ঘাস গুলো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।যখন ছোট ছিলো তখন এক আধটু বসা যেতো,আর এখনতো দাঁড়িয়ে থাকাটাই অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার।পায়ে ত্রিশুলের মত করে বিধেঁ।মালি কে ডেকে ঘাস গুলো ছোট করে বসার উপযোগী করা দরকার।অবশ্য বলতেই বা হবে কেন?ব্যাটার কি চোখ নেই?মাসে তিন হাজার টাকা বেতন দিয়ে যদি আমাকেই তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হয় তাহলে মালি রাখার মানেটা কি?আসুক আজকে ব্যাটা।এদেরকে আসলে কয়েকটা কড়া কথা না বললে সিধে হবে না।
বিকেলে লনে হেঁটে হেঁটে ভাবতে ভাবতে এসব দেখে শোভনের কেমন যেন মেজাজ টাই বিগড়ে গেল।যখনই কোন বিষয় নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভাবতে থাকে এবং কোন সমাধানের উৎস খুজে পায়না তখন শোভন বাড়ির সামনের লনটাতে গিয়ে মস্তিষ্কের না মেলা ক্যালকুলেশন মেলানোর চেষ্টা করে।সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ নাকি চিন্তা ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়,এই বিশ্বাস থেকে শোভনের এই লন প্রীতি।সবসময় যে কাজ হয় তাও নয়,তারপরও কেন জানি লনটাই শোভনের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।আর প্রিয় জায়গার সৌন্দর্য হানি যেকোন সৌন্দর্যপিয়াসী মানুষের মেজাজ বিগড়ে দেবে এটাই স্বাভাবিক।
আজও তেমনই একটা ক্যালকুলেশন মেলানোর জ়ন্য শোভনের এই লনে আগমন।কিছুতেই সে বুঝতে পারছেনা সৃষ্টি তার মনের কথাগুলো কিভাবে গ্গহন করবে?সে কি শোভনকে বুঝতে পারবে নাকি মেয়েদের চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী শোভনের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে?এসব কম্পলিকেটেড বিষয়গুলো ভাবতে ভাবতেই শোভনের যেন আজ সব কিছু অসার লেগে উঠছে। ওহহ! ভালো কথা,পরিচয়টাই দেয়া হল না সৃষ্টির। সৃষ্টি শোভনের কাজিনের বান্ধবী।অবশ্য পরিচয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যে তারা পরষ্পরের খুব ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছে।ঝামেলা আসলে সৃষ্টিকে নিয়েই। সৃষ্টির বয়ফ্রেন্ড সৃষ্টিকে ছেড়ে চলে গেছে কিছুদিন আগে।ফলাফল যা হয়,চূড়ান্ত রকম ভেঙ্গে পড়ল সৃষ্টি।দুনিয়াটাই তার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছিল।দোষটা অবশ্য পুরোটাই ছেলেটার। সৃষ্টির মনটাকে নিয়ে স্রেফ খেলাধুলা করে সময়মতো সৃষ্টিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল ছেলেটা।ফলে মানুষের প্রতি মানুষের যে বিশ্বাস সেটা আর সৃষ্টির মাঝে অবশিষ্ট নেই কারণ যেখানে ভালোবাসার মানুষটা তার সাথে এমন করতে পারে সেখানে অন্যরা তার সাথে কি করবে?,এটাই হল সৃষ্টির বক্তব্য।এরকম পরিস্থিতিতে সৃষ্টিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বন্ধু হিসেবে এগিয়ে গিয়েছিল শোভন।নানাভাবে সৃষ্টিকে স্বাভাবিক সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখাল সে।এধরনের পরিস্থিতিকে অতিক্রম করতে না পেরে কতজনের জীবন যে ধ্বংস হয়ে গেছে সেটা শোভন নিজের চোখের সামনে থেকে দেখেছে।আজ যখন তার বন্ধুটি এরকম পরিস্থিতির মাঝে তখন সে আর স্থির থাকতে পারেনি।এগিয়ে গিয়েছিল দ্বিধাহীনভাবে।
