somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরকীয়া ও সন্তানের উপর এর প্রভাব

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

this is the news link

পরকীয়া নামটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আমাদের বর্তমান সমাজে এই ব্যাধি প্রকট আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সমাজের সর্বস্তরেই এই সমস্যা বিদ্যমান। পরকীয়া কে যেভাবেই দেখা হোক না কেন এটি অন্যায়। এতে একটি পরিবারের অনেক ক্ষতি হয়, তাদের পারস্পরিক বন্ধনে যে চিড় ধরে তাও আমরা জানি। তবে এইসব পরিবারের শিশুদের উপরও যে এটি বিশাল সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি?

পরকীয়া নামক ব্যাধি একজন স্বামী বা স্ত্রীর জন্য যতটুকু ক্ষতিকারক তারচেয়ে কয়েক হাজারগুন প্রভাব ফেলে সেই পরিবারের সন্তানদের উপর। এরা পরবর্তি জীবনে কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে পারেনা, নিজেরা হীনমন্যতায় ভোগে, এদের মনের একটা অংশ প্রায় অকেজো হয়ে যায় তাদের নিজেদেরই অজান্তে।

দৃশ্যপট ১
দিপ্তি ক্লাস টু তে পড়ে। প্রতিদিনের মত আজকেও স্কুলের হোম ওয়ার্ক শেষ করে তার পুতুল নিয়ে খেলতে বসেছে। বাসায় আব্বু নেই। ড্রইং রুমে আম্মু জহির আংকেল এর সাথে বসে কথা বলছে। জহির আংকেল দিপ্তির বাবার খুব ভাল বন্ধু, ওকেও অনেক স্নেহ করে। সে ভাবল আংকেল এর কাছে একটু যাই, ভেবে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়াল। গিয়ে দেখল তার মা আর জহির আংকেল একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর হঠাৎ খুব খারাপ লাগল। ঠিক বুঝে উঠতে পারল না তারা কি করছে। এভাবে সময় যেতে লাগল। প্রায়ই দিপ্তি দেখত তার বাবা বাসায় না থাকলে বা দেশের বাড়ি গেলে জহির আংকেল রাতে তাদের বাসায় এসে থাকে এবং তার আম্মু রাতের বেলা তার পাশ থেকে উঠে অন্যরুমে যায় যেখানে আংকেল থাকে। সেখানে কি হয় তা সে জানেনা। এভাবেই দিপ্তি বড় হতে থাকে এবং নিজের মধ্যে এক ধরনের যন্ত্রনা অনুভব করে। সে না পারে তার মাকে বিশ্বাস করতে, না পারে তাকে ঘৃনা করতে, এক অড্ভুত ভয় তাকে গ্রাস করতে থাকে, সে কোনোদিনও আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনা। এবং পরবর্তি জীবনেও সে এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রতি মুহুর্ত লজ্জিত, ভীত, আতংকিত হয়ে থাকে।

দৃশ্যপট ২
তুষার ফুটফুটে একটি ছেলে, ১০ বছর বয়স। ক্লাস থ্রি তে পড়ে। প্রচন্ড দুরন্ত। তার সারাদিন ভাল লাগে দুষ্টুমি করে কাটাতে। কিন্তু বাসায় যখন বাবা মা এর ঝগড়া দেখে তখন ওর ইচ্ছা করে কোথাও পালিয়ে চলে যেতে। কোন এক মহিলা কে নিয়ে প্রায়ই তার বাবা মা এর মাঝে ঝগড়া হয়। বাবা কয়েক বার মা এর গা এ হাত ও তুলেছে। ওর ঘৃনা হয় বাবার প্রতি, কিন্তু মা কে কিছু বলতে পারেনা। ও তো ছোট, মায়ের কষ্ট কিভাবে দূর করবে? এভাবেই চলে যায় দিন, মাস, বছর। তুষারের মা তুষারের জন্য এই সংসারে টিকে থাকে। তার কোথাও যাবার জায়গা নেই তাই। এবং ১০ বছর পর একসময় তুষারের মা এর একটি বন্ধু হয়। তার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে, একটা সম্পর্কও হয়। কিন্তু সেই লোক বিবাহিত। এদিকে তুষারের বাবা মাঝে মাঝে মদ খেয়ে তুষারের মা এর গায়ে হাত তোলে। কিন্তু এতদিনের অভ্যাস সেই মহিলা আর রা করেনা। সমাজ এর ভয়ে, কলংকের ভয়ে। আর তুষার এসব দেখতে দেখতে জীবনের প্রতি ভরসা হারিয়ে ফেলে, সবকিছু অর্থহীন মনে হয় তার। মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে প্রচন্ড ভাবে। নিজের বাবা মা কে যদি শুধু বাবা মা বলেই নয়, মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ মানুষ ভাবতে লজ্জা পেতে হয়, এর চেয়ে কষ্ট আর কি আছে। বড় একা লাগে তুষারের এই পৃথিবীতে। কেউ বুঝি ভাল নয়। সব মিথ্যা, অভিনয়, ভান।

