somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের পরে বাসা

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এখন আরও চাপা স্বভাবের হয়ে গেসে... বরাবর ই ক্লাস এর লাস্ট বয়। টিচার দের ঝারি , আর বেতের বাড়ি খেতে খেতে ই অস্থির। বাসায় গেলে বাবার অগ্নিমূর্তি চেহারা। পড়া লেখায় খারাপ হাওয়ার জন্য নিত্ত গালাগালি শুনতে হয় বাবার কাছে। দিন ২-৩ পর পর মাইর। নিজেকে নিজের মধ্যে ই লুকিয়ে ফেলতেসে ছেলেটা।



ছেলেটা এবার অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরিক্ষা দিবে। যদিও কিছুই তার মনে থাকে না, তবু ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করে যাচ্ছে , যাতে সব বিষয় এ মোটামুটি ভাল ভাবে পাশ করতে পারে। ছেলের এই পরিশ্রম বাবার কাছে অভিনয় বলে ই মনে হচ্ছে, মা একটু মায়ার দৃষ্টি নিয়ে দেখে......... ভাই – বোন মাঝে মাঝে উকি দিয়ে দেখে, আর বলে ,’ আমাদের ভাই বিদ্যার জাহাজ হয়ে যাচ্ছে ‘ । তবু ও ছেলেটার ভ্রুক্ষেপ নেই.................. ভালভাবে পাশ করতে ই হবে......



ছেলেটার খাওয়া-দাওয়ার ও আর ঠিক নাই এখন। ভালভাবে পাশ করতে ই হবে......। মাঝে মাঝে ই খেতে ভুলে যায়। পড়তে পড়তে চোখ ঝাপ্ শা হয়ে আসে, মনে হয় ঘুম এ... চোখে একটু পানি দিয়ে আসে , আবার পড়তে বসে ছেলেটা.........



পরীক্ষার আর বেশি দিন বাকি নেই, ৫ দিন হাতে। চোখের নিচে কালি পরে যাচ্ছে।ভাই – বোন এখন একটু সমীহ করে চলে, বাবার দৃষ্টি একটু নরম হচ্ছে এখন, মা এসে মাঝে মাঝে পাশে বসে থাকে । ছেলেটা নিশ্চুপ, দৃষ্টি বই এর লেখাতে। অবশ্যই পাশ করতে হবে, ভালভাবে.........

আর মাত্র বাহাত্তর ঘণ্টা, পরিক্ষা শুরু হতে। কাগজ এর পর কাগজ উল্টে যাচ্ছে। এবার আর কেউ কিছু বলতে পারবে না। টিচার রা বলতে পারবে না , গরু কোথাকার। বাবার হারামজাদা , ছাগলের বাচ্চা গালি থেকে রেহায় পেতে হবে। পাশ করতে ই হবে। তারপর মা এর পাশে শুয়ে দীর্ঘ একটা শান্তির ঘুম দিতে হবে।মা অবশ্য এখন প্রায় ই পাশে এসে বসে থাকে, আর মাঝে মাঝে চোখ মুছে। বাবা , দরজার বাহিরে থেকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। বাবার চোখ ও ঝাপ্শা হয়ে আসে, তারাতারি চলে যান। যাতে কেউ না দেখে। ছেলেটা কে কত গালি দিয়েছি, মাঝে মাঝে ই মনে করেন বাবা।





কালকে পরিক্ষা। প্রথম দিন ইংলিশ। প্রস্তুতি বেশ ভাল, আস্তে আস্তে সব মনে পরছে। মনে হচ্ছে পাশ করতে কোন সমস্যা হবে না। একটু ভাল হলে হয়ত ভাল ছেলেদের মত নাম্বার ও পাওয়া যেতে পারে। আগে পাশ মার্ক এর চিন্তা, পরে ভাল ছাত্রদের মত হাওয়ার কথা ভাবা যাবে...... যদিও চোখ মাঝে মাঝে ই ঝাপ্ শা লাগে্‌...... মনে হয় ঘুম কম হাওয়ার কারনে......... এটা এমন কোন সমস্যা না। চোখে একটু পানি দিলে ই তো ঠিক হয়ে যায়...



আজ ছেলেটা অনেক সকাল এ উঠেছে। ফজর নামাজ পরে , দীর্ঘ সময় জায়নামাজ এ বসে ছিল...... এত দিন এর পরিশ্রম যেন বৃথা না যায়, হয়ত মনে মনে এই দোয়া ও করেছে। মনে মনে একটু ভয় ও লাগে...... যদি ঠিক মত লিখতে না পারে? না...। এখন ভয় পাওয়া যাবে না.........

