somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিটলারের জানা-অজানা কথা

২৮ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর ফুয়েরার অ্যাডলফ হিটলারকে কখনো সামনে থেকে না দেখলেও আকস্মিকভাবে এত দিন পর এবার তাঁর খুব কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছি, সামনে থেকে দেখেছি, স্পর্শ করেছি এমনকি তাঁর শরীরের গন্ধ পর্যন্তও আমি নিতে পেরেছি।’ দৃশ্যত না ঘটলেও এত ঘটনা যে ঘটল, তার সবটাই কিন্তু সম্ভব হয়েছে অ্যানড্রিউ নাগোরস্কির লেখা হিটলার ল্যান্ড বইটি পড়ে। বইটির ভেতর এত চমত্কার বুননে নাগোরস্কি হিটলারের বর্ণনা করেছেন, তা যেন চোখের সামনে ছবি হয়ে ভাসে। যেন মনে হলো দৃশ্যগুলো এই মাত্র আমার চোখের সামনেই ঘটে গেল। আর আমি তাঁর সাক্ষাত্ দর্শক-শ্রোতা।’ অ্যানড্রিউ নাগোরস্কির (নিউজউইকের সাবেক প্রতিনিধি) লেখা ‘হিটলার ল্যান্ড’ বইটির আলোচনায় এমনভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন আলোচক ক্রিস্টোফার ডিকি।

বইটিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময় থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকের অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন লেখক। আর এই লেখাই হিটলারকে একই সঙ্গে মানবিক, নিষ্ঠুর, প্রতিনিধি, কূটনৈতিক, ব্যবসায়ী, তোষামোদকারী ও সবশেষে একজন সৈনিক হিসেবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আমাদের কাছে।
আমেরিকার অনেকেই বিশেষ ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে। আর আমেরিকার এই সাংবাদিক বার্লিনে হিটলারের খুব কাছাকাছি যাওয়ার পুরো সুবিধাটাই যেন ভোগ করে নিয়েছেন।

সিবিএস রেডিওর কর্মকর্তা ইয়াং উইলিয়াম শিরের তাঁর ডায়েরিতে হিটলারকে নিয়ে নানা বিষয় লিখেছেন। ১৯৩৮ সালে মিউনিখ কনফারেন্সের আগের দিন হিটলার যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা-ও দেখেছিলেন তিনি। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই চেকস্লোভাকিয়া থেকে জার্মানিকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সমর্থন করেছিল বলে ওই বক্তব্যে দাবি করেছিলেন হিটলার।

ইয়াং উইলিয়াম শিরের তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন, বক্তব্য দেওয়ার সময় হিটলারকে বেশ বিচলিত মনে হচ্ছিল। আর এসবই খুব কাছ থেকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট দেখেছিলেন তিনি। বক্তব্য দেওয়ার পুরো সময়টাই হিটলার বারবার তাঁর কাঁধ ঝাঁকাচ্ছিলেন।

‘সামনের দিকে থাকা দর্শক-শ্রোতারা কিন্তু এসবের কিছুই দেখতে পায়নি। কিন্তু আমি তা দেখতে পেয়েছিলাম ঠিকই। প্রথমবারের মতো আমি তাঁকে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বুঝতে পারি, আজ হিটলার তাঁর নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।’ ডায়েরিতে এভাবেই লিখেছেন উইলিয়াম শিরের।
হিটলারের জয়ের ঠিক কিছুদিন পরই শিরের দেখলেন, একটা হামবড়া ভাব চলে এসেছে তাঁর আচরণে। খিঁচুনি ভাবটা চলে গেছে।
হিটলারের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে সবচেয়ে বেশি যাঁদের সামনা-সামনি দেখা হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন আমেরিকার নারী। ১৯২০ সালের শুরুর দিকে নিউইয়র্কে হেলেন নেইমার নামের এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। হেলেন নেইমার ছিলেন আর্নেস্ট পুতজি নামের জার্মান-আমেরিকান এক কূটনীতিকের স্ত্রী। তিনি পুতজি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পরে অবশ্য পুতজি হিটলারের ব্যক্তিগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন।

