ঘুরে এলাম বাংলাদেশ। এক বছর পর দু-সপ্তাহের জন্য দেশে গিয়েছিলাম। কি দেখলাম, কি শিখলাম সেসব নিয়েই এই ব্লগ।
রাজধানী ঢাকা: রাজধানী ঢাকা সেই আগের মতই আছে। তেমন পরিবর্তন চোখে পরলো না। বিমানবন্দরের সামনে থেকে বনানী যেতে অনেকগুলি ফ্লাই-ওভারের দেখা মিললো। ফ্লাই-ওভার গুলিতে কোন কাজের লোক চোখে পরলো না। কবে যে কাজ শেষ হবে তা জানিনা। হলেও কতটুকু কাজে দেবে সেটাও জানিনা।
যানবাহন সংকট আগের মতই আছে। কোন পরিবর্তন চোখে পড়ল না। মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের এখন তাই বাড়ির চেয়ে গাড়িটি বেশী প্রয়োজনীয় বলে মনে হলো। যদিও সংবাদপত্র গুলো প্রাইভেট গাড়ির কুফল নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন উপদেশ বাণী শুনিয়ে পাতা ভর্তি করে। তবুও পরিস্হিতি দেখে মনে হলো ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া মান-সম্মান চলাফেরা করা অনেক কঠিন।
গোটা দেশেই মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ঢাকায় যেহেতু অবস্থাসম্পন্নরাই থাকে তাই তাদেরকে খুব একটা বেশী চিন্তিত মনে হলো না।
বিশাল বাংলা : বিশাল বাংলা ধীরে ধীরে জনসংখ্যার কারনে ছোট হয়ে আসছে। চারপাশে বিপুল বিক্রমে ইট-সিমেন্টের কাজকর্ম চলছে। নতুন নতুন বারিঘর উঠছে। নিয়ম কানুন কিছু নেই। নির্মান কাজই মুখ্য। কৃষকের খুব দুর্দিন যাচ্ছে । শহরের মানুষরা সেই খবর জানেনা। জানার কথাও না। ঈদে দেখলাম অধিকাংশ কৃষকই নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারে নাই। না পারারই কথা। এখন দেশে কাপড় কেনার চেয়ে বিদেশে দেশের কাপড় কেনা যুক্তিযুক্ত মনে হয়।
দেশে আবহাওয়ার পরিবর্তন তা খুব চোখে পড়ল। মরুকরণ চলছে বেশ দ্রুত। আবহাওয়া বেশ গরম। বৃষ্টি-পাত খুব ই কম। গাছপালা কমে যাওয়াটাই কারন বলে মনে হলো।
মোটরসাইকেল: দেশে এবার মোটরসাইকেলের আধিক্যটা বেশ চোখে পড়ল। সব ইন্ডিয়ার মোটরসাইকেল। নতুন , বেহস ভালো মডেলর। ৯৫%র কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। প্রতিটি মোটরসাইকেলে সরকারের লস ২০ হাজার টাকার মতো।চালকদের লাইসেন্স নেই। চালকদের অধিকাংশই তরুণ। তারা চালিয়ে যাচ্ছে মনের সুখে। ঠিক যেমনি রাজনৈতিকরা দেশটিকে চালাচ্ছেন।
ব্যবধান: দেশে ধনী শ্রেণীর জীবন যাত্রায় রাইসকুকার, গরম পানি, টয়লেটে কমোড, ইন্টারনেট ইতাদি আসলেও গরীব শ্রেনীটা ঠিক আগের মতো গরীবই আছে। তারা তাদের জীবনের ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছে। কারন তাদের ইনকাম সোর্স একটাই। সেখানে হয়তো সামান্য আয় বেড়েছে। কিন্তু ১২% মূল্যস্ফীতির চাপ তাদের জীবনে পড়েছে অনেক গভীর ভাবে। তারা এটাও জানে তারা একটা লুপে পড়েছে। এই লুপ থেকে তারা উদ্ধার পাবার সপ্নও তারা দেখে না ।
এই লুপ থেকে মাঝে মাঝে দুই একজন গোবরে পদ্ম ফুল হয়ে ডাক্তার হত, ইঞ্জিনিয়ার হত এখন তারা সেই সপ্নও মরিচিকা হয়ে পড়েছে। দেশে ডাক্তার - ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। হচ্ছে তারাই যাদের ব্যাঙ্ক গুলোতে লাখ লাখ টাকার ব্যালেন্স আছে। তারাই পাচ্ছে সুযোগ নয়তো কিনছে সার্টিফিকেট। সমগ্র প্রক্রিয়াটাকে মনে হয় সেমিকন্ডাক্টর এর ব্যান্ড গ্যাপ এর মতো। যেখানে শুধু দুটি স্তর আছে। উচু স্তর আর নিচু স্তর । দুই স্তর এর মাঝে বিশাল গ্যাপ। এক স্তর হতে আরেক স্তরে যাওয়ায় একটাই উপায়। কাড়ি কাড়ি টাকা।সেটা হোক বৈধ বা অবৈধ।