somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাগজের ফুলের কথা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ছাত্রী ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। অতিরিক্ত সুন্দরি এবং অহংকারী। আমি প্রেম করার মতলবে আছি। গ্রাম থেকে ঢাকায় আসার অন্যতম কতগুলো কারনের মধ্যে একটা প্রেমকরা সবার উপরে। সমস্যা অন্যখানে। ছাত্রির বাবা পুলিশের কিজানি কি বড় অফিসার। পুলিশ থেকে দূরে থাকা আমার বাবার দেওয়া একটি মূল্যবান পরামর্শ।



রাস্তায় রাসেলের সাথে দেখা। এর মানে আজ প্রকৃতির ইচ্ছা টিউশনিতে না যাই। ‘সজীব কই যাস?’ ‘হাসপাতালে। আমার আত্মীয় অসুস্থ।’ রাসেল গলার স্বর ০.০১ ডেসিবেলে নামিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘অবস্থা বেশি খারাপ? খারাপ হলে চল সাথে যাই। তোর সান্ত্বনার দরকার আছে।’ হতাশ কণ্ঠে বললাম, ‘না। এতো খারাপ না। কি বলবি বল।’ ‘আজ টিউশনিতে গেলিনা? আর কতো ফাকি দিবি? এগুলো উচিত?’ আমার মেজাজ টাই গরম হয়ে গেল। রাসেল কে নিয়ে মোড়ের চা দোকানে গেলাম।



‘দোস্ত, তোর ওই ছাত্রীরে এখনো অফার দেসনাই? তুই না দিলে কিন্তু ত্রাস ভাই যেকোনো সময় অতর্কিত অফার দিয়ে দিতে পারে।’ত্রাস ভাই এর নাম রিয়াদ । তাকে যদি কেউ ফোন করে জিজ্ঞেস করে ‘ভাই আপনি কে?’ রিয়াদ ভাই খুব গম্ভীর ভাবে বলে দেন ‘আমি অত্র এলাকার ত্রাস!’ ত্রাস ভাইকে নিয়ে মহা সমস্যা। আমার বারা ভাতে উনি নিয়মিত ছাই দেন। ছাই সরিয়ে তখন আর ভাত খাওয়া যায়না। হাজার হলেও এলাকার ত্রাস! ‘অফার দেইনাই। দিতে পারবো বলে মনে হয়না। একেতো একদিকে পুলিশ, এর উপরত্রাস ভাই এর যন্ত্রণা।’ রাসেল এর মুখ করুণ হয়ে যায়। ছেলেটা আমাকে নিয়ে আসলেই অনেক ভাবে! ওকে ২ কাপ চা খাইয়ে বিদায় দিয়ে দিলাম।



কয়েকদিন পর......



‘স্যার, আপনি আমার দিকে সব সময় তাকিয়ে থাকেন কেন? আমি যতই সুন্দরী হই, আমি কিন্তু আপনার ছাত্রী।’ আমি ঘামতে থাকি। এই মেয়েটা এমন কেন?

সব সময় ওর সামনে নার্ভাস হয়ে যাই। ‘কোথায় তাকিয়ে থাকি? তোমার চেয়ে কতো সুন্দরী মেয়েকে পাত্তা দেইনা!’ তাপ্তি হাসে। আমি শার্টের হাতা দিয়ে ঘাম মুছতে থাকি।





এলাকায় এসে শুনলাম গরম খবর। ত্রাস ভাই নাকি তাপ্তিকে রাস্তায় অফার করেছিল এবং তাপ্তি সেটা হেসে ফিরিয়ে দিয়েছে। বলেছে, ‘আমি এতো সস্তা না। আমাকে পেতে হলে আজগুবি কিছু করেন যেটা কেউ আগে করেনি। যে করবে, আমি তার!’ এরপর থেকে ত্রাসভাই এর মাথা গরম। গরম খবরটা আমাকে দিয়েছে রাসেল। এরপর ঠাণ্ডা গলায় বলল ‘রিয়াদ ভাই তোকে দেখা করতে বলেছেন।’ বুঝলাম কপালে শনি আছে। কেনো যে তাপ্তি অফারে রাজি হলনা!



