somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি জানি কিসের ও লাগি ! ( গল্প )

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাড়ির পেছনের এই পুকুর পাড়টা আগে এতো টানতো না জাফর কে ।ওর মনে আছে বিয়ের পর একদিন বীণা পুকুরটা দেখে চেচিয়ে উঠেছিলো ! আরে !!! এত্ত সুন্দর একটা পুকুর ! কার পুকুর ? তোমাদের ?
জাফর বীণার ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাস দেখে হেসেছিলো !বলেছিলো , না আমাদের না !
তাহলে কাদের ?ইশ এমন একটা পুকুর নিজেদের থাকলে কি যে ভালো হতো !
কি ভালো হতো !
সে তুমি বুঝবে না ! আমি তাহলে যখন তখন পুকুরে সাঁতার কাটতাম । পুকুর পাড়ে ইচ্ছে মতো বসে থাকতাম ! কেউ কিছু বলতো না ! জানো , আমার নানাবাড়ি এমন একটা পুকুর ছিলো ! না , না । এটা তার চেয়ে একটু বেশি সুন্দর !আমি নানা বাড়ির সেই পুকুর পাড়ে বসে গান গাইতাম!
তুমি গান গাইতে পারো ! কই বলোনি তো !
আরে ! নাহ ! তেমন না ! এই গুনগুন করি আর কি !বলেই লজ্জা পেলো বীণা ! ইশ ! সে যে কি ! কেন গানের কথা বলতে গেলো মানুষটাকে ! মানুষটা যদি এখন গান শুনতে চায় ! কি হবে !! যদি ওর গান শুনে মানুষটার ভালো না বলে ! বীণা কষ্টে মরেই যাবে ! আর যাই হোক ! বীণা কিছুতেই জাফর কে কষ্ট দিতে পারবে না ! কবে কবে যে মানুষটাকে এতো ভালোবেসেছে ! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বীণা !কিছুতেই মানুষটাকে সে বুঝতে দেবে না এটা । তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে , অনেক মায়া করবে মানুষটাকে ! কোনদিন কষ্ট দেবে না ।
এই বীণা !কি হলো ? তুমি গান পারো অথচ বলো নাই যে !এক্ষুনি একটা গান শোনাও !
এই রে ! যা ভয় পেয়েছিলো তাই হলো !নিজের উপরেই বিরক্ত হয়ে গেলো সে ।সেটা এড়াবার জন্য হেসে বললো , এই পুকুরটা যদি তোমার হতো তাহলেই তোমাকে গান শোনাতাম !
কেন? অবাক হয়ে জাফর প্রশ্ন করে ! এই মেয়েটার কথা সে অধিকাংশই বোঝে না !
আরে বাবা ! কেন বোঝো না ? আমার গান শুনে তুমি খুশি হয়ে বলতে , বীণা কি চাও তুমি ?আমি তখন এই পুকুরটা চাইতাম !
হো হো করে হেসে ওঠে জাফর !বীণা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে , হাসছো যে !
এমনি ! পাগলী ! আচ্ছা যাও গান শোনাতে হবে না ! এই পুকুরটা তোমাকে এমনিতেই দিয়ে দিলাম !
মানে ? এই মানে কি !!
মানে হলো , আজ থেকে এই পুকুরটার মালিক তুমি ! এখন বলেন , সোনা বউ, কবে আমাকে গান শোনাবেন ?
জাফরের কথা শেষ হবার আগেই বীণা একরকম ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর গায়ের উপর !জাফর জোর করে ছাড়াতে গেলে সে পাগলের মতো আরও আঁকড়ে ধরে ! জাফর কিছুতেই ভেবে পায় না , এই মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেন ? বুকের ভিতর অজানা এক ভালোলাগা তাঁকে আচ্ছন্ন করে ফেলে ! এই অসম্ভব মায়াশীল মেয়েটা তাঁর বউ !বউ !কি সুন্দর একটা শব্দ ! খুব কাছের একটা আপন শব্দ !জাফর মনে মনে ভেবে রাখে , এই মেয়েটিকে খুব চমকে দিতে হবে ! এমন কিছু কিছু জিনিস সে মেয়েটিকে দেবে যা মেয়েটির ভাবনার বাইরে। তখন বীণা ওকে এমন পাগলের মতো জড়িয়ে ধরবে ! এই মুহূর্তটির জন্য সে অনেক কিছু করতে পারে !
