somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৭

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রহস্যময় মহাবিশ্ব ও চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসা -৭
--------------------------------------ডঃ রমিত আজাদ

অপার রহস্যে ঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। আর তার মধ্যে রহস্যময় একটি সত্তা আমরা - 'মানুষ'। এই দু'য়ের সম্পর্কও কম রহস্যময় নয়। মহাবিশ্বের বিবর্তন বা বিকাশের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল মানুষ, সেই মানুষই আবার গভীর আগ্রহ নিয়ে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করছে তার চারপাশের মহাবিশ্বটিকে। কি এই মহাবিশ্ব? আমরা কারা? কি সম্পর্ক মহাবিশ্বের সাথে আমাদের অথবা আমাদের সাথে মহাবিশ্বের? কোথা থেকে এল এই মহাবিশ্ব? তারপর থেকে ক্রমাগত কি ঘটছে? এর শেষ কোথায়? এই সব প্রশ্ন অবিরাম ঘুরে ফিরে মানুষের মস্তিস্ক থেকে হৃদয় আর হৃদয় থেকে মস্তিস্ক পর্যন্ত। এইসব চিরন্তন জীবন জিজ্ঞাসার যতটুকু উত্তর এ যাবতকাল আমাদের জানা হয়েছে দর্শন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। সেইসব উত্তর ধারাবাহিকভাবে দেয়ার চেষ্টা করব আমার এই সিরিজে।

প্রথম পর্বে বস্তু (matter) সম্পর্কে কিছু আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে গতি (motion) নিয়ে। তৃতীয় পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল (space and time) নিয়ে, ইতিহাসের গতিধারায় নিউটন-লেইবনিজ বিতর্ক পর্যন্ত। চতুর্থ পর্বে আলোচনা করা হয়েছে স্থান ও কাল সংক্রান্ত আলবার্ট আইনস্টাইনের বৈপ্লবিক চিন্তাধারা নিয়ে।
পঞ্চম পঞ্চম পর্বের আলোচনা করা হয়েছে স্থান-কাল সংক্রান্ত আরো কিছু দর্শন নিয়ে।

ষষ্ঠ পর্বে আলোচনা করেছি বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্যাটাগোরী হিসাবে কাল নিয়ে।
এবারের পর্বে আলোচনা করব বিশ্ব জুড়ে নানাবিধ সংস্কৃতি ও শিল্পের ক্যাটাগোরী হিসাবে স্থান নিয়ে।

প্রথম পর্বের আলোচনা নিম্নের লিংকে পাবেন
Click This Link
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংক
Click This Link
তৃতীয় পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে
Click This Link
চতুর্থ পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে
Click This Link
পঞ্চম পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে
Click This Link

ষষ্ঠ পর্বের আলোচনা পাবেন নীচের লিংকে
Click This Link



আসুন এবার আমরা স্থান ও প্রাসঙ্গিক পরিবর্তন সংক্রান্ত সংস্কৃতিগত ধারণা (cultural concept) গুলো নিয়ে আলোচনা করব। গ্রীকদের সৃষ্ট স্থানের punctate ধারণা অনেক আগেই বিস্মৃত হয়ে গিয়েছে। এই ধারণা পরবর্তি দুটি সংস্কৃতি স্থান মডেল (cultural space model)-এর দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। স্মরণাতীত কাল থেকেই পাথরে খোদাই করে ছবি আঁকা হতো। আবার শিশুরাও চিত্রাংকন করত। এগুলো প্রাচ্যের সংস্কৃতিরও বৈশিষ্ট্য। চিত্রাংকনে Perspective Representation বলে একটি ধারণা আছে: একটি সমতলের উপরে (যেমন কগজ অথবা ক্যনভাস) কোন ছবির যেমনটি চোখে দেখেছি তেমনি করে মোটামুটি উপস্থাপন। এই জাতীয় চিত্রের দুটো বৈশিষ্ট্য হলো ১। অবজেক্ট যত দূরে হবে, আকৃতি তত ছোট হবে। ২। দৃষ্টি বরাবর লাইনগুলো ছোট হতে হবে এবং দৃষ্টির আড়াআড়ি লাইনগুলো বড় হবে।




প্রাচ্যের সংস্কৃতির অপর বৈশিষ্ট্ চিত্রাংকনে Pre-perspective Representation-এ স্থানের উপস্থাপন নিম্নরূপ হতে পারে, ইদাহরণস্বরূপ, চার দেয়াল বিশিষ্ট একটি কক্ষকে যখন কোন ক্যানভাসে আঁকা হয়, তখন তাকে একদিক থেকে দেখা তিনটি দেয়াল সম্পন্ন কক্ষ হিসাবে আঁকা হয়। যদিও, বাস্তবে আমরা এক দৃষ্টিতে দুটার বেশী দেয়াল দেখিনা। অনেক সময় কেবল একটি দেয়ালও দেখি। এই পদ্ধতিতে ছবি আঁকা হতো ১৩ শতক পর্যন্ত।




