somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৪

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-১
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-২
মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৩


সিংহাসনের লোভে বাবার বিরুদ্ধে ছেলের বিদ্রোহ সুলতানি ও মোঘল যুগের এক অতি সাধারন ঘটনা। কিন্তু বিদ্রোহ আর বিশ্বাস ঘাতকতার এক জঘন্য ইতিহাস রচনা করলেন শাহজাহানের তৃতীয় ছেলে আউরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭)।তাঁর পুরো নাম ছিল আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর। তিনি তাঁর বড় ভাই দারা আর ছোট ভাই মুরাদ কে হত্যা করে ও বৃদ্ধ বাপকে আগ্রার কেল্লায় বন্দী করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন গোঁড়া সুন্নি মুসলমান এবং অসম্ভব হিন্দু বিদ্বেষী। এমনকি শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও পরিত্রান ছিলনা তাঁর হাত থেকে। ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শিখ, রাজপুত, জাঠ ও বুন্দেলা সম্প্রদায় এবং দক্ষিন ভারতে মারাঠারা এই ধর্মোন্মাদ সম্রাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। সম্রাট কাউকেই বিশ্বাস করতেন না। সুতরাং, তিনি নিজেই সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেরালেন বিদ্রোহ দমন করতে ও রাজ্য বাড়াতে। এ ভাবেই চিরটা কাল যুদ্ধ করে করে অবসন্ন আউরঙ্গজেব মারা গেলেন ১৭০৭ সালে।


এতসব বলেও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে চারিত্রিক দৃঢ়তা আর কূটনীতিতে আউরঙ্গজেব এর তুলনা মেলা ভার
তবে এ কথাও ঠিক যে আকবরের মত দূরদর্শিতা তাঁর ছিল না।আর সে জন্যই তাঁর মৃত্যুর পর মোঘল সাম্রাজ্যের পতন ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা।

শিবাজি ও মারাঠা সাম্রাজ্যঃ


আউরঙ্গজেব এর বিরুদ্ধে উত্তর-পশ্চিম ভারতে যখন গুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্বে শিখরা এবং রাজসিংহ ও দুর্গাদাসের নেতৃত্বে রাজপুতরা গর্জে উঠেছিল। সেই সময় দক্ষিন ভারতে এক তরুন মারাঠি সমস্ত ভারত জুড়ে হিন্দু রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই তরুনই হলেন শিবাজি। তিনি বুঝেছিলেন সম্মুখ যুদ্ধে আউরঙ্গজেব এর বিশাল বাহিনী কে হারিয়ে দেয়া স্বপ্নের মতই অবাস্তব, কিন্তু মোঘলদের ঘায়েল করা যাবে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে। শত্রুকে প্রস্তুত হবার সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ আক্রমন করার নাম ই গেরিলা যুদ্ধ।
আউরঙ্গজেব শিবাজি কে শায়েস্তা করার কোন উপায় না দেখে ছলের আশ্রয় নিলেন। তিনি শিবাজি কে নিজের দরবারে আমন্ত্রন করে পরে বন্দী করলেন। কিন্তু বুদ্ধিমান শিবাজি ফলের টুকরিতে লুকিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন। এর পরেই শুরু হয় শিবাজির আপোষহীন সংগ্রাম। মোঘলরা যেমন হিন্দুদের কাছ থেকে জিজিয়া কর আদায় করত, মারাঠারাও তেমনি মুসলমান শাসনকর্তাদের কাছ থেকে চৌথ আর সরদেশ্মুখি আদায় করত। এ ভাবেই শিবাজি এক বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তলেন পশ্চিম ভারতে। ১৬৭৪ সালে তিনি ছত্রপতি উপাধি ধারন করেন।১৬৮০ সালে এই বীরের মৃত্যু হয়।
শিবাজির বংশধররা কিন্তু শিবাজির মত প্রতিভাবান ছিলেন না। তা সত্তেও আউরঙ্গজেব কে তারা শক্ত বাঁধা দিয়েছিল।
মারাঠা রাজ্যে ছত্রপতি ছিল সরবেসরবা।কিন্তু কালক্রমে ছত্রপতির ক্ষমতা কমতে থাকে এবং তাঁর প্রধানমন্ত্রী বা পেশোয়াই রাজ্যের প্রধান হয়ে ওঠেন। পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথের আমলে ছত্রপতি রইলেন নাম কা ওয়াস্তে রাজা , আর পেশোয়া দখল করলেন তাঁর সকল ক্ষমতা।
বালাজির ছেলে পেশোয়া বাজীরাও (১৭২০-১৭৪০) ছিলেন শিবাজির মতই বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী। তিনিও হিন্দু সাম্রাজ্য গঠনের চিন্তা করেন। হায়দ্রাবাদের নিজাম ও মোঘল সম্রাটের মিলিত বাহিনীকে তিনি ভুপালের কাছে পরাজিত করেন(১৭৩৭)।
পর্তুগীজদেরও পরাজিত করে তিনি সলসেট ও বেসিন দখল করেন।
শিবাজির মৃত্যুর পর মারাঠা সাম্রাজ্য কয়েকটি ছোট ছোট সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পরেছিল। যেমন- গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, ইন্দরের হোলকার, বারোদার গাইকোয়ার, নাগপুরের ভোসলে। বাজীরাও এইসব রাজ্যগুলিকে সংঘবদ্ধ করে ‘মারাঠা যুক্তরাষ্ট্র’ গঠন করেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৫০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×