তারপর থেকে রুটিন হয়ে গেলো বীণার ! সুযোগ পেলেই পুকুরে নামবে। গলা জলে ডুবে বা চিৎ সাঁতার কাটতে কাটতে গুনগুন করে গান গাইবে ! বীণার শাশুড়ি জোহরা খাতুনের এ নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই !
জোয়ান বউয়ের এ কি কাণ্ড ! সেও তো এই বাড়ির বউ ছিলো ,এতো আদিখ্যেতা তো করে নাই সে। আর জাফরের বাপ তো ছিলো সাক্ষাত দারোগা ! বাড়িতে এসে হাঁক ছাড়লেই জোহরা বেগম কেমন চুপসে যেতেন! যাবেনই না কেন? স্বামী বলে কথা ! মুরুব্বী না ! কিন্তু নিজের ছেলের বউ আর ছেলের নির্লজ্জতায় তার মাথা কাটা যায় ! যখন তখন ঘরের দরজা বন্ধ ! বউকে নিয়ে পুকুর পাড়ে বসে গান বাজনা ! ছিঃ ছিঃ ! মানুষে নানা কথা বলে। সেদিন পাশের বাড়ির মনোয়ারা ভাবি এসেছিলেন ! বউকে খুঁজে না পেয়ে জোহরা বেগম রাগের মাথায় কিছু কথা বলে ফেলেছিলেন উনাকে।
উনি তো আকাশ থেকে পড়লেন ! এ কেমন বউ ! মফঃস্বলে কি এসব চলে নাকি ! এ তো দেখছি বড় শহরের মেয়েদের মতো বেলাজপনা ! তা বাপু , তোমার ছেলে তো এই ছোট শহরেই মানুষ ! সে কিছু বলতে পারে না বউকে ! না বিয়ে করে বউয়ের ভেড়া হয়েছে !
জোহরা খাতুন নিজের ভুল বুঝতে পেরে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলেন ! এ কি করলো সে। মনোয়ারা ভাবি তো এখন সারা পাড়া রাষ্ট্র করবে ! নাহ ! এই অলক্ষ্মী বউটার জন্য নিজের ছেলে সম্পর্কেও মানুষ বলতে ছাড়লো না ! আজ বাড়ি আসুক জাফর ! বউকে কড়া শাসন করাতে হবে ছেলেকে দিয়ে। ঘরের বউ ! ঘরকন্যা করবে , সেলাই ফোঁড়াই করবে , নামাজ রোজা করবে ,তা না । দিন রাত শুধু ধিংধিং করে বেড়ানো । ভর দুপুরে পুকুর পাড়ে বসে গান বাজনা ! আল্লাহ ! জীনের আছর নেই তো !! ভাবতেই গলা শুকিয়ে যায় তাঁর !আজ জাফরের সাথে কিছু কথা বলতেই হবে !
জাফর বাড়িতে আসতেই ইশারায় ছেলে কে ঘরে ডেকে নেন তিনি। দূর থেকে বীণা তাকিয়ে দেখে ।তারপর আনমনে হেঁটে পুকুরের দিকে হাঁটতে থাকে । মা ,ছেলে কথা বলুক ! এই সুযোগে সে কচ্ছপের বাচ্চাগুলো দেখে আসুক । কি সুন্দর তিনটা বাচ্চা ! পানিতে ভেসে থাকা পচা নারকেলের খোলে বসে ওরা রোদ পোহায় !বীণা মাঝে মাঝে ওদের গান শোনায় !

জাফর মায়ের অভিযোগ শুনে হেসে ফেলে ! মা ! কি বলো এসব ! বীণা অত্যন্ত ভদ্র মেয়ে ! একটু ছেলেমানুষ আছে এই যা !
ছেলেমানুষ ! তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন জোহরা খাতুন । আমার এই বয়সে আমি মা হয়েছিলাম । তাও প্রায় ৩ বছর বয়স তখন তোর !