এখন সৃষ্টি অনেকটাই স্বাভাবিক।শোভনের কথায় হোক বা নিজের চেষ্টায় হোক সে আজ নতুন জীবনের উৎস মুখ খুজে পেয়েছে।বন্ধুর এই অবস্থায় শোভন আজ অনেক খুশি। কিন্তু এখন শোভন যে সমস্যায় পড়েছে এখান থেকে তাকে রক্ষা কবে কে? বন্ধুকে নতুন জীবনের ঠিকানা দিতে গিয়ে শোভন নিজেই যে আজ নতুন ঠিকানার বাসিন্দা হয়ে গেছে।বন্ধুর পাশে থাকতে গিয়ে সে যে আজ বন্ধুকেই হৃদয়ে স্থান দিয়ে বসে আছে।প্রথমে সে এটাকে মায়া ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিল।ভেবেছিল কিছুদিন কাছাকাছি থাকার কারনে হয়ত এমনটা হয়েছে।কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল ব্যাপারটা আসলে তা নয়।সে আসলেই সৃষ্টিকে ভালবেসে ফেলেছে।যখন থেকে সে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারল তখন থেকেই তার স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন শুরু হল।নানা চিন্তায় সে আর স্থির থাকতে পারছেনা।সে তো বলে দিতেই পারে সৃষ্টিকে তার মনের কথা,কিন্তু সৃষ্টি ব্যাপারটা কিভাবে দেখবে এটাই তার চিন্তার একমাত্র কারন।সে তো জানেই না সৃষ্টি তাকে কিভাবে দেখে?শোভনের সবচেয়ে বড় ভয়টা হল যদি সৃষ্টি ভাবে শোভন তাকে করুণা করছে তার একাকিত্ব ঘুচানোর জন্য, অথবা তার ভালবাসার গাঢ়ত্ব বুঝতে না পেরে যদি তাকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে বন্ধু বিয়োগের কাহিনী রচনা করে বসে থাকে তবে শোভন কিছুতেই আর নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেনা।
বিকেলের সোনালী আলোটা গিয়ে সেখানে এখন ঝুম অন্ধকার।কোনদিকে যে এতটা সময় চলে গেল শোভন বুঝতেই পারলনা।অবশ্য বুঝবেই বা কিভাবে!সে নিজেই যে কিছুদিন ধরে কিসের ভিতরে আছে সেটাই সে বুঝতে পারছেনা।তার সবকিছুই কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।এভাবে আর পারা যায় না।কিছু একটা তাকে অবশ্যই করতে হবে।কিন্তু সেটা কি? নাহ্!আজও হলনা।কোন সমাধানেই পৌছাতে পারলনা শোভন।এমন একটা পরিস্থিতিতে শোভন এখন,যেখান থেকে একমাত্র সৃষ্টিই পারে তাকে বাঁচাতে।শোভন বন্ধুকে হারাতে চায় না,আবার সৃষ্টিকে না বলেও থাকতে পারছেনা।কোন দিকে যাবে সে?
ভাবতে ভাবতে আকাশের দিকে তাকালো শোভন।বাঁকা চাঁদটা পরিষ্কার দৃশ্যমান।কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়ত টি.ভি তে আগামীকাল ঈদ এই ঘোষনা দেয়া হবে।কাল ঈদ অথচ শোভন জানেনা কালকের ঈদটা তার কেমন যাবে!ঈদের আমেজে কি থাকতে পারবে নাকি সৃষ্টির কথা ভাবতে ভাবতে ঈদের দিনটাও ক্যালেন্ডারের আরেকটা দিনের মত কাটিয়ে ফেলবে,শোভন এটা নিয়েই সন্ধিহান।
তন্ময় দেবনাথ
ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়