হেলেন নেইমার পরে বলেছিলেন, তাঁর নািস নেতা নপুংসক ছিলেন। কিন্তু হিটলার তাঁর সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাতে চাইতেন। ১৯২৩ সালের দিকে ব্যাভেরিয়ার সরকারের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা যখন তাঁর ব্যর্থ হলো, তখন হিটলার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে অবশ্য হেলেন নেইমারের ঘরে দুজন একসঙ্গে ধরা পড়েছিলেন।
এরপর নিজেই নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হিটলার বলেছিলেন, ‘এখন সব কিছুই হারিয়েছি—বাকি আর কিছু নেই!’ এ সময় পিস্তলসহ হিটলারের হাত ধরে ফেলেছিলেন হেলেন। সে সময় জার্মানদের মধ্যে যাঁরা হিটলারের আদর্শকে বিশ্বাস করেন, তাঁদের কথা মনে করিয়ে দিয়ে হেলেন বলেছিলেন, ‘আপনি যা করছেন, তা কি ভেবে দেখেছেন? আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে তাঁরা।’ এভাবেই হিটলারের কাহিনিগুলো লিপিবদ্ধ হয়েছে অ্যানড্রিউ নাগোরস্কির ‘হিটলারল্যান্ড’ বইটিতে।

এরপর কারাগার থেকেই হিটলার লিখেছিলেন বিখ্যাত বই ‘মেইন ক্যাম্প’। গ্রেপ্তার হওয়ার প্রায় এক দশক পর সত্যিকার অর্থে ক্ষমতা পেয়েছিলেন হিটলার।
সময়গুলো বদলে গিয়েছিল কিন্তু তার পরও হিটলারের পাশেই ছিলেন সেই হেলেনের স্বামী পুতজি। হিটলারের একনায়কত্বের প্রথম বছর পর্যন্ত সব দৃশ্যেই তিনি ছিলেন। এ সময় পুতজি হিটলারের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সুন্দরী মেয়ে মার্থা ডডের পরিচয় করিয়ে দেন। হিটলারের ওই মুহূর্তে একজন নারীর প্রয়োজন। আর হিটলারের এই প্রয়োজনের কথাটি পুতজি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন মার্থাকে। এরপর অনেক ঘটনার মধ্য দিয়ে বার্লিনের একটি হোটেলে হিটলারের সামনে মার্থাকে উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন পুতজি। কিন্তু এই ঘটনা আগে থেকে ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি হিটলার। একান্তে সামনে পেয়েই মার্থার হাতে চুমু দিলেন হিটলার। মিনমিন করে কী যেন বলে আবারও তাঁর হাতে চুমু দিলেন তিনি। এরপর সেই দিন পুরো সময়টা মার্থার সঙ্গে অতি উত্সাহ আর অস্বস্তি নিয়ে কাটিয়েছিলেন হিটলার।
এমনই সব কাহিনি রূপায়িত হয়েছে পুরো বইটিতে। অসম্ভব সুন্দর উপস্থাপনায় যেন পুরো বিষয়টিই একটা চিত্রকল্প। বইটির শেষে এসে আরও বিস্মিত হতে হয় পাঠকদের। প্রশ্ন উঠতে পারে, হিটলার যদি সে সময় আত্মহত্যা করতেন, তাহলে কী হতো? আমেরিকার এই প্রত্যক্ষদর্শী লেখক কী গোটা দুনিয়ায় হিটলারের এই পাগলামো লুকাতে পারবেন? যদি তা না পারেন, তাহলে কী হবে? কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাঁরা যা দেখেছেন, এই ইতিহাসে তার পুরো একটা নির্যাসই যেন ফুটে উঠেছে দারুণভাবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×