মা , সেই যুগ কি আছে ?এখন এই বয়সে তো বিয়েই হয় না মেয়েদের । বীণার বাবা তো রাজিই ছিলেন না। ইয়াসিন চাচা ঘটকালী না করলে এই বয়সে কি ওর বিয়ে হতো ?
কেন? ওর বাপ কি এমন তালেবর ? শহরে থাকলেই মাথা কিনে নেয় নাকি ! সামান্য বই এর দোকানদার তাঁর আবার এতো গরম !
ছিঃ !মা , এগুলো বলে না ।
কেন ? বললে কি হবে? তোর বউ শুনে ফেলবে? শুনে কি করবে ? আমাকে মারবে ?
মা ! থামো তো ,খেতে দাও। খিদে পেয়েছে ।
আমি কেন খেতে দেবো ? তোর সাধের বউকে ডাক ! ঘরের বউ তো না , যেন সিনেমার হিরোইন ! সারদিন বনে বাদাড়ে ঘুরাঘুরি ! গান বাজনা ! আমার হয়েছে জ্বালা ! পোড়ার চোখে আল্লাহ যে কতো কিছু দেখাবেন !

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে আসে জাফর ! ও কি করে বোঝাবে মাকে ! বীণা তো আর দশটা সাধারণ মেয়ে না ! রাতের বেলা গুটিসুটি হয়ে যখন ওর বুকের মধ্যে মেয়েটা ঘুমিয়ে থাকে , তখন মনে হয় ও যেন একটা ছোট্ট মেয়ে।
ঘুমের ভিতর জাফর পাশ ফিরে শুলেই ঘুম ভেঙে যায় বীণার । এই , এই এদিকে এসো না। আমাকে বুকের ভিতর রাখো ! আমার ভয় করে তো !
জাফর একটা অজানা মায়ায় জড়িয়ে গেছে ! ও ভেবে পায় না ,ওর মতো একটা সাধারণ ছাপোষা মানুষকে বীণার মতো একটা মেয়ে কেন এতো ভালোবাসবে ?

একজন সৎ মানুষের সাথে মেয়ে বিয়ে দিতে পেরে খুশি হয়েছিলেন ইলিয়াস আহমেদ। মা মরা মেয়ে ! জাফরের সংসারে কেবল বৃদ্ধ এক মা। মেয়েটা সচ্ছলতায় না হোক শান্তিতে থাকবে। নইলে এতো ছোট মেয়েকে তিনি বিয়ে দিতেন না। তিনি সারাদিন দোকানে থাকেন , মেয়েটা একা একা থাকে ! ইয়াসিন প্রস্তাব দিলে তিনি সব ভেবে রাজী হয়ে গেছিলেন । হোক একটু গ্রাম্য পরিবেশ , বীণা তো আর তেমন শহুরে মেয়েদের মতো না। ও নিজের মনেই থাকে । রাজ্যের বই পড়ে , মেয়েটাকে কতো শখ করে গান শেখালেন । রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি মেয়ের ঠিক বাবার মতো টান !কতো রাত যে বাবা মেয়ে গান করে কাটিয়েছেন ! এসব ভাবলে তাঁর বুকের ভিতরটা হু হু করে ওঠে ! কালই যাবেন মেয়েকে দেখতে ! পাগলীটা দুই দিন ফোন করে না । তিনিও দোকানের কাজে ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করেননি ! নিশ্চয়ই মেয়ে রাগ হয়েছে ! হোক , কাল তিনি নিজে গিয়েই চমকে দেবেন মেয়েকে ।
ভাবতেই হেসে ফেললেন ইলিয়াস সাহেব। তাঁর মেয়েটা বড় অদ্ভুত ! বাবাকে চমকে দেবার জন্য তাঁর কতো যে ফন্দি ! একদিন দুপুর বেলা তিনি ভাতঘুম শেষে বিছানায় উঠে বসতেই অবাক হয়ে দেখলেন, বীণার মা বারান্দায় বসে আছেন। তিনি তাজ্জব হলেন। মৃত মানুষ কি করে ফিরে আসে। সেই বিয়ের খয়েরী বেনারসি , পায়ে আলতা ! মাথায় আলতো করে ঘোমটা আর পা দোলানো ! তাঁর গলা শুকিয়ে এলো ! তিনি অস্পষ্ট শব্দে ডেকে উঠলেন , রানী !তিনি বীণার মাকে আদর করে রানী ডাকতেন। তিনি ডাকতেই বীণার মা হাসিতে ভেঙে পড়লেন ! আরে ! এ দেখি বীণা ! তিনি লজ্জা পেলেন খুব ! মেয়েটা এভাবে চমকে দেবে ভাবেনি ।

ও বাবা , তুমি মাকে এখনও এত্ত ভালোবাসো ! রানী ! কি সুন্দর করে যে তুমি ডাকলে !
