somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বরের ঘোরে আমার একদিন

২৭ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেকদিন পর, ঠিক ৬ বছর ১০০ দিন পরে আমার জ্বর উঠল। জ্বর উঠলে কী রকম লাগে, প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। গতকালকে বিকালে বেড়িয়ে এসে আর জেগে থাকতে না পেরে সাতটায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠেছি ঠিক ০৪:৪৫ এ। ইচ্ছে করে উঠিনি। উঠতে বাধ্য হলাম, কারণ গলায় প্রচন্ড ব্যথা। শ্বাসকষ্টের মত হচ্ছে। উঠে পানি গরম করছি গার্গেল করব, এমন সময় বাবা বলল বিশ মিনিট পরে তাকে কফি বানিয়ে দিতে। বাবাটা বরাবরই এরকম। কই আমি গার্গেল করছি দেখে এসে আমার খোঁজ নিবে, তা না, ভান করল সে দেখেই নাই কিছুX(। আমিও বাপকা বেটা। কিছু না বলে ঠিক বিশ মিনিট পরে কফি বানিয়ে দিলাম। কফি দেখে বলে আরও কফি ঢালতে। আমি নাকি কফি বানাতেই পারি না। মনে মনে বললাম, তাই তো।আমি কি ডেইলি ডেইলি কফি বানাই নাকি যে আমার বানানো কফি পারফেক্ট হবে? /:)

কফি দিয়ে এসে দেখি আমার গরম পানি ঠান্ডা হয়ে গেছে।:| সেটাই মুখে দিয়েছি কী দেই নি, ওমনি বাবা আবার ডেকে বলে তাকে গানের সিডি লাগিয়ে দিতে। কী অদ্ভূত! সেটাও করে দিলাম। ততক্ষণে আমার গলার অবস্থা কেরোসিন। শুধু ঘোঁৎ ঘোঁৎ আওয়াজ বের হচ্ছে। :|| বুঝতে পারছিলাম যে টনসিলটা ফুলে গিয়েছে, কিন্তু এত সকালে আম্মুকে ডাকতে ইচ্ছা করছিল না। বেচারি কী আরাম করেই না ঘুমাচ্ছে!

নিজেই চিকিৎসা শুরু করলাম। জ্বর উঠছে, এটাও বুঝলাম। জ্বর মাপার থার্মোমিটার খুঁজে বের করা আমার কম্ম না। কোনোমতে পাতলা খিচুড়ি পানির মত গিলে একটা নাপা এক্সট্রা খেয়ে ফেললাম। বিছানায় বসে ঝিমাচ্ছি, এমন সময় আমার ডাক্তার বোন উঠে গেল। নাই কাজ তোো খই ভাজ! সে কিছুক্ষণ আমার ওপর ডাক্তারি ফলাল। টর্চ দিয়ে নানা এ্যাঙ্গেল থেকে আমার গলা দেখে অবশেষে ঘোষণা করল যে টনসিল ফুলেছে এবং সামান্য একটু ইনফেকশান হয়েছে। আমি হতাশ দৃষ্টিতে এই নবডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকলাম B:-) আমার গলা বন্ধ হয়ে গেছে, ঢোক গিলতে পারছি না, আর সে বলে একটুখানি ইনফেকশান?সে আবার আগ্রহের আতিশজ্যে আমাকে হা করে থাকতে বলল, সে নাকি ছবি তুলবে!! :-< জীবনে তো টনসিল ফুলে নাই, তাই তোরা মজা বুঝস না!X((X(( গলাটা বন্ধ, নইলে তখনই একটা রামধমক দিয়ে ডাক্টারি ছুটায় দিতাম। দুই দিনের ডাক্তার,, আমাকে সে ডাক্তারি শিখায়?

আমি ঝিমাইতে ঝিমাইতেই আম্মা উঠে গেল। আম্মা লোক ভাল, আমি জুল জুল করে আম্মার দিকে তাকায় থাকলাম। আমাকে খুব চেষ্টা করে আমাকে তরল খিচুড়ি খাওয়াল, গরম পানি দিয়ে গার্গেল করাল। আম্মা জাতটা আছে দেখেই না দুনিয়াতে আমার মত অসহায় ভাই বেঁচে আছে। আম্মাও তখন ডাক্তারকে ফোন করে আমার অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিল। এজন্য ডাক্তারের কাছে যাবার কোনো প্রয়োজন নাই, কারণ আমার টনসিল ফুলার ঘটনা অত্যন্ত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মাসে একবার না হলেও দুই মাসে অত্যন্ত একবার আমার টনসিল ফুলবেই। /:) /:)

আমিও ওষুধ খেয়ে আবার ঝিমানো শুরু করলাম। যখন পরীক্ষা থাকে, তখন ঘুমের ঠেলায় জেগে থাকাই কঠিন। আর এখন যখন ঘুমানো ছাড়া কোনো কাজ নাই, তখন ঘুমের দেখাই নাই! জেগে ছিলাম নাকি ঘুমিয়ে ছিলাম, জানি না। ঘুম ভাঙল বন্ধুর ফোনে, আমার জ্বর শুনে সে অত্যন্ত উৎসাহের সহিত বলল, আমার অসুস্থতার খবরে সে হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে দুঃখিত, শঙ্কিত।:((:(( এমতাবস্থায় সে কালকেই আমাকে দেখতে আসতে চায়। আমি তো বুঝলাম, জ্বর দেখে আমি ভাল-মন্দ খাব, সে আমার খাবারে ভাগ বসাতে চায়X((। আমি বললাম, নারে দোস্ত, তোদের কতরকমের কাজ-কারবার থাকে, আর আমার একেবারে ভাইরাল ফিভার।B-) আমার জ্বর মাপতে গিয়া এখন আমার বোনেরও জ্বর। তুই আসলে তোরও হবে। আমিও তো তোর বন্ধু, আমার জন্য তোর জ্বর হইলে আমি তো নিজেরে কখনও মাফ করতে পারব না:-/। (বুঝতে পারছিলাম যে বাংলা সিনামার ডায়লগ হয়া যাচ্ছে:|, তাও চালায়া গেলাম) অনেক ভয়-টয় দেখায়া ব্যাটাকে নিরস্ত করলাম।

