somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রেসিপি ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রেসিপি ।

আমসত্ব দুধে ফেলি,
তাহাতে কদলী দলি,
সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে ;
হাপুস হুপুস শব্দ,
চারিদিক নিস্তব্ধ,
পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে ।

রবীন্দ্রনাথের কোন এক কবিতায় এই যে রেসিপিটা দেয়া ছিল, সেটা দিয়ে সকালের জলখাবার বানানোর কথা প্রায়ই ভেবেছি । মনে হয় সে রকম জোর কোন প্রচেষ্টা নিইনি বলে ওই চারটে জিনিষ একসাথে মিলিয়ে খাবারটা বানান হয়নি । তবে এমন হয়েছে যে কখনও কলা, দুধ সন্দেশ যদি বা মিলেছে- আমসত্ব পাইনি । এই জিনিষটি বাংলাদেশে,পশ্চিম বঙ্গের মত বেশি জনপ্রিয় ছিল না । কেউ কলকাতায় গেলে আনতো। এলেও, কিন্তু ঠিক তখন হয়তো ,যে কোন কারনেই হোক সন্দেশ মেলেনি । আবার কলা , আমসত্ব এলেও তখন সন্দেশটা মিস হয়ে যেত। আমার ছোট বেলায় এই চতুর্কলার একত্র যোগ হয়নি ফলে ওইটা মিস করেছি,হাপুস হুপুস করে খাবার মজাটা পাইনি । তাই ঠিক করলাম আমার মেয়েদের অন্ততঃ এই অমৃতের স্বাদ দিতে হবে ।
বানাতে গিয়ে প্রথম যে সমস্যায় পড়লাম তা হলো- রবীন্দ্রনাথ জিনিষগুলোর পরিমান দিয়ে যান নি। তাই
আমি মেয়েদের বললাম-‘ পরিমান টা তোরাই ঠিক করে নে ।’ সমস্যা হল অন্যত্র – খাবারটার বেস্ টা কি হবে ? অর্থাৎ সেই চারটে উপকরণ কিসের সাথে মেশাব ? শুধু দুধের সাথে সন্দেশ ,কলা, আমসত্ব মেশালে তাতো সরবতের মত কিছু হবে ,পাতে নিয়ে খাওয়া যাবেনা । তাহলে কি ? সেদ্ধ ভাত, চিড়া ,মুড়ি -নাকি অন্য কিছুর সাথে মেশাব । ছোট মেয়ে বললো -‘বাবা -কর্ন ফ্লেক্স দাও ।
-কিন্তু সেটা তো বিদেশী মিক্স হয়ে যাবে, বাঙালি ফ্লেবার টা থাকবে না ।’
-বাবা ,আজকাল রবীন্দ্রনাথের গানে ফিউশন হচ্ছে , এটাও নাহয় একটু বাঙালি খাবার সাথে বিদেশি খাবার মিক্স হবে ।’
বলার কিছু নেই। কদিন আগেই ওরা সোমলতা আচার্যের গাওয়া ‘মায়াবন বিহারিনী হরিনী’ শুনেছে । ওই রক্-রবীন্দ্র সঙ্গীত আমার কর্ণকুহর ঝালাপলা করলেও বলার কিছু নেই- যুগটাই গ্লোবালাইজেশনের ।
যাইহোক মেয়ের কথামত প্রথমেই আনা হল চকলেট গন্ধি কর্নফ্লেক্স । আগেই আনা ছিল কলকাতার আমসত্ব , আর নাটোর থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় আনা কড়া পাকের সন্দেশ । মানিকগঞ্জের অরিজিন্যাল অর্গানিক কেমিক্যাল ছাড়া পাকানো স্পটলেস সাগর কলাও যোগাঢ় করা হলো । এইখানে সিথির মা বাগরা দিল বললো – এটা পিরিওডিক্যাল রেসিপি, তখন সাগর কলা ছিল না , আর মানিকগঞ্জের তো নয়ই। বরং বিক্রমপুরের মালভোগ কলা আন । তখন তো এদিক থেকেই সব যেত তো’-
তাই সই যতটা কাছাকাছি থাকা যায় উনিশ শতকের ।
এরপর শুরু হল রবীন্দ্রনাথের রেসিপির রান্না । ঘন করে জ্বাল দেয়া হল দুস্প্রাপ্য খাঁটি দোয়ানো গরুর দুধ। তারপর সেটা ঢালা হল কর্নফ্লেক্সের উপর । কলা গুলো সিঁথি সুন্দর পিস পিস করে কাটছিল - বললাম,
-হল না। কলা তো চটকাতে হবে ওর সাথে আলু ভর্তার মত। লেখা আছে কদলি দলি,-দলা মানে চটকানো।
-তাহলে তো ক্রিসপি টা থাকবে না ।’ কাঁদ কাঁদ গলায় সিঁথি বললো ।
এবার ওর মা এগিয়ে এসে বললো -তুমি বরং কলাটা গ্রাইন্ডারে পেস্ট কর আলাদা করে । বললাম,
-অসম্ভব ।অমন হলে পেস্ট হবে, দলান হবে না । দুটোর মধ্যে তফাৎ হল দলানোর মধ্যে কিছু আধো ভাঙ্গা থাকবে ,সেটা মুখের মধ্যে ভিন্ন স্বাদ দেবে।’
মনে মনে যদেও একটু কিন্তু কিন্তু থাকলো । যাইহোক-
এরপর এল কলকাতা থেকে ফরমাস করে আনা আমসত্ব ।সেটা নানা কান্ড করে কুচি কুচি করে কেটেছিঁড়ে তারপর ছাড়া হল । সন্দেশগুলো কিভাবে দেয়া হবে গোটা গোটা না ভেঙ্গে- এনিয়েও বিস্তর গবেষণা হল,শেষ পর্যন্ত গুঁড়ো করে ছিটিয়ে দেয়া হলো।--
তারপর কি হল ?
আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না । কেউ যদি চেষ্টা করে এই জলখাবারটি [বা ফারসীতে নাস্তা] বানায় , তাহলে শেষটা তারাই লিখে নেবে । আমার এটুকুই বলা- শুধু হাপুস হুপুস শব্দই নয়, যেন জগৎ তোলপাড় করা উল্লাসে আর মেয়েদের উচ্ছ্বাস ভরা আওয়াজে আমার ঘর আমোদিত হল- গীতবিতানের বাইরে সম্পুর্ণ অন্য একরকম আনন্দের জন্য কবিগুরুকে সেজন্য সেলাম জানালাম -মেনি মেনি থ্যানকস্ ঠাকুর।
যুগ যুগ জিও তুমি বাঙালির ঘরে ঘরে,
বিলিও এমন রস সাজানো যা থরে থরে-
তোমার রঁসুই ঘরে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:০২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×