ইয়া নফসি, ইয়া নফসি পড়তে পড়তে রতনের গ্যারেজে গেলাম। এটা ত্রাস ভাই এর আস্তানা। যেয়ে দেখি ভাই একটা রিকশার উপরে বসা আর কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা ছেলেপেলে উনার থেকে ২হাত দূরে দাড়িয়ে আছে। বুকে থুথু দিয়ে সামনে গেলাম। ‘সালাম দিলিনা?’ ‘ভুল হয়ে গিয়েছে ভাই। ভাই, রাসেল বলল...’ রিয়াদ ভাই কথা থামিয়ে বললেন, ‘আরে বেটা সালাম কই? ভদ্রতা শিখস নাই?’ আমি তোতলাতে তোতলাতে সালাম দিলাম।



-তাপ্তিরে পড়াসনা তুই?

-জ্বি ভাই। কাল থেকে আর পড়াবনা।

-কি কইলি হারামজাদা? পড়াবিনা? ওই বল্টু, ওরে একটু ভূগোল পড়ায়া দেতো!

-আরে না না। ওই মেয়ে বলে আপনাকে অপমান করেছে? আপনার অপমান মানেতো আমার অপমান। তাই চেয়েছিলাম...

-অপমান কে কইল? বলসে শুধু ওরে একটু চমকায়া দিতে। তুই তো ওরে বহুত দিন ধইরা পড়াস। কি করলে মাইয়া পটবো কতো। না কইতে পারলে আজ থেইকা আমি তরে পড়ামু। কোন সাবজেক্ট কতো?

-জ্বি ভাই, ভূগোল।

-সাব্বাশ। তোর মাথায় ঘিলু আসে। তাপ্তিরে বিয়ার পরো তুই পড়াবি। এখন একটা সাজেশন দে।



মাথায় কিছু কাজ করছেনা। সবকিছু ঘুরছে। ভূ যে কেনো গোল হতে গেল! ভূ ও ঘুরে, আমার মাথাও ঘুরে। কিছু চিন্তা না করেই বলে দিলাম, ‘ভাই দেওয়ালে পোষ্টার টাঙান। পোস্টার এ লিখেন আপনি তাপ্তিকে এই ভূ এর চেয়েও বেশি ভালবাসেন।’ ‘ভূ টা কি?’ আমি হটাত চকিত ফিরে পেতে বললাম, ‘ভাই ভূ মানে পৃথিবী। ভূগোল মানে পৃথিবী গোল।’ ত্রাশ ভাই মুচকি হাসলেন। আমিও মুখটা হাসিহাসি করে রাখার চেষ্টা করতে থাকলাম। চেষ্টা সফল হয়নি বোধয়। ত্রাশ ভাই আবার গম্ভীর হয়ে গেছেন। নাটবল্টু আমাকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিলো।



পরদিন সকালে...



একটা লুঙ্গি পরে রাস্তায় ডিম কিনতে বের হয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। পুরো গলির এখান থেকে শেষ মাথা অবধি সবুজ রঙের পোস্টার। সবগুলোতে একি জিনিষ লেখা। ‘তাপ্তি, আমি তোমাকে এই ভূ থেকেও বেশি ভালোবাসি। ভূ মানে পৃথিবী।’ আমার ভয়ে হাতপা কাপতে লাগলো। তাপ্তির বাবা যদি কোন রকমে জানতে পারে এই পোস্টারের বুদ্ধি আমার, সর্বনাশ। নির্ঘাত ফাঁসি। আমি ডিম না কিনেই মেসে চলে গেলাম। বাথরুমে যেয়ে চোখমুখ ধুলাম। রুমে এসেই মোবাইল অফ করে দিলাম। হে আল্লাহ! রক্ষা করো!!