ইলিয়াস সাহেব মন খারাপ করে বসে থাকেন । ৩ মাস হয়েছে মেয়েটা নাই বাড়িতে ! এখন আর কেউ লুকিয়ে থেকে তাঁকে চমকে দেয় না, ভোর বেলা গরম চায়ের বদলে গরম শরবত দেয় না।প্রতিদিন নতুন বই পড়ার বায়না করেনা ! কেমন আছে মেয়েটা? ওরা কি মেয়েটাকে আদরে রেখেছে !ইলিয়াস সাহেবের চোখটা জ্বালা করে উঠলো !

ও বউ , বউ । দেখো তোমার বাপ এ আসছে । কিছু খাইতে দিও , আমি একটু নামাজ সেরে আসি ,বলে ইলিয়াস সাহেব কে বসিয়ে জোহরা বেগম নিজের ঘরে চলে গেলেন !
বাবা'কে দেখে বীণা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না !জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলো । বাবা , তুমি এতো শুকিয়েছো ? ইশ ! এই কদিনে আমার বাবাটা কেমন বুড়ো হয়ে গেছে। এ মা ! এতো চুল পেকেছে কিভাবে ! হাজার প্রশ্নে সে বাবাকে অস্থির করে তোলে !
ইলিয়াস সাহেব হাসতে থাকেন। যাক মেয়েটা ভালোই আছে । জামাই কই রে মা?
এই তো বাবা , একটু বাইরে গেছে । দাঁড়াও আমি ওকে ফোন দেই । বলেই মেয়েটা প্রজাপতির মতো উড়ে ভিতরে গেলো । মেয়ের যাবার পথে তাকিয়ে তাঁর খুব অচেনা একটা অনুভুতি হলো ! তাঁর অতি আদরের মেয়ে ! এমন প্রজাপতির মতো থাকবে তো সারাজীবন ! ভাবতে ভাবতে তিনি উদাস হয়ে যান !কখন যে ঘরে বেয়াইন সাহেবা আসছেন টের পান নাই !
কি ভাই ! আপনিও দেখি আপনার মেয়ের মতো ! হুঁশ নাই একেবারে ! দুইবার ডাক দিলাম কথা বলেন না ! বাপ আর মেয়ে কি ভিন্ন জগতে থাকেন নাকি !

জাফরকে ফোন করে ফিরতেই বীণা শুনতে পেল শাশুড়ির ঠেস দেয়া কথাগুলো ! তাঁর ভালো মানুষ বাবা টা কেমন মাথা নিচু করে বসে আছেন ! মহিলা তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা বলেই যাচ্ছেন ! খুব রাগ হয়ে গেলো বীণা ! এতদিন পর বাবা এসেছে তাঁকে দেখতে ! কি হয় একটু ভালো কথা বললে ! উনার নিজের মেয়ে হলে এমন বলতে পারতো ! বীণা শাশুড়ির এই সব ব্যবহারে অভ্যস্ত ! এক সময় ভেবেছিলো জাফর কে বলবে ! কিন্তু পরে ভেবেছে , থাক ! বেচারা কি করবে ? মা তো ! জাফর ওকে অনেক ভালোবাসে । ওর তাতেই হবে ! এইটুকু কষ্ট নাহয় সহ্য করে নেবে সে !
