somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট: নগ্ননৃত্য নাকি দেহব্যবসা?

২৮ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
[img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/23797/small/?token_id=cc28ba11d446121d352bf967391f39a5
নায়েম হাসান
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ব্ল্যাক ম্যারিয়ন
ইনি ব্ল্যাক ম্যারিয়ন নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর একাধারে চীফ অপারেটিং অফিসার, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (তিনিই জানেন এতসব গালভরা পদবীর কোনটার কাজ কী, আর কোম্পানীর কাজটাই বা কী)।সাইটে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে তারা বিয়েশাদীর অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে র্যা ম্প শো, কনসার্ট, ট্যালেন্টহান্ট – প্রায় সব ধরনের ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। দেশ বিদেশের কয়েকটি অফিসের মধ্যে একটির অবস্থান ঢাকার নিউ বেইলী রোডে। । যাঁরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর সাথে জড়িত তাঁরা হয়তো বলতে পারবেন এরা কোন কোন ইভেন্ট পরিচালনা করেছেন।

তবে আচমকাই তাদের একটি গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যবসা সম্প্রসারণ পরিকল্পনার আঁচ পাওয়া গেলো এই বিজ্ঞাপন থেকে এখানে তারা রাশিয়া, পূর্ব ইয়োরোপ, বৃটেন ও ফিলিপাইনের মেয়েদের মধ্য থেকে তিনজন নর্তকী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, প্রতিজনের বেতন মাসিক ৪ লাখ টাকা (৫০০০ ডলার), সাথে কম্পানীর নাচ বিভাগের ৪০ শতাংশ মালিকানা (বোঝা গেল না, তিনজনকে ১২০ শতাংশ তারা কোথা থেকে এনে দেবেন, আর নিজেদেরেই বা থাকবে কী)। কাজেই নিজেদের লাভ করতে হলে নিয়োগপ্রাপ্ত মেয়েদের কোন না কোনভাবে তাদের বঞ্চিত করতে হবে, শোষণ করতে হবে।

তবে যেটা বোঝা যায়, তা হলো এই চাকুরী কোন যেনতেন (ধ্রুপদী বা বাণিজ্যিক) নৃত্যশিল্পীর জন্য নয়, নর্তকীকে হতে হবে গো-গো ড্যান্সার, টপলেস ড্যান্সার, স্ট্রিপ ড্যান্সার অথবা ল্যাপ ড্যান্সার। গো-গো ড্যান্স হলো পশ্চিমা স্বল্পবসনা পোল-ড্যান্সের একটি থাই সংস্করণ। টপলেস ড্যান্স হলো শুধুমাত্র শরীরের নিম্নাংশ সংক্ষিপ্ত পোষাকে আবৃত রেখে নৃত্য (!)। ষ্ট্রীপ ড্যান্স শুরু হয় পুরো প্রস্থ পোষাক নিয়ে, তবে নাচের তালে তালে ধীরে ধীরে একটি একটি করে পোষাক খুলে ফেলা হয়। আর ল্যাপ ড্যান্সারদেরকে সাধারণত প্রাইভেট পার্টিতে ভাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়, তারা স্বল্পবসনে বা বসন হীন অবস্থায় পুরুষ হোস্টদের কোলে (ল্যাপ) বসে বিভিন্ন ভঙ্গিতে তাদের মনোরঞ্জন করে থাকে। এই সমস্ত মনোরঞ্জনের প্রক্রিয়ায় একজন বিদেশী নর্তকী ঢাকায় মাসে ৪ লাখ টাকা ও কোম্পানীর মালিকানার অংশ উপার্জন করতে পারবে কিনা আমার সন্দেহ হয়।তাই ধরেই নেয়া যায়, অন্যান্য দেশেও যা হয়, এখানেও তাই হবে – নাচের নামে তথাকথিত হাইক্লাস দেহব্যবসা।
কে দেহব্যবসার জমজমাট আসর বসালো তাতে আমার বিশেষ মাথাব্যথা নেই। ধর্ম বা নৈতিকতার মানদণ্ডে এসবের অবস্থান নিয়েও আমার কোন বক্তব্য নেই – এক এক জনের কাছে এসবের গ্রহণযোগ্যতা এক এক রকম – কারো কাছে সাক্ষাৎ ’জাহান্নাম’, কারো কাছে ’সমস্যা কী?’, আবার কারো কাছে হয়তো ’ওয়াও!’ আমার মাথাব্যাথা অন্যত্র – প্রথমত, এরকম একটি ব্যবসা দেশের আইনকানুনে বৈধ কি অবৈধ এটা আমার প্রথম চিন্তা। যে কারণেই হোক মদ উৎপাদন ও খোলাবাজারে বিক্রি আমাদের দেশে অবৈধ, তাই আমার পাড়াতে কেউ মদ বিক্রি শুরু করলে আমি প্রথম সুযোগেই প্রশাসন ও আইন-প্রয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবো। যে কোন কারণেই হোক, টুপি বিক্রি যদি অবৈধ ঘোষিত হয়, টুপিঅলাকেও আমি পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইবো। তবে সত্যি সত্যি কাউকেই ধরিয়ে দিতে যাবো না, কারণ জানি এরকম চেষ্টা করে কোন লাভ নেই বাংলাদেশে, অসংখ্য ছোটখাটো বেআইনী কাজ আমাদের চারপাশে সারাক্ষণই ঘটে চলেছে, কয়টার প্রতিবাদ করি বা প্রতিকারে ভূমিকা রাখি? এক্ষেত্রেও হয়তো শেষমেষ বলবো, ’আমার কী’ বা ’আমি কী করতে পারি?’ তবু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী নামের আড়ালে দেহব্যবসা, তাও আবার অবৈধভাবে, আমার কাছে অগ্রণযোগ্য।

আমার দ্বিতীয় মাথাব্যাথাটিই আসলে বেশি দুশ্চিন্তার কারণ। যে নর্তকীর মাসিক বেতন ৪ লাখ টাকা সাথে কোম্পানীর লভ্যাংশ, তার কাছে এলেবেলে পাড়ার ছেলে-ছোকরাদের যাবার সামর্থ ও সম্ভাবনা খুবই কম। ল্যাপ ড্যান্সারকে তার ঘোষিত ও অঘোষিত সেবাসমূহ নেবার জন্য যারা ভাড়ায় নেবেন তারা তুলনামূলক ’বিগশট’ হতে বাধ্য। এই বিগশটরা যখন নিজের টাকায় ’মৌজ-মাস্তি’ করবেন সেখানে আমার বলার কিছু থাকতে পারে না, কিন্তু দেশে দেশে যা ঘটছে এখানেও তার ব্যাতিক্রম হবে মনে করি না, এই ড্যান্সারদের ব্যবহার করা হবে ঘুষ ও টোপ হিসাবে। আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ আমলাদের ’আলুর দোষ’ নেই মনে করারও কোন কারণ নেই। এসব নর্তকীদের ব্যবহার করে বড় বড় ’ডিল’ হবে, বলাই বাহুল্য সর্বত্র যা হয় এখানেও তাই হবে, ’ডিল’গুলো আমজনতার জন্য শুধু অমঙ্গলের বোঝাই বাড়াবে এই দরিদ্র দেশে।

তাই কামনা করছি, প্রশাসন ও আইন-প্রয়োগকারীরা এসব ব্যবসাকে যেভাবে ’ডীল’ করা দরকার সেভাবেই করবেন, যার যা ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা, এক কারবারের লাইসেন্স দিয়ে অন্য ’কারবার’ – এসব বন্ধ হোক। ব্যবসায়ীক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হোক।
View this link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×