somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেমস ক্যামেরনের কল্পলোকের কথা

২৮ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন ১৯৯৪ সালে ৮০ পৃষ্ঠার একটি স্ক্রিপ্টমেন্ট লিখেছিলেন অ্যাভাটার(২০০৯) ছবিটির জন্য। কিন্তু সেসময়ে প্রযুক্তি প্রস্তুত ছিলোনা তাঁর স্ক্রিপ্টটি চলচ্চিত্রায়নের জন্য। পরবর্তীতে ক্যামেরন ১৯৯৬-এর আগস্টে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি টাইটানিক(১৯৯৭) নির্মাণের পরেই অ্যাভাটার নির্মাণ করবেন। এর পরবর্তী ইতিহাস সবারই জানা। টাইটানিক মুক্তির পর ভেঙ্গে ফেলেছিলো বক্স অফিসের আগের সব রেকর্ড। জিতে নিয়েছিলো ১১টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড। টাইটানিক ছাড়া শুধুমাত্র বেনহুর(১৯৫৯) চলচ্চিত্রটি ১১টি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে। টাইটানিক মুক্তির ১২ বছর পরে ২০০৯ সালে ক্যামেরন মুক্তি দেন তাঁর পরবর্তী চলচ্চিত্র অ্যাভাটার। অ্যাভাটার মুক্তির পর ভেঙে ফেলে ১২ বছর ধরে ধরে রাখা টাইটানিকের বক্স অফিস রেকর্ড। চলচ্চিত্র ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন ছবি সারা পৃথিবী থেকে আয় করে ২.৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ক্যামেরনই প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা যার দুটি ছবি বক্স অফিসে আয় করে নেয় ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে।এই দুটি ছবি ছাড়া আর মাত্র ৬টি ছবি বক্স অফিসে ১ বিলিয়ন ইউএস ডলেরের উপরে আয় করে। ছবি ৬টি হলো-
১। দ্য লর্ড অব দ্য রিংসঃ দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং(২০০৩)
২। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ানঃ ডেড ম্যানস চেস্ট(২০০৬)
৩। দ্য ডার্ক নাইট(২০০৮)
৪। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড(২০১০)
৫। ট্রান্সফর্মারসঃ ডার্ক অব দ্য মুন(২০১১)
৬। হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হলোসঃ পার্ট ২(২০১১)
এই ৬টি ছবির নির্মাতারা হচ্ছেন- পিটার জ্যাকসন, গোর ভারবিনস্কি, ক্রিস্টোফার নোলান, টিম বার্টন, মাইকেল বে, ডেভিড ইয়েটস। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ক্যামেরন তাঁর ১৪ বছরের পুরনো ছবি টাইটানিক ৩ডি ফরম্যাটে আবার নতুন করে মুক্তি দেন এ বছরের এপ্রিলে এবং টাইটানিক এবারও এসময়কার ব্লকবাস্টার দ্য হাঙ্গার গেমস(২০১২) এর মতো ছবির সাথে প্রতিযোগিতা করে বক্স অফিসে ৩ নম্বরে জায়গা করে নেয়। এবছর ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চযানেলের সাথে ক্যামেরন ঐতিহাসিক টাইটানিকের উপর নির্মাণ করেন প্রামান্যচিত্র টাইটানিক দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড। অ্যাভাটর ছবিটি যে ডিজিটাল ৩ডি ফিউশন ক্যামেরায় চিত্রায়িত হয়েছে সেই ক্যামেরার উদ্ভাবক হিশেবে ক্যামেরন নিজে কাজ করেছেন। তাঁর সাথে কাজ করেছেন আরেকজন উদ্ভাবক ডিন্স পেস। শুধুমাত্র ক্যামেরা উদ্ভাবক হিশেবেই নয় ক্যামেরন কাজ করেছেন সাবমেরিন তৈরিতেও। এবছর মার্চের ২৬ তারিখ ক্যামেরন চলে গিয়েছিলেন সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম স্থানে। ডিপসি চ্যালেঞ্জার নামক সাবমেরিনে ক্যামেরন পাড়ি জমিয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম ওয়েস্টার্ন প্যাসিফিকের মারিয়ানা ট্রেন্সে। সেখানে তিনি ছিলেন প্রায় তিন ঘন্টা, শুটিং করেছেন ৩ডি ক্যামেরায়। ক্যামেরনের আগে ১৯৬০ সালে সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম স্থানে ২০ মিনিট অবস্থান করেছিলেন আমেরিকান নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ডন ওয়ালশ এবং সুইস ওসানোগ্রাফার জ্যাকুইস পিকার্ড। শুধু পানির নিচের রাজত্বই নয় ক্যামেরন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলেরও সদস্য এবং জীবনের এক পর্যায়ে তিনি কাজ করেছেন ট্রাক ড্রাইভার হিশেবেও।
পৃথিবীর সব রহস্যই যেনো ক্যামেরনকে টানে দুর্নিবার আকর্ষণে। তাইতো হোক মহাকাশ কিংবা পানির নিচে সব জায়গাতেই তিনি পৌঁছাতে চান। আর তাঁর কল্পনাগুলোকে বাস্তবে বিন্যাস করেন বা রূপায়ন করেন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ক্যামেরন নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে-
