somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বব্যাংকের কাছে নতজানু সরকার

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ সরকার ও দলীয় লোকরা অনেক উল্টোপাল্টা বাজে কথা বলার পর অবশেষে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের ঠিক আগে পদত্যাগী মন্ত্রী নিজেকে নিরীহ, পরিচ্ছন্ন ও সত্ প্রমাণের জন্য দেশের শাসনের শরিক বেশ কয়েকটি পত্রিকায় লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এত টাকা এভাবে বিজ্ঞাপনে যিনি খরচ করতে পারেন তিনি কত বিশাল অর্থসম্পদের মালিক, এটা বোঝার কোনো অসুবিধা কারও হয় না। শুধু তাই নয়, এইসব ভুঁইফোঁড় লোকরা এত টাকার মালিক হন কীভাবে, এটা বোঝারও কোনো অসুবিধা কারও নেই।
এখানে প্রসঙ্গত একটি কথা বলা অবশ্যই দরকার। সাবেক ওই যোগাযোগমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, এভাবে কথাটি বলা ঠিক নয়। যা সত্য তা হলো, এতদিনে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদত্যাগ যে এত দেরিতে হলো তার কারণ—আপাতদৃষ্টিতে কোনো রহস্যজনক কারণে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় দিতে অসম্মত বা অপারগ ছিলেন। তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এই ‘সত্’ মন্ত্রীকে তাঁর পদে বহাল রাখতে; কিন্তু মন্ত্রীর পদত্যাগ বিশ্বব্যাংক এত অনমনীয় ও কঠোরভাব দাবি করেছে যাতে শেষ পর্যন্ত ‘নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের’ ঘোষণা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বব্যাংকের দাবির কাছে মাথানত করতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও সমগ্র বাংলাদেশ সরকারের এই নতজানু অবস্থা যে দেশের জন্য কত অপমানজনক, এটা বোঝার ক্ষমতা তাঁদের নেই। এ ক্ষমতা যে তাঁদের নেই, তা অর্থমন্ত্রীর উক্তি থেকেই বোঝা যায়। তিনি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রসঙ্গে বলেছেন, এই পদত্যাগ তিনি করেছেন দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কারণে নয়। এটা করা হয়েছে বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণের জন্য! এই উক্তির অর্থ কী দাঁড়ালো? দাঁড়ালো এই যে, একজন ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তিকে বিশ্বব্যাংকের অন্যায় চাপের মুখে মন্ত্রিত্বের পদ থেকে অপসারণ করা হলো! এই ‘অন্যায়’ তাঁরা কেন করলেন? প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত তাঁদের এক সহকর্মীকে বিশ্বব্যাংকের সামনে বলি দিতে বাধ্য হলেন কেন? তিনি তো জাতীয় সংসদে বিশ্বব্যাংককে দুর্নীতিবাজদের আখড়া থেকে শুরু করে অনেক রকম গালিগালাজ করেছেন। বিশ্বব্যাংক এমনকি তার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিদেশি ব্যাংকের কাছেই ঋণের জন্য দ্বারস্থ তাঁরা হবেন না, নিজেদের অর্থায়নেই তাঁরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করবেন, একথা তিনি জোরগলায় বলেছেন। শুধু তাই নয়, এ ব্যাপারটি এতই সহজ যে তিনি বললেন, ‘পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করা কোনো ব্যাপারই নয়!’
একদিকে তাঁর ওইসব এলোপাতাড়ি দায়িত্বহীন কথাবার্তা ভোটারদের উদ্দেশে উচ্চারিত হলেও ভেতরে ভেতরে তাঁরা বৈদেশিক ঋণের জন্যই গোপনে সব সময়ই যোগাযোগ করছিলেন। এজন্য অর্থমন্ত্রী প্রায়ই প্রকাশ্যে এমন সব কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন, যা প্রধানমন্ত্রীর হঠকারী কথাবার্তার সঙ্গে সঙ্গতিহীন।
এডিবি, জাইকা ইত্যাদি ব্যাংকগুলো বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সমন্বিতভাবেই বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দিয়ে থাকে। এজন্য বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থায়ন চুক্তি বাতিল করার পর এডিবি তাদের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় এবং বিশেষত এই ঋণ দেয়ার ব্যাপারে তাদের অসুবিধার কথা বলে। তাছাড়া শুধু পদ্মা সেতুই নয়, বাংলাদেশে ১৪টি চলমান প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল। এসব মিলিয়ে এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা সামাল দেয়ার ক্ষমতা সরকারের আর নেই। আর এ কারণে বড়গলায় জাতীয় সংসদে ও তার বাইরে ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি কোনো ব্যাপারই নয়’ বলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংকের নির্দেশিত শর্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। শুধু সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী এবং চিহ্নিত কয়েকজন আমলার অপসারণই নয়, বিশ্বব্যাংকের অন্য শর্তগুলোও বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকার করতে হবে। এর জন্য সরকার এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত!