(সত্য ঘটনা, নাম পরিবর্তন করে দিয়েছি)

এমন ঘটনা আরো অনেক আছে। এখানে দুটিই বললাম।

শিশুরা তাদের বাবা মা কে আদর্শ মনে করে।তাদের কোন অনৈতিক কার্যকলাপে শিশুদের মনে যেই বিরুপ প্রতিক্রি্যা সৃষ্টি হয় তা তাদেরও পরবর্তি জীবনে প্রভাব ফেলে।দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যার সুদূরপ্রসারি ক্ষতিপূরন যেন এই নিশ্পাপ শিশুদের না দিতে হয়।

কাজেই পরকীয়ালিপ্ত সকল পরিবারের প্রতি এবং পরকীয়া করতে পারেন এমন সম্ভাবনা আছে যাদের তাদের উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা দয়া করে বিয়ে করবেন না।
আর যদি করেও ফেলেন, সন্তান নিবেন না।
আর সন্তান যদি নিয়েও ফেলেন কোনভাবে তবে পরকীয়া করবেন না।

তাও যদি সম্ভব না হয় তবে খেয়াল রাখবেন আপনার সন্তান যেন আপনার পরকীয়া সম্মন্ধে কোনরকম কোন ধারনা করতে না পারে।যেটা হওয়া একেবারেই অসম্ভব।শিশুরা সবই বোঝে আর আজকালকার শিশুরা তো প্রযুক্তিই বলুন আর যাই বলুন সবকিছুই আরো আগে আগে বোঝে কাজেই এমন একটা ব্যাপার তার বোধগম্য হবেনা এই ভুল ধারনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

"নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে ঠকানো" এই শিক্ষা ছাড়া আপনার পরকীয়া থেকে অন্য কোন শিক্ষা সে পাবেনা। আপনার প্রতিও তার শ্রদ্ধা সে যত বড় হবে ততই কমে যাবে।আমাদের সমাজে আজকে পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা কমে যাওয়ার এটাও একটি বড় কারন আমি মনে করি একটু ভাবুন তো যেই শিশুর মা বা বাবা পরকীয়া করে এবং তা সেই শিশুটি অনেক অল্প বয়সে হতে পারে৫,৬,৭,৮,৯, ১০,১১ কি ১২ সে কি পারবে তার বাবা বা মা কে সবচেয়ে আদর্শ মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে? তার মনেই হতে পারে মিথ্যা বলা, মানুষকে ঠকানো এগুলো গুরুতর কোন অন্যায় না। এভাবেই বপন হয় অন্যায় কে "ন্যায়" ভাবার বীজ এবং একসময় তা ডাল পালা ছড়িয়ে বিশাল বৃক্ষে রুপ নেয়।নিজেকেই একটু প্রশ্ন করে দেখুন।

