somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তা নামের মাগীটার খুনের দায়ভার শান্তা মাগীকেই নিতে হল

৩১ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শান্তা বিছানায় বসেই ছায়া , ব্লাউজ ঠিক করছে । দিল ইসলাম লুঙ্গির গিঁট ঠিকমতো বেঁধে পান মুখে নিল । শান্তাকে বলল – যা তো , মায়ের ঘর থেইক্কা একটু রতন জর্দা নিয়া আয় । পানে জর্দা কম হইছে ।
শান্তা শাড়ি ঠিক করে জর্দা আনতে গেল ।

দিল ইসলাম প্যান্টের পকেট থেকে ঘড়ি বের করে দেখে নিল । বেলা প্রায় ৪ টা বাজে । দিল ইসলাম বেকার মানুষ । তার জন্য সময় কোন ব্যাপার না । তারপরও সে নিয়মিত ঘড়ি দেখে ।কারন টিভির সব অনুষ্ঠান তার সময় মতো দেখা চাই । ঠিক ৪টায় সময় একটা চ্যানেলে হিট হিন্দি গানের একটা অনুষ্ঠান দেখাবে । সে চ্যানেল ঘুরিয়ে তার পছন্দের জায়গায় আসলো । এইত অনুষ্ঠান মাত্র শুরু হচ্ছে । এক্কেবারে ঠিক সময়মতো ।

---ওই , ছেরি ; কতক্ষন লাগে জর্দা নিয়া আসতে ! মুখের মইধে কি সারাদিন পান ডুকাইয়া বইয়া থাকমু ? শালীর বাপ হইছে একটা বোকাচুদা , মাইয়া হইছে আরেক মাগী ! তাড়াতাড়ি জর্দা নিয়া আয় ।

দিল ইসলাম টিভির সাউন্ড বাড়াতে বাড়াতে শান্তাকে ডাক দিল । টিভিতে “ মুন্নি বদনাম হুয়ি “ গান হচ্ছে । এই গান দিল ইসলামের খুব পছন্দ । গানের তালে তালে দিল ইসলাম পা দুলাচ্ছে । মাঝে মাঝে সূর ও ভাঁজছে । শান্তা বেগম মাথায় ঘোমটা টেনে জর্দার প্লেট নিয়ে আসলো । সাবধানে দিল ইসলামের পায়ের কাছে রেখে চলে যাবে এই সময় দিল ইসলাম ডাক দিল –
ওই মাগী , যাস কই ? সক্কালবেলায় যে কইছিলাম ডান পাডা ম্যাজম্যাজ করতাছে কানে ডুকছিল !

--- শান্তা ক্ষীণ স্বরে জবাব দিল – “ মা কলপাড়ে কাপড় ধুইতে ডাকতেছে । কাপড়গুলান ধুইয়া পরে আসি ?
দিল তিরিং করে উঠে দাঁড়ালো । -- “ কি ! মুখে মুখে কথা কস মাগী কুনখানকার ! সারাদিন করস কি যে এখনো কাপড় ধুয়া হইল না ? স্বামীর পা টিপ্পা দিব্যি এইডাতেও অজুহাত ! বলি এই যে আমার এতো ভাত গিলতাছস , ভাতটা আসে তোর কোন চিপা দিয়া ! আটটা বছর ধইরা তোরে বিয়া করছি , আমার লাভডা কি হইল ? তোর বাপরে যে টাকা দিবার কইছিলাম তার কি হইল ? আমার টাকা কই ?