১। জেনোজেনেসিস(১৯৭৮)
২। পিরানহা ২ঃ দ্য ¯পনিং(১৯৮৩)
৩। দ্য টারমিনেটর(১৯৮৪)
৪। এলিয়েনস(১৯৮৬)
৫। দ্য অ্যাবিস(১৯৮৯)
৬। টারমিনেটর ২ ঃ জাজমেন্ট ডে(১৯৯১)
৭। ট্রু লাইস(১৯৯৪)
৮। টাইটানিক(১৯৯৭)
৯। ঘোস্ট অব দ্য অ্যাবিস(২০০৩)
১০। অ্যালিয়েনস অব দ্য ডিপ(২০০৫)
১১। অ্যাভাটার(২০০৯)
এছাড়াও ক্যামেরন নির্মিত আরো কিছু প্রামান্যচিত্র রয়েছে।
ক্যামেরন নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
১। ক্যামেরনের চলচ্চিত্রে সাধারণত প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন- মাইকেল বিন, জেনেত্তি গোল্ডস্টেইন, ল্যান্স হেনরিকসেন, বিল প্যাক্সটন, আরনল্ড শোয়ার্জনেগার।
২। চলচ্চিত্রগুলোয় নারী চরিত্রগুলো শক্তিশালী থাকে।
৩। দৃশ্যায়নে প্রচুর সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয়।
৪। অনেক ছবিতেই ক্যামেরন বিষয় হিশেবে পানি বা সমুদ্রকেই নির্বাচন করেছেন। তাঁর আগামী চলচ্চিত্র অ্যাভাটার-এর সিক্যুয়েল নির্মিত হবে প্যানডোরার সমুদ্রকে ঘিরে।
ক্যামেরন স¤পর্কে কিছু তথ্যঃ
১। ক্যামেরন কানাডার অন্টারিওতে ১৬ই আগস্ট, ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন।
২। ক্যামেরন ৫বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীরা হচ্ছেন- শ্যারন উইলিয়ামস(১৯৭৮-১৯৮৪), গেল অ্যানি হার্ড(১৯৮৫-১৯৮৯), ক্যাথরিন বিগেলো(১৯৮৯-১৯৯১), লিন্ডা হ্যামিল্টন(১৯৯৭-১৯৯৯) এবং সুজি অ্যামিস। লিন্ডা হ্যামিল্টনের সঙ্গে বিচ্ছেদের ফলে আদালত ক্যামেরনকে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের নির্দেশ দেয়। ক্যামেরন বিয়ে করেছেন তাঁর দুই অভিনেত্রী এবং একজন প্রযোজককে।
৩। ২০০৯-এ ক্যামেরন নির্মিত অ্যাভাটার এবং তাঁর সাবেক স্ত্রী ক্যাথরিন বিগেলো নির্মিত দ্য হার্ট লকার একই সঙ্গে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়। মনোনয়ন থেকে ক্যামেরন জিতে নেন গোল্ডেন গ্লোব আর অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড এবং বাফটা অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয় তাঁর সাবেক স্ত্রী ক্যাথরিন বিগেলো।
৪। ১৯৬৮ সালে স্ট্যানলি কুবরিক নির্মিত ২০১১ঃ আ ¯েপস অডিসি চলচ্চিত্রটি ক্যামেরন ১০ বার দেখেন এবং তাঁর বাবার সুপার-৮ ক্যামেরা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে উৎসাহী হন।
৫। ১৯৭৭ সালে জর্জ লুকাস নির্মিত স্টার ওয়ারস দেখে ক্যামেরন তাঁর কল্পনাগুলোকেও চলচ্চিত্রায়িত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি তাঁর ট্রাক চালকের চাকরি ও প্রথম স্ত্রী শ্যারন উইলিয়ামসকে ছেড়ে লস অ্যাঞ্জেলসে পাড়ি জমান ছবি বানানোর উদ্দেশ্যে।
জেমস ক্যামেরন পৃথিবী জুড়ে অনেকেরই পছন্দের নির্মাতা এবং তাঁর ছবিগুলোও বহুলোকের মনের খোরাক। ক্যামেরনের নিজের কিছু পছন্দের ছবি হচ্ছে-
১। দ্য উইজার্ড অব অজ(১৯৩৯)
২। ড. স্ট্রঙ্গিলভ(১৯৬৪)
৩। ২০১১ঃ আ ¯েপস অডিসি
৪। দ্য গড ফাদার(১৯৭২)
৫। ট্যাক্সি ড্রাইভার(১৯৭৬)
জেমস ক্যামেরন কাজ করেছেন অনেক কিছু হিশেবে। ছিলেন ট্রাক চালক পরবর্তীতে আবির্ভূত হন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও উদ্ভাবক হিশেবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে তাঁর কল্পনা করতে পারার ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা দিয়েই তিনি জয় করে ফেলেছেন গোটা বিশ্বকে। ১৯৯৪ সালে ক্যামেরন অ্যাভাটারের ৮০ পৃষ্ঠার স্ক্রিপ্টমেন্টটির মূল অংশ লিখেছিলেন মাত্র ২ সপ্তাহে। তিনি বলেছেন- ‘...এব্যাপারে আমি উৎসাহ পেয়েছি ছোটবেলায় যতগুলো সায়েন্স ফিকশন পড়েছি, সেসব সায়েন্স ফিকশন থেকে।’ ক্যামেরন নিজে বিশ্বাস করেন পানির নিচে মানুষের মতো প্রানীর অস্তিত্বের কথা, হয়তো মহাকাশে এলিয়েনদের কথাও। এবং সে বিশ্বাসকেই যেনো তিনি রূপান্তর করেন তাঁর চলচ্চিত্রে। তাই হয়তো তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলোও সারা পৃথিবীর এতো মানুষের প্রাণ ছুয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×