বিদায় নেবার সময় বাবা খুব শক্ত হয়ে ছিলেন। বীণাও । যেন ওরা প্রতিজ্ঞা করেছে , শাশুড়িকে তাদের চোখের জল দেখতে দেবে না। ইলিয়াস সাহেব শুধু বলেছিলেন , মা'রে ভালো থাকিস ! বীণা শুধু মাথা নেড়েছিল । অনেক বলেও বাবাকে আর কিছুক্ষণ রাখতে পারেনি।
জরুরী কাজে আটকা পড়ে যাওয়ায় জাফরের ফিরতে দেরি হয়ে গেলো , আবার বাজারেও গিয়েছিলো সে । ঘরে কি আছে কে জানে ভেবে সে একবারে বাজার করেই ফিরলো ! ফিরে মায়ের কাছে শুনতে পেলো, তাঁর শ্বশুর চলে গেছেন !
কেন এতো তাড়াতাড়ি গেলেন জানতে চাইলে জোহরা বেগম ঝামটা দিয়ে ওঠে , নে নে! অতো নাচানাচি করতে নেই। আসছে মেয়ে দেখতে মেয়ে দেখে চলে গেছে। কি কঠিন বাপ ! যাবার সময় একফোঁটা চোখের পানিও ফেললো না , মেয়েও তেমনি ! অমন পাষাণ কি করে হয় ! নিজের বাপের জন্যই দয়া মায়া নাই ! আমার যে শেষ বয়সে কি হবে !
মা ! তুমি সারাক্ষণ এগুলো বলে বলে , মেয়েটার মন খারাপ করে রাখো !
কি ! আমি সারাক্ষণ তোর বউ এর বিরুদ্ধে কথা বলি ! পেটের ছেলে হয়ে দুই দিনের বউ এর জন্য আমাকে এমন বলতে পারলি !
জাফর আর ঘরে ঢোকে না । বাজার নামিয়ে সে হনহন করে বের হয়ে যায় ! বীণা তাঁর ঘর থেকে সবই শোনে ! কি করবে সে?? মানুষটা কতো পরিশ্রম করে এলো ! বীণা একটা চিঠি লিখে রেখেছিলো । মানুষটাকে দেবে বলে । বালিশের নিচে এমন ভাবে রেখেছিলো চিঠিটা যাতে জাফর বিছানায় বসলেই চিঠির কোণা দেখতে পায় ! সে কতো ভালোবাসার কথা লিখেছিলো ! আর একটা খুব গোপন কথাও লিখেছিলো ! কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলো বলতে হবে মানুষটাকে ।
কিন্তু কি করে এসব বলে ও বুঝতে পারছিলো না। তাই চিঠিতে লিখেছিলো , এই যে শুনছো ? আমার একটা আঙ্গুল ধরো তো ? ধরেছ? এই দুই আঙ্গুলের একটার নাম ছবি আর এ্কটার নাম কবি !
তখন নিশ্চয়ই জাফর অবাক হয়ে জানতে চাইতো , মানে কি?
মানে কিচ্ছু না। আচ্ছা মানুষের বাচ্চার নাম কি কবি রাখা যায়? তাহলে কি সে কবিতা লিখতে পারবে??ভাবতেই এতো কষ্টের মধ্যেও বীণার চোখমুখ জ্বলজ্বল করে ওঠে ! মানুষটা নিশ্চয়ই বুঝে ফেলবে তখন। কি যে করবে !নিশ্চয়ই ওকে কোলে তুলে ঘুরবে কিছুক্ষণ !নাহ ! কিচ্ছু হলো না । ওর শাশুড়ি যে কেন এমন ও ভেবে পায় না । সবসময় উনার নিজের সাথে তুলনা করেন। ও বুঝতে পারে, মহিলা স্বামীর কাছ থেকে ঠিক বউয়ের আদর পায়নি। তারপর বিধবা হয়েছেন অল্প বয়সে। কষ্ট করে ছেলে মানুষ করেছেন । তাই তাঁর এই হীনমন্যতা ! এসব ভেবেই সে শাশুড়িকে ক্ষমা করে !