দিল ইসলামের গলার স্বর ভরাট । জোড়ে কথা বললে সারা বাড়ি গমগম করে ।
দিলের কথা বাইরের থেকে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে । উঠানে বিড়ি ধরিয়ে টান দিচ্ছে দিলের ছোটভাই । সে শুনতে পারছে ভাইজান ভাবীরে ধরছে । শালীর ছেরিডা টাকা দিতাছে না । শালা ভাইজানও বিয়া করছে এক কামলার ছেরিরে । তারা সবাই ভাবছিল বিয়ার পর শান্তার বাড়ি থেকে টাকা আসবে । কোথায় কি ! ছোটলোকেরা টাকাই দিতে পারতাছে না । এই টাকার জন্য কতো কিছু আটকাইয়া আছে । পাওনাদারদের ভয়ে গঞ্জের জুয়ার আড্ডায় কতদিন ধরে সে যেতে পারছে না । এদিকে ভাইজানের কাপড়ের দোকান ভাড়া করা টাকার জন্য আঁটকে আছে । ছেরিটা টাকা দিলেই সব হয়ে যায় ।
সে অর্ধেক বিড়ি খেয়ে বাকিটা ফেলে দিল । মাগীরে আবার আজ ভালমত ধরতে হবে ।

ঘরে গিয়ে দেখে মা হাজির । তিনি খুন্তি উচিয়ে কথা বলছে ।
- ওরে বাপধন দিল ! কি হারামজাদিরে ঘরে আনলাম । পুরা শয়তান একটা । বাড়ির একটা কামের মধ্যে নাই । সারাদিন টিভি দেখার মধ্যে আর বাপের বাড়ি যাইবার তালে । আমি কিছু কইতে গেলেই আমারে চোখ রাঙ্গায় । একটু কাম করতে কইলেই চেইত্তা যায় । তোরা তো বাইরে থাকস ! আমি এইডারে লইয়া সংসারে থাকি । আমার হাড় জ্বালাইয়া ফেলতাছে এই হারামজাদি । কিন্তু কিছুই কইতে পারি না । ভয়ে থাকিরে বাপধন কবে যে আমার গলায় বটি বসাইয়া দেয় ।

শান্তা মাথা নিচু করে দিল ইসলামের পা টিপে যাচ্ছে । তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । হটাত দিল কষে ডান পা দিয়ে শান্তার কুনুইয়ে লাত্থি বসাল । শান্তা ছিটকে পড়লো দরজার কাছে । ইতিমধ্যে দিলের ছোট ভাই নাট্যমঞ্চে হাজির । সে চুলির মুঠি ধরে শান্তাকে টেনে তুলে ঘুরিয়ে পিঠ বরাবর আরেক লাত্থি বসালো । শান্তা এইবার সরাসরি খাটের কোনায় বাড়ি খেয়ে পড়ে গেল । তার আর্তচীৎকারে ঘরের পরিবেশ ভারী হয়ে গেল । প্রচণ্ড বেথায় তার মুখের রগ ভেসে উঠেছে । শ্বাস নিতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে । পীঠে বেথা করছে বেশী , সে হাঁটু মুড়ে পড়ে আছে । কান্নায় তার আচল ভিজে উঠেছে ।

দিল পানটায় স্বাদ পাচ্ছিল না । প্লেট থেকে জর্দা মুখে পুড়লো । কিছুক্ষণ চিবিয়ে স্বাদ টের পেয়ে মাটি থেকে শান্তাকে চুল ধরে টেনে তুললো ।
- বল টাকা কবে দিবে তোর শুয়োরের বাচ্চা বাপ । অনেক দিন ধরে কইতাছি । এইবার টাকা দিতেই হবে । তাড়াতাড়ি ক , কবে টাকা হাতে পামু ?
শান্তা এখনো শ্বাস নিতে পারছে না । তার বড্ড পানির পিপাসা পেয়েছে । সে ক্ষীণ স্বরে একবার পানি উচ্চারণ করতে পারলো ।