১৪ শতক থেকে শিল্পিরা ভিন্নভাবে আঁকতে শুরু করলেন। এবার তারা ছবি আঁকতে শুরু করলেন একটি জানালার মত করে যার ভিতর দিয়ে দৃষ্টি মেলে সপাচে-কে দেখা যাবে Volumetric-ভাবে, সমতলভাবে নয়। জানালার ষধারণাটি প্রচীনকালেও ছিল। তবে ইউরোপে মধ্য ১৪ শতকে এই ধারণা খ্রীষ্টধর্মের দ্বারা প্রসারিত হয়, প্রাচ্য সংস্কৃতির সাথে তার সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে, কেননা খ্রীষ্টধর্মের নিজেও প্রাচ্য দর্শন।

একটি জটিল Cultural-intelectual-religious প্রক্রিয়া Pre-perspective চিত্রাঙ্কনকে linear-perspective চিত্রাঙ্কনে নিয়ে আসে। linear-perspective চিত্রাঙ্কনে আলোককে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় মনে হবে যেন সেটা পেইন্টিং-এর চতুষ্কোন থেকে দর্শকের আঁখিতে প্রবেশ করছে। এই জাতীয় চিত্রাঙ্কনে আলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এটা ঐ দর্শনের সাথে জড়িত যে ইশ্বর প্রথম দিবসেই আলো সৃষ্টি করেছেন। এভাবে linear-perspective চিত্রাঙ্কন একটি পবিত্র চিত্রে পরিণত হয়। এই চিত্রাঙ্কন Parallel-meridian coordinate তথা গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক মানচিত্র তৈরী করতে সাহায্য করে। যা পরর্তিতে ইউরোপবাসীদের বৃহৎ ভৌগলিক আবিষ্কারে (আমারিকা, ভারত উপমাহাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া গমণের সমুদ্রপথ) উদ্ধুদ্ধ করে।

বিভিন্ন ধরনের স্থানকে স্বাতন্ত্রমন্ডিত করা সম্ভব হয়েছিল এই পর্যবেক্ষণ করে যে তারা ঠিক কিভাবে Co-arranged। অর্থাৎ তারা কি Pre-perspective না linear-perspective চিত্রাঙ্কন পদ্ধতিতে প্রদর্শিত।

এদিকে যুগের পর যুগ Cultural space-ও নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বহু বহু বছর মানুষ নিজেকে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি ভাবত। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল Cultural space-এর একটি বিরাট অংশ জুড়ে। এবং এটাই প্রদর্শিত হয়েছে ফোকলোর, চিত্রকলা ও সঙ্গিতে। বাংলাদেশ বলি আর ইউরোপ বলি সবখানেই একটি মানব চিত্রের পিছনের পটভূমিতে ছিল নৈসর্গিক দৃশ্য। উজ্জ্বল উদাহরণ দ্যা ভিঞ্চির 'মোনালিসা'। বিশ শতকের দিকে এসে Cultural space পরিবর্তিত হয়। এখন আমরা পটভূমিতে দেখতে পাই ইন্ডাস্ট্রি, বহুতল ভবন ইত্যাদি। বিশ শতকের শুরুতে চিত্রকলা এমন এক নতুন রূপ নেয় যা অতীতে কখনোই ছিল না। আবার ইদানিং ঐ যান্ত্রিকতায় ক্লান্ত হয়ে, ওখান থেকে সরে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ আবার বেশী বেশী করে আঁকতে শুরু করেছে বাগান, গৃহপালিত পশুপাখী, গ্রামাঞ্চল, ইত্যাদি। বলতে শুরু করেছে, 'ফিরিয়ে দাও অরণ্য, লওহে নগর'।




কোলাহল মুখর দিবস পেরিয়ে এসেছে নিঝুম রাত,
রহস্য নেমেছে শস্যক্ষেতে ঘন কূয়াশায় চেপে,
শীতল হাওয়া মেঘের চিরেছে বুক,
ঝরিয়ে শিশির ভিজিয়েছে ঘাস,
বৃক্ষের কানে কানে ঝি ঝি-দের সুর,
শুনিয়েছে উচ্ছাস!
মেঘ, কুয়াশা, আকাশ, নদী আর এই স্থবির মাটি,
একান্তই অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠে,
চোখের পাতা জুড়ে হাসে, নতুন স্বপ্ন ছায়া,
প্রকৃতির একি অপরূপ মায়া!!!


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৪২
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×