সন্ধ্যায় আবার বাসায় আসছে মেহমান। আরে বাপু, আসছিস যখন একটা জ্বরে আক্রান্ত অসহায় শিশুর জন্য কচুটা-ঘেচুটাও তো নিয়া আসবি!:| তা না, একেকজন ভয়ে আমার ঘরেই ঢুকে না।X( সব বিদায় হল পরে আম্মা আমার জন্য সুপ নিয়ে আসল। তখন আম্মা কেন যেন আমার গলাটা দেখতে চাইল, আর দেখেই মাথায় হাত!

প্রথমে আমাকে কতক্ষণ ধমকাল, কেন তাকে বলি নাই যে আমার গলার ইনফেকশান এত বেশি। মুখে তো কিছু বলি না, মনে মনে বললাম ইনফেকশান কম থাকলে আমি কি সাধে কিছু খাচ্ছি না? গলা দিয়ে কঠিন খাবার নামে না দেখেই না তরল খাদ্য খেয়ে জীবন ধারণ করছি। :|| তারপর আম্মা কিছুক্ষণ ধমকাল ডাক্তারনীকে। সে কী ডাক্তার যে আমার গলার এত বড় ইনফেকশান দেখেও চুপ করে আছে?ডাক্তারনী কারও ওপরে রাগ ঝারতে না পেরে আমাকেI কিছুক্ষণ ধমকাল।

আম্মা তখন তখনই আমাকে নিয়ে ছুটল ডাক্তারের বাসায়। গলা দেখে ডাক্তারেরও আক্কেল গুড়ুম!:| সে নাকি দীর্ঘদিন এত ভয়াবহ ইনফেকশান দেখে নাই/:) সে দেরি না করে একটা পেনিসিলিন ইনজেকশান এনে ঢুকায় দিল। বাপরে! ১০ সিসি ইনজেকশান, সে কি চাট্টিখানি কথা?

এই এতক্ষণে নিজেকে বেশ কেউকেটা কেউকেটা মনে হচ্ছিল। বাসায় এসে গম্ভীরভাবে ঘুরে ঘুরে করলাম। দেখি বেচারা ডাক্তার ভাত না খেয়েই ঘুমাচ্ছে। উউউহহহহহহ। টনসিল ফুলল আমার, ধমকও খাইলাম আমি, ইনজেকশানও আমাকেই দিল, আর রাগ করছেন উনি?:P
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৩:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভ্রমণ স্মৃতি - ছাংশা, হুনান প্রদেশ, চীন ২০১৮ সাল

লিখেছেন নাঈম আহমেদ, ২৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৪২


জায়গাটির নাম ইউয়েলু শান বা 岳麓山 বা Yuelu Mountain. দক্ষিণ-মধ্য চীনের হুনান প্রদেশের ছাংশা শহরে অবস্থিত। পাহারটি শহরের মাঝে বয়ে চলা শিয়াং নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত, ছবিতে আমার পেছনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সহেলিয়া তার নাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪১

সহেলিয়া তার নাম
ধাপারিয়া ছিল তার গ্রাম
আমার বাড়ির সামনে দিয়ে
আসতো যেতো প্রতিদিনই সে
জানালাটা খুলে আমি
তার দিকে চেয়ে তার
হেঁটে যাওয়া দেখতাম



মাথায় দুটি বেণি ছিল
দু পাশে দুটি লাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্যতার কলঙ্ক ইজরাইল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৮

ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম তোরাহ। এটি ৫ টি পুস্তকের সমন্বয়ে গঠিত। ইহুদি এবং সকল একেশ্বরবাদীরা বিশ্বাস করে তোরাহ হচ্ছে প্রফেট Moses ( মুসা নবী ) এর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক থেকে ভালোবাসার পথে: আমার এবং মীমের গল্প

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ৩০ শে মে, ২০২৪ রাত ২:৩৭

## প্রথম অধ্যায়: অনলাইন থেকে অফলাইনে

ফেসবুকের পাতায় একটি সাধারণ দিন। আমি তখন নিউইয়র্কের ব্যস্ত শহরে বসে থাকি, চারপাশে মানুষের কোলাহল আর কাজের চাপ। হঠাৎ করেই ফেসবুকে একটি পোস্টে কমেন্ট করতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মোছাব্বিরুল হক, ৩০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৫৮



শত মমতার গল্প গাঁথুনি পৃথিবীর ভাঁজে ভাঁজে
কিছু নয় তার মাতৃতুল্য মা তাঁর তুলনা নিজে।
কত প্রিয়জন বন্ধু-স্বজন প্রাণপ্রিয় সন্তান
হতে পারে পর এলে কভু ঝড়
ভুলে শত অবদান।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×