অনেক রাত করে সেদিন জাফর বাড়ি ফেরে । এদিকে বীণা বারবার ফোন দিয়ে লাইন পাচ্ছিলো না। চিন্তায় ওর বুকের ভিতরটা কাঠ হয়ে গেছিলো। জাফর ঘরে ঢুকতেই ও তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে । এলে?
হুম । খেতে দাও তো। খিদে পেয়েছে ! তুমি খেয়েছো !
না , একসাথে খাবো তো !তিনজন একসাথে না খেলে হয়?
মা এতো রাতেও খায়নি !তুমি একটু দেখবে না? বিরক্ত হলো জাফর !
মা তো কখন খেয়েছেন !বলে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে হাসলো বীণা ।
জাফর বললো , তাহলে তিনজনের কথা বলছিলে যে !
বীণা লজ্জায় মাথা নিচু করে চিঠিটা হাতে দেয় জাফরের । তারপর ছুটে পালায় ।
জাফর বোকার মতো চিঠি পড়তে শুরু করলো ! মুহূর্তে ওর মুখ আলোয় ভরে যায় ! এই পাগলী টা এতক্ষণ বলেনি নেই তাহলে তিনজন ! এই ছিলো কথার মানে ? গেলো কই এই রাতে পাগলীটা ?
বীণা ,এই বীণা ।নিশ্চয়ই পুকুর পাড়ে গেছে ! উফ ! মা কি সাধে রাগ হয় !রাত বিরেতে এখন তো একটু হুঁশ করে চলতে হবে !
জাফর এসে পুকুর পাড়ে বসা বীণাকে জড়িয়ে ধরলো ! বীণা আর লজ্জায় নেই ! ইশ ! মানুষটা সব জেনে গেছে !জাফরের বুকের মধ্যে বীণা মুখ রেখে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল !। একসময় জাফর বললো , এতো বড় খুশির খবর কি কেউ এভাবে দেয় !
তাহলে কিভাবে দেয়?
সাথে কিছু দিতে হয় না ?
যাহ্‌ ! তুমি একটা যা তা !
আরে ! আরে ! আমি কি অন্য কিছু চেয়েছি নাকি !আমি তো একটা গান শুনতে চেয়েছি ! তোমায় আমি এতো বড় একটা পুকুর দিলাম ! একটা রাজকন্যা দিলাম ! আমাকে একটা গান শোনাবে না ?
রাজকন্যা !
হুম !রাজকন্যাই চাই আমার । রাজকন্যার নাম রাখবো ছবি !
ছেলে ঘরে এসেছে বুঝতে পেরে জোহরা বেগম ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে পুকুর পাড়ে এলেন। যা ভেবেছেন ! ছেলের মাথাও গেছে !রাত দুপুরে এরা কি শুরু করছে ! তিনি কড়া গলায় ডাকতে যাবেন , ঠিক তখনি একটা গান ভেসে এলো ...ফুলে ফুলে ঢলে দলে বহে কিবা মৃদু বায় !
তিনি অবাক হয়ে গেলেন ! কে গাইছে এমন সুন্দর ! বউ ? বাহ ! ভারী মিষ্টি তো ! তাঁর চোখে হঠাৎ পানি চলে এলো ! মা মরা মেয়েটার জন্য তাঁর বুকের ভিতর এই প্রথম মুচড়ে উঠলো ! আহারে! মেয়েটা ! ওই তো তাঁর ছেলে মুগ্ধ হয়ে গান শুনছে। তাঁর মনে পড়লো , ছোটবেলায় জাফর ঠিক এমন করেই তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে ঘুম পাড়ানি গান শুনতো !তিনি কেমন সম্মোহিত হয়ে গেলেন। আস্তে আস্তে নিজের ঘরের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন । থাক, ওরা ওদের মতো ! তিনি আর কোনদিন কিছু বলবেন না । তাঁর ছেলে তো খুশি !আর কিছু চাইবার নেই মেয়েটির কাছে ! তাঁর কানে তখনো বাজছে - কি জানি কিসের ও লাগি প্রাণ করে হায় হায় !
আহা ! কি সুন্দর করেই না গাইছে মেয়েটা !
২৪০৭১২
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×