বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ
৭. খাওয়া ও পান করার আদব ও দো‘আ :
(ক) খানাপিনার শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বল। ডান হাত দিয়ে খাও ও নিকট থেকে খাও, মাঝখান থেকে নয়।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪১৫৯; তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪২১১, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১।]
বাম হাতে খাবে না বা পান করবে না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে। [মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৩।]
(খ) খাদ্য পড়ে গেলে সেটা ছাফ করে খাবেন। শয়তানের জন্য রেখে দিবেন না। খাওয়া শেষে হাত ধোয়ার পূর্বে ভালভাবে প্লেট ও আঙ্গুল চেটে খাবেন। কেননা কোন খাদ্যে বরকত আছে, তোমরা তা জানো না’।[মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬৫, ৪১৬৭।]
(গ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ভান্ডের মুখে মুখ লাগিয়ে এবং দাঁড়িয়ে খেতে ও পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৪২৬৪, ৪২৬৬; ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম হা/৫২৭৫ (২০২৪/১১৩) ‘পানীয় সমূহ’ অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-১৪; তিরমিযী হা/১৮৭৯।]
তবে তিনি যমযমের পানি এবং ওযূ শেষে পাত্রে অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৪২৬৮-৬৯, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।]
পানির পাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলবেন না বরং তিনবার বাইরে শ্বাস ফেলবেন (ও ধীরে ধীরে পানি পান করবেন)।[আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪২৭৭; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৬৩।]
(ঘ) খাদ্য পরিবেশনের সময় ডান দিক থেকে শুরু করবেন।[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৭৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।]
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আদম সন্তানের জন্য কয়েক লোকমা খাদ্য যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার কোমর সোজা রাখতে পারে (ও আল্লাহর ইবাদত করতে পারে)। এরপরেও যদি খেতে হয়, তবে পেটের তিনভাগের এক ভাগ খাদ্য ও একভাগ পানি দিয়ে ভরবে এবং একভাগ খালি রাখবে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’। [তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৫১৯২, ‘হৃদয় গলানো’ অধ্যায়-২৬, পরিচ্ছেদ-২।]
তিনি বলেন, এক মুমিনের খানা দুই মুমিনে খায়। দুই মুমিনের খানা চার মুমিনে খায় এবং চার মুমিনের খানা আট মুমিনে খায় (অর্থাৎ সর্বদা সে পরিমাণে কম খায়)।[মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৭৮, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১।]
কেননা মুমিন এক পেটে খায় ও কাফের সাত পেটে খায় (অর্থাৎ সে সর্বদা বেশী খায়)।[বুখারী, মিশকাত হা/৪১৭৩।]
(চ) কাত হয়ে বা ঠেস দিয়ে খেতে নেই।[বুখারী, মিশকাত হা/৪১৬৮।]
(ছ) খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ না বললে শয়তান তার সাথে খায়।[মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৬০, ৪২৩৭, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-১ ও ৩।]
(জ) খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে (শেষ হওয়ার আগেই) বলবেন, ‘বিসমিল্লা-হি আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ’ (আল্লাহর নামে এর শুরু ও শেষ)।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, হা/৪২০২, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-২।]
(ঝ) খাওয়া ও পানি পান শেষে বলবেন,
(১) ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। [মুসলিম, মিশকাত হা/৪২০০, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৩৪৩, ‘পোষাক’ অধ্যায়-২২।]
অথবা বলবে,
(২) আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানী হা-যা ওয়া রাঝাক্বানীহি মিন গায়রে হাওলিম মিন্নী ওয়ালা ক্বুউওয়াতিন’ (সেই আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা, যিনি আমাকে আমার ক্ষমতা ও শক্তি ছাড়াই এই খাবার খাইয়েছেন এবং এই রূযী দান করেছেন)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এটি পাঠ করবে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হবে।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৩; ইরওয়া হা/১৯৮৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০৮৬। উল্লেখ্য যে, এ সময় আলহামদুলিল্লা-হিল্লাযী আত্ব‘আমানা ওয়া সাক্বা-না.... বলা মর্মে প্রচলিত দো‘আটি যঈফ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪২০৪, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, পরিচ্ছেদ-২ সনদ যঈফ)।]
অথবা বলবেন,
(৩) আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত্ব‘ইমনা খায়রাম মিনহু’ (‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য এই খাদ্যে বরকত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাওয়াও’)।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২৮৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩।]
(৪) দুধ পান শেষে বলবেন,
আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া ঝিদনা মিনহু’ (হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে এই খাদ্যে বরকত দান কর এবং এর চাইতে আরো বৃদ্ধি করে দাও)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটা এ কারণে যে, দুগ্ধ ব্যতীত খাদ্য ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়, এমন কোন খাদ্য নেই।[তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪২৮৩, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১, ‘পানীয় সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৩; ছহীহাহ হা/২৩২০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮১।]
এছাড়াও খানাপিনার অন্যান্য দো‘আ রয়েছে।
(ঞ) খাওয়া শেষে প্লেট বা দস্তারখান উঠানোর সময় বলবেন, আলহামদুলিল্লা-হি হামদান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি’... (আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা, যা অগণিত, পবিত্র ও বরকত মন্ডিত...)। [বুখারী, মিশকাত হা/৪১৯৯, ‘খাদ্য সমূহ’ অধ্যায়-২১।]
(ট) রাসূলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি ও মধু পসন্দ করতেন।[বুখারী, মিশকাত হা/৪১৮২।]
হে আল্লাহ! আমার ত্রুটিগুলি তুমি ক্ষমা কর এবং তোমার পথে এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল কর। হে আল্লাহ! এ দোআ গুলো পড়ে যত মুমিন নর-নারী আমল করবেন, তাদের আমলনামায় তার ছওয়াব পূর্ণরূপে যুক্ত কর এবং তাদের পিতামাতাকে ও তাদের পরিবারবর্গকে এবং তার সকল শুভাকাংখীকে কবরে ও হাশরে মুক্তি দান কর- আমীন!! সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বেহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম!
চলবে ......।
জরুরী দো‘আ সমূহ #৫