে আমাদের হাসিতে ফাটিয়ে দেয়। অন্যেরা হাসতে হাসতে লাফাতে লাফাতে বলে ফাটাফাটি বলেছো আবার একটা কিছু বল। ছিদ্দিক সুযোগ করে এলাল্ড জোক বললেই আবার লাফালাফি শুরু হয়ে যায়। এলাল্ড জোক একটা বলেই ছিদ্দিক অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে যাতে আমি ওই সময় তাকে কিছু বলতে না পারি। আমার বড় বড় দাড়িগুলো আমাকে ধর্মীয় দৃষ্টিতে শ্রদ্ধাশীল করে রেখেছিল। এলাল্ড জোকের হাসি শুনে রাজু বলল, বেশি হাসাহাসি বন্ধ করে এবার আল্লাহ আল্লাহ শুরু করো সামনে বিপদ আছে। আমরা ও দেখলাম আমাদের গাড়ী এখন এমন খাড়া ভাবে উপরের দিকে উঠছে যে মনে হয় যে কোন সময় উল্টে পিছনের দিকে পরে যাবে। আমরা সত্যি সত্যি মনে আল্লাহ আল্লাহ জিকির শুরু করে দিয়েছি। এতক্ষণ এত হাসাহাসি অথচ এখন সবাই চুপচাপ। একবার জানালা দিয়ে তাকাতে চেষ্টা করলাম। আমার মাথা ঘুরে উঠলো। মনে হয় যে কোন মুহুর্তই একটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। চোখ বন্ধ করে রাখলাম। রাস্তার খাড়া ভাব আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। নেপালের পাহাড়ী রাস্তায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা না থাকলে এঅবস্থা আমার জন্য আরও কষ্টকর হতো। গাড়ী এখন ঝুকিমুক্ত ভাবে চলছে। আমরা সবাই সাভাবিক হলাম। বাইরের দিকে তাকাচ্ছি। প্রকৃতির অপরূপ রূপ যেন কত অনন্দকর তাই দেখছি। দেখছি আমাদের পাশদিয়েই চলছে ন্যাড়ো এঙ্গেল রেল। মনে হলো এই রাস্তায় রেলে চড়া হয়তো আরও ভয়ঙ্কর। হাত বাড়িয়ে বাইরের বাতাস স্পর্শ করতে চাইলাম। ঠান্ডা শিতল বাতাস আমার হাত স্পর্শ করে গেল। একটা শিহরণে মনটা নেচে উঠলো। কেউ কারো সাথে কথা বলছি না। সবাই নিজের মতো করে উপভোগে ব্যস্ত। ছিদ্দিক মনে হয় কখনো চুপ করে থাকার ছেলে নয় কোন না কোন গল্প করে কাটানো যার সভাব সেও চুপ করে চারদিকটাকে দেখছে। আমিই আমার হাতটাকে বাইরে ঝুলাতে ঝুলাতে বললাম, কি আনন্দ তাই না।

একটার পর একটা বাড়ী দেখতে পেলাম। পাহাড়ের চা বাগান অপরূপ যেন স্বপ্নের শহর আমরা দার্জিলিং শহরে এসে পড়েছি। পাহাড়ের গায়ের সাথে হেলে দুলে ভুপৃষ্ঠ থেকে ১৪০০০ ফিট উপরের পাহাড়ের চুড়ায় কিভাবে একটা শহর হতে পারে তা দার্জিলিং না গেলে বোঝানো সম্ভব নয়। আকাশে হালকা হালকা মেঘ। মেঘ শুধু উপরের আকাশে নয় নিচের আকাশেও। নিচের দিকে তাকিয়ে মেঘ দেখছি উপরের দিকে তাকিয়ে দেখছি । মেঘগুলো পাহাড়কে ছুয়ে ছুয়ে ছুটে যাচ্ছে। গাড়ির সামনে হালকা কুয়াশার মতো মনে হলো। আমার হাততো বাইরেই রাখা। হাত ছুয়ে গেল হালকা পানির ঝলক। আহা কুয়াশাতো নয় মেঘ। মেঘ শুধু উপরে আর নিচেই নয়। আমার হাতেও। আমাদের গাড়ী ছুয়ে গেল একঝাক মেঘ।

গাড়ী গুটে চলছে দার্জিলিং শহরের ভিতরের দিকে। রাজু তাকে বলল, কোন হোটেলের সামনে গিয়ে আমাদের রাখবেন। ড্রাইভার তাই করলো। আমরা গাড়ী থেকে নেমে আমাদের জিনিস পত্র সব একত্রে জড়ো করলাম। রাজু আর ছিদ্দিক সাথে আমিও আমার লাগেজ হাতে একটা একটা করে তিনটি হোটেলে ঢুকে রুম খোজলাম। হোটেলগুলো লোকেলোকারন্য নয়। রুমও পাওয়া যায় পছন্দ মতো। গায়ে নেপাল থেকে পড়ে আসা পোশাক গুলো এখনো জড়ানো। নেপালে কত গরম। সেদিন আগষ্টের ১০ তারিখ। শিলিগুড়িতে যখন গাড়ীতে উঠছিলাম ঘামে একাকার হয়ে গিয়েছিলাম। আর এখন দার্জিলিং এ। কেমন যেন শীত শীত করতে লাগলো। হেটেলের ভাড়া খাওয়া খরচ একত্রে হওয়ায় মেনু দেখে একটা হোটেলের তিনটি রুম দশ জনের জন্য নিয়ে নিলাম।


(চলবে) ... ...


নেপাল ভ্রমনের সবগুলো লেখা এবং নেপাল থেকে দার্জিলিং লেখার লিংক সমূহ:

নেপাল থেকে দার্জিলিং - ২ :: নেপাল থেকে দার্জিলিং :: নেপাল ভ্রমন : চতুর্দশ পর্ব :: নেপাল ভ্রমন : ত্রয়োদশ পর্ব :: দ্বাদশ পর্ব :: প্রথম পর্ব ::দ্বিতীয় পর্ব :: তৃতীয় পর্ব :: চতুর্থ পর্ব :: পঞ্চম পর্ব :: ষষ্ট পর্ব :: সপ্তম পর্ব :: অষ্টম পর্ব :: নবম পর্ব :: দশম পর্ব :: একাদশ পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:০৯
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×