somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু এখন বাসে

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্র অবলম্বনে]

ঘুম ভাঙল বাঁশির আওয়াজে। কে যেন করুণ সুরে বাঁশি বাজাচ্ছে। পরক্ষণেই মনে হলো বাঁশি নয়, আমার ফোন বাজছে। ফোন ধরতেই খালু সাহেবের চাপা গলা শোনা গেল-
-কে, হিমু নাকি?
-হুঁ।
-বিরাট বিপদে পড়েছি। তুমি দ্রুত চলে আসো, কুইক!
-এখন আসতে পারব না, শীতের সকাল উপভোগ করছি।
-আরে রাখো তোমার শীতের সকাল! এই মহিলা আমার জীবন শেষ করে ফেলছে আর তুমি আছ শীত নিয়ে।
-কোন মহিলা?
-কোন মহিলা মানে? তোমার খালা। তোমার খালার জ্বালায় আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। প্লিজ, হেল্প মি!
-আমি কী হেল্প করব? আপনার বউ, আপনি সামলান। আমাকে ডাকছেন কেন?
-ফাজলামো কোরো না হিমু, আমি খুবই বিপদের মধ্যে আছি। বিপদের সময় ফাজলামো অসহ্য লাগে। তুমি আধা ঘণ্টার মধ্যে আমার সাথে দেখা করবে। ইটস মাই অর্ডার।
এ পর্যায়ে খালার কথা শোনা গেল ‘ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলছ? দেখি, হ্যালো···হ্যালো···’
আমি চুপ করে রইলাম। খালার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হলো। খালা হ্যালো হ্যালো করতেই লাগলেন। আমি ফোন কেটে দিলাম। খালা আবার ফোন করলেন। এবার আমি ফোন বন্ধ করে দিলাম। মনে হচ্ছে কঠিন গিট্টু লেগেছে।
বিছানায় বসেই দিনের পরিকল্পনা করতে লাগলাম। প্রথম কাজ হচ্ছে সুরুজ মিয়ার দোকানে বসে চা খাওয়া। সুরুজ মিয়ার চা অসাধারণ পর্যায়ের। চা বানানোর র‌্যাংকিং থাকলে সুরুজ মিয়া নিশ্চিন্তে ১ নম্বর স্থান দখল করে নিত।
সুরুজ মিয়া আমাকে দেখে হাসিমুখে বলল, কেমুন আছেন? শইলডা ভালা?
আমি মাথা নাড়লাম।
সুরুজ মিয়া গরম পানিতে কাপ ধুয়ে আমাকে চা দিল। চায়ে চুমুক দিয়েই আমার মন ভরে গেল। অসাধারণ চা! এই চা বারবার খাওয়া যায়। আমি চা খেতে খেতে বললাম-
-সুরুজ মিয়া, স্বর্ণের ভরি কত জান?
-ভাইজান মশকরা করেন? স্বর্ণের দাম আমি কেমনে বলব? চাপাতির দাম হইলে একটা কথা ছিল। স্বর্ণ দিয়া কি কাম? বিবাহ করবেন?
-তোমার হাতটা সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিতাম। দূর থেকে মানুষ দেখতে আসবে, সোনা বাঁধানো হাত দিয়ে সুরুজ মিয়া চা বানাচ্ছে।
-কি যে কন ভাইজান। সবই আফনের দোয়া।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। আজকাল টিকিট সিস্টেমের বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। টিকিট কাটো, লাইনে দাঁড়াও, বাসে ওঠ। এটা নিয়েও পিতার কিছু উপদেশ ছিল। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। পিতা সম্ভবত আরাম-আয়েশ ত্যাগ করতে বলেছিলেন। তবে বাসে ওঠায় আরামের চেয়ে ঝামেলা বেশি। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর গাদাগাদি করে বাসে উঠে ভিড়ের মধ্যে চ্যাপ্টা হওয়াকে আরাম বলা ঠিক হবে না। আমি টিকিট কেটে একটু সামনে এগিয়ে দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার পেছনে বিরাট লাইন তৈরি হয়েছে। একজন এসে একটু হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই এটা কিসের লাইন?’
‘মানুষের।’ আমি হাসিমুখে উত্তর দিলাম। তবে ভদ্রলোকের মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ‘সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, কিসের জন্য দাঁড়িয়েছেন?
-বাসের জন্য।
-আপনি তো দারুণ ত্যাড়া লোক। সোজা কথায় উত্তর দিতে পারেন না? কোন বাস?
-মাই লাইন। আমি হাসিমুখে বললাম। লোকটা গজগজ করতে করতে পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
প্রায় আধা ঘণ্টা হয়ে গেছে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মানুষের হাঁটুর বাঁটি ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাসের দেখা নেই। সবাই কাউন্টারম্যানকে বকাঝকা করতে লাগল। তবে বকাঝকা গালাগালিতে রূপ নেওয়ার আগেই বাস চলে এল। লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলো লাইন ভেঙে হুড়মুড় করে বাসে উঠতে লাগল। আগে থাকায় আমিও কোনোমতে উঠে গেলাম। উঠে দেখি বাসভর্তি সিট, কিন্তু একটাও খালি নেই। পেছন থেকে মানুষ ধাক্কা মারছে। যেভাবেই হোক একটা সিট দখল করতে হবে। ডান পাশের সিটে কলেজ ড্রেস পরা একটা ছেলে বসে আছে। ছেলেটার নাম আসিফ, নেমপ্লেটে তাই লেখা। কোনোমতে ছেলেটার পাশে গিয়ে বললাম, ‘আরে আসিফ, কেমন আছ তুমি?’ ‘ভালো।’ছেলেটা বেশ অবাক হয়েছে।
-চিনতে পারছ না? আমি তোমার হিমু চাচা। তুমি কত ছোট ছিলে, এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছ। তোমাদের বাসা কি আগেরটাই আছে, না চেঞ্জ করেছ?
-আগেরটাই আছে। ছেলেটা কী করবে বুঝতে পারছে না। বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। আমি বললাম, ‘বুঝলে আসিফ, দাঁড়িয়ে থেকে পায়ে ঝিঁঝি ধরে গেছে। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়?’
-চাচা, আপনি বসেন। বলে ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। একটু গাঁইগুই করে আমি বসেই পড়লাম। যাক, এবার আর কোনো চিন্তা নেই। তবে আমি কিন্তু একটুও মিথ্যা বলিনি। ছেলেটার নাম আসিফ, সে আগে আরও ছোট ছিল এবং আমি বয়সে তার চাচার মতোই হব।
অনেকক্ষণ হলো বাস জ্যামে আটকে আছে। ড্রাইভার ইঞ্জিন বন্ধ করে ঝিম মেরে বসে আছে। হেলপার সামনের বাসের হেলপারের সাথে গল্প করছে। আর বাসের ভেতরে চলছে রাজনৈতিক আলাপ। নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হলো, কার কেমন পাওয়ার, এতগুলো মহিলা মন্ত্রী দেওয়া ঠিক হলো কি না, এগুলো নিয়েই বিশাল আলোচনা। তবে তাদের আলোচনা আমার কানে ঢুকছে না। বাসের সিটটা অত্যন্ত আরামদায়ক। নিশ্চয়ই চায়নিজ মাল। চায়নিজদের নাক বোঁচা হলেও এরা জিনিস খুব ভালো বানায়। আমার ঘুম চলে আসছে। খালু সাহেবের কথা ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম··

মুকিত আলমের লেখা
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×