বিকেলে মোবাইল অন করলাম। ততক্ষনে একটু ধাতস্থ অবস্থা। হটাত মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে ভরাট গলায় বলল, ‘আমি শাহবাগ থানা থেকে বলছি। আপনি জলদি থানায় আসুন। আপনাকে স্যার ডেকেছেন।’ আমার পা তখন কাপছে। দাঁড়ানো থেকে ধপাস করে বসে পরলাম। ‘আপনি পুলিশ? জ্বি পুলিশ বলেন। না মানে, আমি...পুলিশ, আরে না, আপনি পুলিশ...আমাকে কেনো ডাকবে? আমি তো কিছু জানিনা...না মানে...’ অপাশ থেকে লাইন কেটে দিলো। আমি আবার ফোন বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।



বিকেলে দরজায় খটখট। আমাকে রাজীব ভাই পাশের রুমে ডেকে নিয়ে গেলেন। যেয়ে দেখি তাপ্তির বাবা পুলিশের ইউনিফর্ম পরে মেসের সবচেয়ে মজবুত চেয়ারটায় বসে নাক কুচকাচ্ছেন। আমাকে সামনে ইশারায় ডাকলেন। ডেকে বসতে বললেন। আমি তখন হিতাহিত শুন্য। মাথায় কিছু কাজ করছেনা। ফ্লোরে বসে পরলাম। ‘ফ্লোরে বসেছ কেন? এটা কি তোমার অভ্যাস? আমার মেয়েকে পড়ানো বাদে কি মানুষের বাসায় কাজ-টাজ করো? যে ছেলেকে আমার মেয়ের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছি, সে আরেকজনের বাসায় কাজ করে? ওহ গড! কি বিপদে যে পরলাম।’ আমি উঠে খাটে বসলাম। তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা।



‘সকালে তোমাকে আমার লোক ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলল। গেলেনা কেন?' আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম। পুলিশ পাত্তা না দিয়ে বললেন, 'আমার মেয়ের নামে পাড়ার এক বদমাইশ আজেবাজে কথা লিখে পুরো ঢাকা শহরে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমার হাবিলদার এসে আমাকে বলে চিন্তা না করতে। দেখো! কত বড় অপমান! মেয়ের মার কথা মতো তাই সিদ্ধান্ত নিলাম মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিব। তাপ্তির মা বলল, তুমি নাকি তাপ্তির দিকে পড়ানোর সময় তাকিয়ে থাকতে? আমরা চাই তোমার সাথেই আমার বিয়েটা হোক। আমার মেয়েটা অনেক ভালো। আজ পর্যন্ত কোন ছেলের দিকে মুখ তুলে তাকায়নি। তবে একটু জেদি। এখন তোমার মতটা জানাও।’ আমার মাথা তখন ভনভন করছে। অনেকক্ষণ লাগলো পুরো বেপারটা বুঝতে। আমি একটা লাজুক হাসি দিলাম। হাসিতে এই প্রথম কাজ হল। ‘মাশাল্লাহ! তোমার বাবার ফোন নাম্বারটা দিয়ো। মেয়েকে বিয়ে করেতো এই মেসে তুলতে পারবানা। তোমরা আমার বাসাতেই থাকবে। চাকরী না পাওয়া পর্যন্ত থাকবে। এরপর নিজেরা বাসা নিবে। আর শুনো, শোনা কথায় কান দিবেনা। চোখ কান খোলা রাখবা। জানার চেষ্টা করবা এই পোষ্টার ছাপানোর বুদ্ধিটা কার। যদি শালারে পাই, ওরে মাইরা আমি ভূগোল বুঝায়া দিমু।’





বিয়ের পর বাসর রাতে...





‘এটা কি? কাগজ? কি লিখা?’ তাপ্তি আমার হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে জোরে জোরে পড়লো, ‘তাপ্তি, আমি তোমাকে এই ভূ থেকেও বেশি। ভূ মানে পৃথিবী।’ তাপ্তি হতবাক। বলল ‘এটা কোত্থেকে আসলো?’ আমি কিছু না বলে হাসলাম। রহস্যজনক হাসি!



-Tasnim Alam-
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×