somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্পিকারের রুলিং ‘অকার্যকর ও ভিত্তিহীনঃ হাইকোর্টের নামে মামলা দেওয়া হউক /:)

২৭ শে আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক বিচারকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে স্পিকারের দেওয়া রুলিং ‘অকার্যকর ও আইনগত ভিত্তিহীন’ বলে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ স্পিকারের রুলিংয়ের বৈধতা নিয়ে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের নিস্পত্তি করে গত ২৪ জুলাই এই রায় দেয়। সোমবার হাইকোর্ট পূর্নাঙ্গ অভিমত ও নির্দেশনাসহ ওই রায় প্রকাশ করে।

আদালত রায়ের অভিমতে বলেছে, একজন বিচারকের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে স্পিকারের দেওয়া রুলিংয়ের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই এবং তা আইনের দৃষ্টিতে অস্তিত্বহীন।

স্পিকারের ওই অভিমতের ‘আইনগত কোনো কার্যকারিতা’ নেই বলেও আদালত জানায়।

“ওই রুলিং সংবিধানের ৯৬ (৫) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং সংবিধান ও সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।”

হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর মন্তব্যে সৃষ্ট উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গত ১৮ জুন সংসদে ওই রুলিং দেন স্পিকার আবদুল হামিদ।

গত ২৯ মে সংসদে দেওয়া স্পিকারের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ওই বিতর্কের সূত্রপাত।

সুপ্রিম কোর্টের জমি ছেড়ে দিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেওয়া উচ্চ আদালতের একটি আদেশ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়ে স্পিকার সেদিন বলেছিলেন, আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী ৫ জুন বলেন, স্পিকারের ওই বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। এরপর সংসদে বিষয়টি নিয়ে তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

পরে রুলিংয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “হাই কোর্টের একজন মাননীয় বিচারপতি সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে সংসদ সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন তা কোনো বিবেকবান মানুষ উচ্চারণ করতে পারেন কি না, আমার সন্দেহ রয়েছে।”

সংসদ সদস্যদের ক্ষোভের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে স্পিকার আশা প্রকাশ করেন, ওই বিচারকের অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের বিষয়ে প্রধান বিচারপতিই পদক্ষেপ নেবেন।

তবে রুল নিস্পত্তি করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ যাতে সংবিধানে দেওয়া তার ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন না করে তা দেখার দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত। ‘বিশেষ অধিকারের সীমা’ সংবিধানের ৭৮ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে। এই ব্যাখ্যার ক্ষমতা একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারে। সংসদ তার এই বিশেষ অধিকার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিচারক হিসাবে নিজেকে দাবি করতে পারে না।

“সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতা দিয়েছে। জনগণ সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। সংবিধানের সীমার মধ্যে থেকে সংসদকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।”

আদালত বলেছে, স্পিকারের রুলিংয়ে এমন কিছু দেখা যায় না যে বিচারক সংসদের কোনো কার্যধারা চ্যালেঞ্জ করে তার আদালতে বা কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকি সংসদের কার্যধারা চ্যালেঞ্জ করে কোনো মামলা দায়ের বা বিচারাধীন থাকার কথাও স্পিকার তার রুলিংয়ে বলেননি। সুতরাং সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদের কোনো লঙ্ঘন ওই বিচারক করেননি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মামলায় সংসদের কার্যধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি বলেও অভিমত দিয়েছে আদালত।

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি পর্যালোচনা করে আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে, বিচারিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একজন বিচারকের আচরণ সংসদের বিবেচনার বিষয় হতে পারে না। সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধির বিধান অবজ্ঞা করে এ ধরনের আলোচনা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

“আমাদের আইন প্রণেতাদের নিঃসন্দেহে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষমতা সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এই ক্ষমতা সংবিধানে দেওয়া এখতিয়ারের মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ দ্বারা সুরক্ষিত। ক্ষমতার স্বাতন্ত্রীকরণ বিষয়ে ব্যাখ্যাকারীও বিচার বিভাগ।”

রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের সব অঙ্গ তাদের কর্তৃত্ব, এখতিয়ার ও ক্ষমতা সংবিধান থেকে প্রাপ্ত। সাংবিধানিক বিষয়ে রাষ্ট্রের বিচারিক অঙ্গ হলো উচ্চ আদালত এবং এ বিষয়ে এর কর্তৃত্ব ও এখতিয়ার সংবিধানের মূল স্তম্ভের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধান পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু অমান্য করা যায় না।

“আইনসভা ও বিচার বিভাগ এই দুটি অঙ্গে সংবিধানের সৃষ্টি। বিদ্বেষপ্রসূত হয়ে নয়, সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের কাজ করা উচিত। এতে করে দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির উন্নয়ন ও বিকাশ স্থিতিশীল হবে।”

“আইন প্রণয়নের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের, নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার এবং বিচারিক ক্ষমতা আদালতের। তিনটি অঙ্গের প্রতিটিকেই অন্য অঙ্গের বিষয়ে বিধান লক্ষ্য রেখে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করতে হবে। স্বাভাবিক কার্যপরিচালনার স্বার্থে একটি অঙ্গকে অন্য অঙ্গ থেকে প্রধান্য দেওয়া যেতে পারে না। সংবিধান হচ্ছে এই তিনটি অঙ্গের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। প্রতিটি অঙ্গ তার কাজের ক্ষেত্রে নিজস্ব জায়গায় স্বাধীন। যদি কোনো অঙ্গ তার ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে, তাহলে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার বিচারিক বিবেচনার ক্ষমতা আদালতের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। আইন প্রণেতাদের বিচারিক ক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক।”

সংসদের ক্ষমতা, এখতিয়ার ও বিশেষ অধিকার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে কি না এ বিষয়ে ভারতের উচ্চ আদালতের একটি মামলার রায় থেকেও উদ্ধৃত করেছে হাই কোর্ট।

‘রাজা রামপাল বনাম স্পিকার’ শিরোনামের ওই মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে অভিমতে বলা হয়, “যে কার্যধারা চরম বেআইনি ও অসাংবিধানিক- তা বিচারিক নিরীক্ষার বাইরে নয়। সিদ্ধান্ত, আদেশ, অভিমত, উপসংহার সীমিত ক্ষেত্রে বিচারিক বিবেচনার আওতাধীন। সুপ্রিম কোর্ট তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অযৌক্তিক কার্য বাতিল করতে দ্বিধাবোধ করবে না।”

ওই মামলায় রায়ের বরাত দিয়ে আদালত আরও বলে, “রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গের মত সংসদও সংবিধানের বিধানের অধীন এবং এর বিধানের আলোকে দায়িত্ব পালন করবে। সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার বিপরীত কোনো কাজ বা কার্যক্রম বাতিল হবে। কিন্তু সংসদের কার্যপ্রণালী বিষয়ে বিচারিক বিবেচনা সীমিত।”

লর্ড ডেনিংয়ের ‘হোয়াট নেক্সট ইন দি ল’ গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে রায়ের অভিমতে বলা হয়, “ক্ষমতা, অধিকার ও দায়মুক্তির ক্ষেত্রে সংসদ যা করেছে এবং করতে পারে তার প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। কিন্তু আমাদের আইনের কাঠামোতে বেঁধে দিতে হবে যে, এই ক্ষমতার যেন অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগ না হয়।”
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×