দিলের ছোট ভাইয়ের তোর সইছে না ।
- ভাইজান এতো কথা কওনের কি আছে । হাত পা লুলা কইরা দেও । দেখবা হারামজাদির বাপ মা মা কইরা ঠিকই টাকা জোগাড় করবো ।
দিল কিছু না বলে আবার জর্দা, আর সুপারি মুখে দিল । পান শেষ তবে সুপারির সাথে জর্দা খাইতে আলাদা মজা আছে । স্বাদ জমে ।
দিলের ছোট ভাইয়ের মাথা গরম , এই মাগীর জন্য তার জুয়ার আড্ডা আঁটকে আছে । আজ মাইর দেয়ার ভাল সুযোগ এসেছে । সে শান্তার গলা চেপে ধরে শান্তাকে ঝাকাতে লাগলো । কতক্ষন কি হল জানে না । হটাত দিল লক্ষ্য করলো , তার বউ শান্তা কানতাছে না । চিৎকারের কোন শব্দ নেই । শান্তার দেবর ও ব্যাপারটা খেয়াল করে তাকে ছেঁড়ে দিল । দিল ইসলাম নাকের কাছে হাত নিয়ে দেখে শ্বাস পড়ে না । স্থির । সে তার ভাইকে বলল –
“তুই এইডা কি করলি “ ।

দিনমুজুর মিয়া সরদারের মেয়ে শান্তা বেগম মরে গেল । তুলনামূলক ক্ষমতাশালী দিল ইসলাম পরিবার এই বিপদে ভয় পেল না । স্থানীয় ইউপি সদস্য আজি বেপারিসহ অন্যান্য মাতব্বরদের নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে ঠিক করা হল শান্তা বেগমের মৃত্যুর দায় শান্তা বেগমকেই নিতে হবে । সবাই জানবে শান্তা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে । কারন সে খারাপ মেয়ে । খারাপ মেয়ে , নটি গিরি করবে , ইচ্ছা হলে আত্মহত্যা করবে এইডাই নিয়ম ।

মেয়ের অসহায় বাপের মুখে লাগাম লাগানোর দায়িত্ব দেয়া হল ইউপি সদস্য আজি বেপারীর হাতে । সে শান্তা বেগমের বাপকে বলল –
“ মাইয়া মইরা গেছে এখন মামলা কইরা আর কি হইব , তোগো ৯০ হাজার টাকা বাবদ চাইরডা গরু দিতাছি , তোরা এইডা লইয়া বাড়াবাড়ি করিস না । করলে কিছুই পাবি না । “
সহজ সরল মিয়া সর্দার গ্রামের মাতব্বরদের উপরে আর কোন কথা বলতে পারে নাই ।
সব কিছু ঠাণ্ডা । বাতাস ঠাণ্ডা , জল ঠাণ্ডা , গরু ঠাণ্ডা , মানুষ ঠাণ্ডা । দাফন হয় শান্তা । এবং এইভাবেই শেষ হয় শান্তা বেগম নামের ২৫ বছর বয়সী এক মেয়ের গল্প । আরও অনেক গল্প লেখা হবে , আরও অনেক লাশ দেখা হবে । আর আমরা ! আমাদের কি ! আমরা তো আম্রাই থাকবো , আমরা তো শান্তা না । আমরা তো আমরা !

(- শরীয়তপুরের নড়িয়ায় শান্তা বেগম ( ২৫ ) নামের গৃহবধুকে “ পিটিয়ে মেরে “ আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে । পড়ে অবস্থা বেগতিক দেখে ক্ষতিপুরন হিসেবে মেয়ের বাবাকে চারটি গরু দেয়ার আশ্বাসে লাশ দাফন করেছে স্থানীয় মাতবরেরা । নড়িয়া থানার ওসি আবুল খায়ের ফকির জানান , পুলিস সুতরহাল করে হত্যা করা হয়েছে এমন কোন আলামত না পাওয়ায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে । তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে । ঘটনার পর থেকে শান্তার শ্বশুরালয়ের সবাই পলাতক এমনকি সালিশের কাউকে পাওয়া যায়নি – সুত্র -- দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন , ২৯ আগস্ট , ২০১২ )



এবং এইভাবেই শেষ হয় শান্তা বেগম নামের ২৫ বছর বয়সী এক মেয়ের গল্প । আরও অনেক গল্প লেখা হবে , আরও অনেক লাশ দেখা হবে । আর আমরা ! আমাদের কি ! আমরা তো আমরাই থাকবো , আমরা তো শান্তা না । আমরা তো আমরা ! !

ছবি - নেট
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৫২
৪৭টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×