বর্তমান সরকারের জন্য এটা দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো যোগ্যতর লোক তাদের দলে নেই। দলের বাইরে তেমন কোনো যোগ্য এবং সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত লোকও নেই। এ কথা বলার কারণ বর্তমান অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারটি নিয়ে ইংরেজিতে যাকে বলে ‘চীনে মাটির দোকানে ষাঁড়ের মতো দাপাদাপি করে’ নিজেদের জন্য এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। অবশ্য এর জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে কতখানি দায়ী, এটাও ভাবার বিষয়। কারণ তিনি কোনা স্বাধীন লোক নন। বাজেট অধিবেশনের শেষ দিকে কয়েকটি কর প্রত্যাহার করার সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই বলেন, তাঁর কথামতই তিনি ওই করগুলো প্রত্যাহার করছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কথা তাঁর কাছে নির্দেশের মতো! মন্ত্রিসভার মধ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার। কিন্তু সমন্বিত কাজ এবং জোহুজুরগিরি এককথা নয়। অর্থমন্ত্রী শুধু কর প্রত্যাহারের ব্যাপারেই নয়, সব ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রীর গোপন ও প্রকাশ্য নির্দেশ অনুযায়ীই কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর যেহেতু কোনো সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল চিন্তার ক্ষমতা নেই, তাঁদের মধ্যে দুর্নীতির বেপরোয়া রাজত্ব চলছে এবং প্রতিদিনই তিনি নানা ধরনের আবোলতাবোল ও কটুবাক্য বলতে অভ্যস্ত, এ কারণে তাঁদের মন্ত্রিসভা ও দলের মধ্যেও কোনো শৃঙ্খলা নেই। প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শৃঙ্খলা ও প্রজ্ঞার অভাব তাদের মন্ত্রিসভা ও দলের মধ্যে প্রতিফলিত হওয়ার কারণে তাঁদের সঙ্কট ক্রমেই গভীর হচ্ছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপার যদি সত্য না হতো তাহলে শেষ পর্যন্ত সরকারকে বিশ্বব্যাংকের সামনে নতজানু হতে হতো না। ধোঁয়াটে কথাবার্তা বলে বিশ্বব্যাংকের চিঠির জবাবে যে কয়েকটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্বব্যাংককে দেয়া হয়েছে তার কপি অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের দিয়েছেন। তাতে বিশেষ কিছু না থাকায় তার গুরুত্বও কেউ দেয়নি। সরকার নিজের লেখা চিঠিগুলো প্রকাশ করলেও তাদের কাছে বিশ্বব্যাংকের লেখা চিঠি কিছুতেই তারা প্রকাশ করছে না। সেই চিঠির মধ্যে যদি এমন কোনো গুরুতর অভিযোগ এমন সব ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে না থাকত যাদের নাম প্রকাশ সরকারের ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য বিপজ্জনক, তাহলে চিঠিটি অবশ্যই প্রকাশ করা হতো। বিশ্বব্যাংক কোনো টাকা ছাড় দেয়ার আগেই কনসালট্যান্সি দেয়ার উদ্দেশ্যে কানাডীয় কোম্পানি লাভালিনের সঙ্গে অর্থ লেনদেন হয়েছে। বিশ্বব্যাংক তাদের বিবৃতিতে পরিষ্কার বলেছে, এর সঙ্গে কানাডীয় কোম্পানি লাভালিন, বাংলাদেশ সরকারের লোকজন ও কতিপয় ব্যক্তি জড়িত আছে। এই ব্যক্তিরা কারা? কানাডা, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশে বসবাসকারী সরকারবহির্ভূত এই ব্যক্তিদের বাঁচানো সরকারকে বাঁচানোর সঙ্গে যদি সম্পর্কিত না হতো, তাহলে বিশ্বব্যাংকের চিঠি প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় অবস্থানের কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে গিয়ে সরকার ও তার প্রধানমন্ত্রী দেশীয় অর্থনীতি এবং সেই সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যে ক্ষতিসাধন করেছেন, তার খেসারত কে দেবে? এর জন্য কার শাস্তি হওয়া দরকার?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×