কাজেই যাই করুন, সন্তানের যদি মঙ্গল চান তবে একটু বুঝে কাজ করুন। পিতামাতা হয়ে নিজের আদরের সন্তানের উপর এমন একটি বোঝা চাপিয়ে দিয়েন না যা সে সারাজীবন বয়ে বেড়াবে। এবং এ ব্যাপারে মায়েদের ভুমিকা বাবাদের চাইতে বেশী।সাধারনত সন্তানেরা মা কে যেমন ভালবাসে বাবাকে তার থেকে কিছুটা হলেও কম বাসে। কাজেই সে যদি দেখে তার বাবার অনুপস্থিতিতে তার মা অন্য কোন পুরুষের সাথে প্রেমলীলায় মত্ত, সেই শিশুটির চিন্তা ভাবনার জগৎ অনেকখানি এলোমেলো হয়ে যায় এবং এর ফলাফল তার জন্য বেশ ক্ষতিকারক হতে পারে।

তবে তার মানে এই নয় যে পুরুষ রা বা বাবারা বাসার বাইরে যা ইচ্ছে করে ঘরে আসলে তার কোন প্রভাব শিশুদের উপর পড়বেনা। আগেও বলেছি শিশুরা অনেক কিছুই বোঝে। কাজেই তারা যদি বোঝে তাদের বাবা তাদের মা কে ভালবাসেনা বরং অন্য নারীসঙ্গে লিপ্ত সেটাও তাদের উপর সমান প্রভাব ফেলে। তারা অবচেতন মনে "মানুষকে ঠকানো" এর মত কাজকে আর অন্যায় মনে করেনা এবং এই ধারনা তার জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও বিশাল প্রভাব ফেলে।

কাজেই যারা এখনও বিয়ে করেননি বা করবেন বা করেছেন, পরকীয়া করছেন বা করার কথা ভাবছেন বা হয়ত কখনই করবেন না ঠিক করে রেখেছেন সবার প্রতিই আমার অনুরোধ নিজের সন্তানের ব্যাপারে আবারও একবার ভাবুন। আপনার সঙ্গী/সঙ্গীনি নিয়ে আপনার সন্তুষ্টি সবসময় নাও থাকতে পারে। তাকে ঠকিয়ে আপনি অন্য কাউকে নিয়ে ফুর্তি করতেই পারেন কারন সে তো আর আপনার রক্তের কেউ না। তাকে ঠকানো না ঠকানো আপনার বিবেকে হয়ত নাও বাঁধতে পারে। এমন একটা অন্যায় আপনার কাছে অন্যায় নাও মনে হতে পারে। তবে আপনার আজকের এই অন্যায় আপনার জীবনসাথীকে যতটা ঠকাবে তার চেয়ে অনেক বেশি ঠকাবে আপনার শিশুকে। আর আপনার সন্তান কিন্তু আপনারই একটা অংশ। তার মানসিকতার প্রতি শুরু থেকেই যত্নবান হউন।নিজেকেই একটু প্রশ্ন করে দেখুন।

আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি খুব স্পর্ষকাতর একটি বিষয়ে বলে ফেললাম। হয়ত সবকিছু বোঝাতে পারিনি তবুও আপনাদের ধন্যবাদ আমার কথাগুলো সময় নিয়ে পড়ার জন্য।

-ডা: নাজিয়া হক অনি

(দৃশ্যপট দুটি পরে যোগ করা হয়েছে, বিস্তারিত বর্ননায় না গিয়ে সরাসারি বাস্তব জীবনের উদাহরন দেয়াই শ্রেয় মনে করলাম)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৮
৪৭টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাপ, ইদুর ও প্রণোদনার গল্প

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪

বৃটিশ আমলের ঘটনা। দিল্লীতে একবার ব্যাপকভাবে গোখরা সাপের উৎপাত বেড়ে যায়। বৃটিশরা বিষধর এই সাপকে খুব ভয় পেতো। তখনকার দিনে চিকিৎসা ছিলনা। কামড়ালেই নির্ঘাৎ মৃত্যূ। বৃটিশ সরকার এই বিষধর সাপ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×