১ম বিশ্বযুদ্ধে, হিটলার একজন ডিসপ্যাচ রানার(বার্তা বাহক) হিসেবে জার্মান আর্মিতে যোগদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে, নিজ যোগ্যতাবলে তিনি কর্পোরাল পদে উন্নীত হন। যুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে এসে হিটলার একবার মারাত্মক আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সুস্থ হওয়ার পরে, হিটলার সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি। বরং তিনি মিউনিখে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। মিউনিখে অবস্থানকালে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়।
হিটলার তার আত্মজীবনীতে লিখেন, "মিউনিখের পরিস্থিতি আমাকে স্তব্ধ করল। সারা শহর বিশ্বাসঘাতক জাতিতে(ইহুদী জাতি) ভরে গিয়েছে। অবশ্য এটা আমি আগেই অনুমান করেছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে, তা ভাবতে পারিনি। দেশের প্রতিটা মানুষ কাইজারের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কিন্তু ইহুদীরা যুদ্ধের বিপক্ষে। তাদের সম্প্রদায় থেকে তেমন কেউ যুদ্ধ করতে আসেনি। অন্যদিকে, কমিউনিস্ট শুয়োরগুলোও জার্মানিকে ছেড়ে সোভিয়েতদের সমর্থন করছে!!!!! নিজ দেশের প্রতি ভালবাসার ছিটে ফোটাও নেই!!!!"
তিনি আরও লিখেন, " অফিস আদালত, কল কারখানার, বড় বড় পদগুলো ইহুদীদের দখলে চলে গিয়েছে। তাদের হাতে দেশ চালনার দায়িত্ব দেওয়া যায়না।
"আমি দেখলাম, অফিসের প্রায় প্রতিটা ক্লার্কই একজন ইহুদী, আর প্রায় প্রতিটা ইহুদীই একেকজন ক্লার্ক" (nearly every clerk was a jew and nearly every jew was a clerk)
***
মিউনিখে কয়েকদিন থাকার পর, হিটলার পুনরায় যুদ্ধক্ষেত্রে চলে যান। কিন্তু মিউনিখে ইহুদীদের দৌরাত্ম্য তাকে গভীর দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।
হিটলার ছিলেন এক অদ্ভুত চরিত্র। সাধারণ সৈনিকেরা তার আচার আচরণকে স্বাভাবিক মনে করত না। তিনি অন্যান্য সৈনিকের মত নারীবিষয়ক আড্ডায় যোগ দিতেন না। তিনি কখনো মদ স্পর্শ করতেন না।
হিটলার সম্পর্কে তার এক সহযোদ্ধা মন্তব্য করেন, "সে এক অদ্ভুত চরিত্র। ফ্রন্টে যুদ্ধ শেষে, সন্ধায় আমরা ট্রেঞ্চে ফিরে গিয়ে আড্ডা দিতাম। কিন্তু সে আমাদের সাথে আড্ডা দিতে আসতো না। অবশ্য আমাদের আড্ডার বিষয়বস্তুর সিংহভাগ ছিল নারী। এবং তিনি কখনো এই ব্যাপারে আলোচনা করতে উৎসাহবোধ করতেন না।
দেশের জন্যে আমরাও তো যুদ্ধ করছি। কিন্তু তিনি সবচেয়ে আলাদা। আমাদের পরিবারের পিছুটান আছে। তার তাও নেই। বাস্তবিকই, আমরা বুঝতে পারি যে, দেশপ্রেমের সংজ্ঞা, তার ও আমদের ক্ষেত্রে ভিন্ন।"
***
হিটলার সারা জীবন মদ পরিহার করে চলতেন। শৈশব জীবনে একবার মাতাল হয়েছিলেন। তাও মা এর মৃত্যুর কষ্ট ভুলার জন্যে। পরবর্তী বয়সে সাস্থ্য বজায় রাখবার জন্যে মদ ও প্রাণীজ আমিষ সম্পুর্নরূপে বাদ দেন।
***
১৯১৮ সালের ১০ নভেম্বর, জার্মানির আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। সেই সময় হিটলার আহত অবস্থায় পাসওয়াক হাসপাতালে পড়ে ছিলেন। খবরটি শুনে তিনি পাগলপ্রায় হয়ে যান। অনেক বছর পর বুক ফেটে কান্না আসে তার। বালিশে মুখ বুজে তিনি সেই কষ্ট চাপা দেন।
তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেন, "সবকিছু তাইলে বৃথা গেল। বৃথা গেল সব কষ্ট, সব আত্মত্যাগ। বৃথা গেল ভয়ঙ্কর সব দিনগুলোর কষ্ট, যখন আমরা জীবন বাজি রেখে দেশের জন্যে যুদ্ধ করছিলাম। বৃথা গেল ২০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ। তবে কি তারা এসবের জন্যে জীবন দিয়েছেন? কতগুলো বেজন্মা পাপীর দল, প্রিয় পিতৃভূমিকে নিঃস্ব করবে, আর এই কারনেই কি ২০ লাখ জার্মান শহীদ হল?"
***
১ম বিশ্বযুদ্ধের জন্যে সম্পুর্নরূপে জার্মানিকে দায়ী করা হয়। পুরো যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে তাদের বাধ্য করা হয়। হাজার বছরের জার্মান জাতির গৌরব ধূলিসাৎ করতে, তাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিতে, আর কোনোদিন যেন ক্ষমতার লড়াইে নামতে না পারে এই লক্ষ্যে জার্মানদের অন্যায় ভারসাই চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়।
***
হিটলার লিখেন, "আমি বুঝতে পারছি, সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। একমাত্র বোকা, মিথ্যুক আর বিশ্বাসঘাতকেরাই শত্রুর কাছ থেকে ভাল মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার আশা করতে পারে।"
" প্রতিটা রাত আমি নানাবিধ ভাবনায় পার করে দিই। যতই ভাবি ততই তাদের প্রতি আমার ঘৃণাবোধ বাড়তে থাকে। অথচ আমরা কি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারতাম না? দেশকে যারা ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যে বেঁচে দিয়েছে তাদের ক্ষমা নেই। তারা বেজন্মা পাপী। কঠোর শাস্তিই তাদের প্রাপ্য।"
হিটলার আরও বলেন, "এসব ভাবতে গেলেই আমার চোখ জ্বালা করতে শুরু করে।(১ম বিশ্বযুদ্ধে হিটলার শত্রুর গ্যাস আক্রমণের শিকার হন। বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে চোখ জ্বালা কষ্ট সহ্য করতে হয়)। কিন্তু এই জ্বালা আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরণকে বন্ধ করতে পারেনি।"
আর তারপর, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন।
"আমি আমার নিয়তি নির্ধারণ করে ফেলেছি। আমি ততখানত সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি রাজনীতি শুরু করব।"
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার লেখার লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৫৭