ছেলেটার মা আজ , সকাল এ উঠে কুরআন শরিফ পরতেসেন, মাবূদ , ছেলেটার পরিক্ষা যেন ভাল হয়...............বাবার আজ অনেক ইচ্ছা করছে ছেলেটাকে পরীক্ষার হল এ দিয়ে আসতে... কিন্তু লজ্জা লাগছে......দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার লজ্জা.........তবু ও অনেক সাহস করে বাবা বললেন, আজাদ,” চল তোকে পরীক্ষার হল এ নিয়ে যাই...।।“



আজাদ নির্বাক, বাবার একটু অস্বস্তি লাগছে.........।“আচ্ছা ঠিক আছে.........।।“ ছেলেটার চোখে পানি এসে গেলো... ইচ্ছা করছে বাবা কে জড়িয়ে ধরে থাকতে......... কিন্তু ......না.........।। এখন ই না...।



সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে ছেলেটা বাবার সাথে বের হল.........আজ বাবার কেন জানি খুব আনন্দ হচ্ছে.........বিচিত্র এক আনন্দ.........।বাবা......আলতো করে ছেলেটার বাঁ হাত টা ধরলেন.........।।নিএ জাচ্ছেন সাবধানে.........।। আজ মনে হচ্ছে ছেলেটা আসলে ই অনেক লক্ষ্মী.........।। এরকম ছেলে থাকা ভাগ্যের বেপার.........



দু জন এখন রিকশায়, বাবা দেখছেন, ছেলে চোখ বন্ধ করে আছে......মনে হয় পড়া মনে করছে.........বাবা , পরম মমতায় বাঁ হাত দিয়ে ছেলেকে ধরলেন.........অদ্ভুত ছেলে......।একবার চোখ টা খুললোনা......।।



ছেলেটা বির বির করে কি যেন পড়ছে...। পড়ুক......।



রিকশা টা ডান দিকে বাঁক নিচ্ছে, বাবা, ছেলেকে শক্ত করে ধরলেন, যাতে পরে না যায়...।।

হটাত, একটা পাজের জীপ সামনে থেকে এসে ধাক্কা দিলো......... রিকশার সামনের চাকা দুমড়ে গেল.........ঝাকি তে বাবার হাত টা ছুটে গেলো......... ছেলেটা নিচে পরে গেলো............



না...।। ছেলেটার কোথাও কাটে নি...।। বাবা, খুব ই ভয় পেয়েছেন। যাক...ছেলটার কোথাও কাটেনি নি...... ছেলেটা কোন কথা বলছে না কেন??



বাবা?? আজাদ??? এই......... না ছেলেটা কথা বলছে না............ বাবা ছুটাছুটি শুরু করে দিলেন.........পানির জন্য.........। ১৫ টাকা দিয়ে এক বোতল পানি কিনলেন...............।মুখে ছিটিয়ে দিলেন......মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন......।ছেলেটার গেয়ান ফিরেছে্‌......... কিন্তু ছেলেটার চোখের মনি কেমন জানি অস্থির......।বাবা...পরিক্ষা শুরু হয়ে গেসে?



-না বাবা......।।এখন ও অনেক সময় বাকি...।



দুজন এ আর একটা রিকশায় উথলেন......এবার বাবা অনেক জোরে ছেলেকে চেপে ধরে রেখেছেন......।না...আর পরতে দিবনা............।

ছেলেটার বমি আসছে.........মাথা ঘুরাচ্ছে......।।ছেলেটা ,... বাবার কোলে বমি করে দিলো..................



-আজাদ...।কি হয়েছে...।আই আজাদ.........।বাবা...।শরির খারাপ লাগছে?? পরিক্ষা দেওয়া লাগবে না...চল বাসায় নিয়ে যাই তোমাকে............।



-পরিক্ষা দিব...।।পাশ করতে হবে.........

ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে গেলো...............।।





বাবা ছেলেটা কে হাসপাতাল নিয়ে গেলেন......পথে ছেলেটা আরও ২ বার বমি করল.........।।আর বলল ,” পরীক্ষা দিব..................।। পরিক্ষা............ vocabulary সব পারি......।। rearrangement ২৫ টা পরছি...... letter ১৮ টা.........।। আমি খুব ভাল মতো পাশ করবো............... সত্যি............। এটা ই ছেলেটার শেষ কথা............।। ছেলেটার পরিক্ষা শেষ হয়ে গেছে.........





মা চিতকার দিয়ে কাঁদছেন............ ভাইবোন ......... হা করে তাকিয়ে আছেন.........।।ছেলেটা মা এর পাশে ই শান্তিতে শুয়ে আছে......।।পরিক্ষা শেষ তো.........



পরিশেষ : বাবা, এখন একদম চুপ... মাঝে মাঝে accident এর জায়গা টা তে চলে যান.........।।



পাটি নিয়ে .........।মাঝে মাঝে ১, ২ দিন ও বসে থাকেন..................আর্‌ মা???????????????????





--ইমরান হোসেন
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×