somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চোরাবালি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাওন আর নিলা.........। ওদের প্রথম পরিচয় ইন্টার এ পড়ার সময়,অঙ্ক স্যার এর বাসায়, যদিও কেউ কোনদিন কারো সাথে কথাই বলেনি ।শুধু চোখাচোখি ,তারপর আবার দেখা ভার্সিটি তে,কিভাবে যেন একই ডিপার্টমেন্ট এ,মুখ চেনা বলে সামান্য কথা, নোট দেয়ানেয়া,এভাবেই চলছিলো ,একদিন হঠাৎ করেই রাতে নিলার ফোনে শাওনের কল,নিলা মাত্র ঘুমাতে যাবে,শাওনের কণ্ঠ শুনেই নিলা বুঝল শাওন স্বাভাবিক নেই,শাওন কাঁদছে, নিলা কিছু জিগ্যেস করার সাহস পাচ্ছিল না,কারন ততক্ষনে ব্যাপারটা ভাল ভাবেই বুঝেছিল নিলা,নিলা খুব ভাল করেই বুঝেছিল শাওন ওর প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে গেছে,ক্লাস এর অন্যরা ওদের রটিয়ে অনেক মুখরোচক খবর ও বানাচ্ছে রোজ, নিলাও ভালবাসে শাওন কে কিন্তু পাছে বন্ধুত্ব নষ্ট হয় সেই ভয় এ কিছুই বলতে পারেনা, শাওন এর ও একই অবস্থা,কিন্তু শাওন আজ আর নিজেকে আটকাতে পারল না,কিন্তু কোন কথা সাজাতে পারল না,শুধু বলল ''নিলা আমার হবি? ''......।নিলার খুশি যেন ধরে না,এক কথাতেই সায় দিল............।সেই থেকে পথ চলা শুরু .............কত যে সুখের দিন ছিল সেগুলো ,শাওন নিলাকে খুব আগলে আগলে রাখত,সারা সন্ধ্যা রিকশা দিয়ে ঘুরত,এক্সাথে জোছনা দেখত কতই না মধুর দিন সেসব .......................





ভার্সিটি থেকে বের হয়ে শাওন খুব ভাল একটা জব পেল,নিলার বাসায় ও সবাই রাজি,বিয়ে হল দুজনার,শুরু হল নীলার নতুন জীবন,ভালই কাটছিল ,নিলা খুব চাইত একটা চাকরি করতে,কিন্তু শাওন চাইত না,বহু কষ্টে নিলা অবশেষে শাওনকে রাজি করাল,সব নিয়ে ভালই কাটছিল সংসার,কিছু দিনের মধ্যেই নতুন আরেকজনের আগমন বার্তা পেল নিলা,খুশিতে পাগল হয়ে যাবার অবস্থা,নতুন বাবু আসবে বলে অর আয়োজনের শেষ নেই,পুতুল,খেলনা,সব কিনে রেডি, একদিন দোকান থেকে তুলতুলে নরম একজোড়া জুতাও কিনে ফেলল।নিলা চাইত ওর মেয়ে হোক। বাবুর নাম ও ঠিক করল ''নিশা" ,শাওন ওর পাগলামি দেখে আর হাসে ...............।।





শাওন শুরুতে নিলার প্রতি অনেক কেয়ার করত,কিন্তু ক্যারিয়ার সচেতন শাওন খুব বেশি বিজি হয়ে যাচ্ছিল,এটা নিলাকে খুব কষ্ট দিত ,শাওনের রাগ টাও যেন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল,ছোট খাট বিষয় নিয়ে সবসময় চিৎকার চেচামেচি লেগেই থাক্ল,প্রথমেই সমস্যা হল নিলার জব টা নিয়ে ,অফিসে ছেলে দের সাথে কাজ করা টা শাওন মেনে নিতে পারছিল না,নিলার ই এক সহকর্মীকে নিয়ে শাওন সন্দেহ করত,নিলা অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল,কিন্তু সন্দেহের বীজ টা যেন চারাগাছ হয়ে গেছে,আর সেটাকেই বৃক্ষ এ পরিনত করল শাওন এর ই এক বন্ধু যেদিন নিলাকে দেখল নিলার কলিগের সাথে গাড়িতে ।আসলে প্রেগন্যান্ট নিলাকে বৃষ্টির মাঝে সেফলি বাসায় পৌঁছে দিতে ওর কলিগ ওকে বাসায় দিয়ে এসেছিল।কিন্তু শাওন কে বোঝায় কার সাধ্য, বাসায় ফিরে অগ্নি মূর্তি শাওন কে দেখে নিলা ভয় এ গুটিয়ে গেল,শাওন নিলাকে কিচ্ছু বলল না,শুধু বলল বাসা থেকে বের হয়ে যেতে,নিলা ত অবাক,এত টা রিএকশন ও আশা করেনি,বাইরে শ্রাবণ ধারা,শাওন কে কোনভাবেই মানাতে পারল না,এ যেন এক অন্য শাওন,নিজের সন্তানের কথাও যার মনে নেই যে নিলার গর্ভে ......নিলা বের হয়ে এল চার বছরের সাজানো সংসার থেকে এক মুহূর্তে .....হতবাক নিলা বুঝতেও পারছিল না কোথায় যাবে,অঝর বৃষ্টি বাইরে,যতদুর নিলার মনে পড়ে বৃষ্টিতেই হাটা শুরু করেছিল ও আর দেখেছিল দূর থেকে একটা গাড়ি আসতে ,তারপর...........................হাসপাতাল এ জ্ঞান ফিরে দেখল অপরিচিত এক ভদ্র মহিলা,সেই নিলাকে হসপিটাল এ এনেছে। নিলাকে বাসায় নিয়ে গেলেন তিনি,নিশ্চুপ নিথর নিলাকে সেবা করে সুস্থ করলেন। ঢাকা থেকে অনেক দূরে স্কুল এর এই চাকরিটা তিনি ই নিলাকে যোগার করে দিয়েছিলেন, সেই থেকে নিলা এখানেই আছে ,পরিবার এর সবাই জানে নিলা নিখোঁজ ,আর শাওন কি জানে তা নিলা জানেনা ...............





আজ হটাত জুতা জোড়া নিলাকে সেসব কথা মনে করিয়ে দিল,শাওন কে নিলার খুব মনে পড়ে ,তবে ভালবাসার শাওন কে না,নিশার হত্যাকারী শাওন কে, ডুকরে কেঁদে উঠে নিলা, ওর না দেখা বাবুটাকে খুব মিস করে নিলা,বেচে থাকলে হয়ত ওর ক্লাস এর মেয়ে দের বয়সী হত নিশা,নিশা ;;;;;সেই নিশা যে জন্মের আগেই হারিয়ে গিয়েছিল এক বৃষ্টিস্নাত নিশার আধারে ............।সেই আধারের সঙ্গী হয়ে একাকি নিলা বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রাখে নিশার সেই নরম জুতা জোড়া .................নিলার চোখের জলে ভিজতে থাকে জুতা জোড়া, নিশার জুতা জোড়া ..................



-চোরাবালি-
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×